যখন মন ছুটে যায় বাংলাদেশে

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫৩ এএম, ১৫ মার্চ ২০২৩
পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা

তামান্না ফেরদৌস, (মাইঞ্জ-জার্মানি)

দূরপরবাসে হাজারো কাজের ভিড়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সময় মন ছুটে যায় দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে। বিশেষ করে যখন পরিবারে কোনো অনুষ্ঠান বা বিশেষ কোনো উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলা হয় তখন প্রতিটি মুহূর্তে মন ছুটে যেতে চায় সেখানে। কিন্তু প্রবাস, সেতো দূর বহুদূরের পরবাস।

মন চাইলেই এখান থেকে যখন তখন ছুটে যাওয়া যায় না বাংলাদেশে পরিবার পরিজন এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছে। আর তার সঙ্গে স্বামী-সন্তান আর সংসার, সাথে নিজের পড়াশোনা তো আছেই।

সম্প্রতি একটি পারিবারিক মিলনমেলায় মন ছুটে গেছে বারবার। শুক্রবার (১০ মার্চ) ভিন্ন রকমের কিন্তু ঐতিহাসিক এক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল আমাদের পরিবারে। মিলনমেলা বসেছিল আমার মায়ের মামাবাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার মশাউড়া গ্রামে। সেদিন সেখানে বসেছিল চার প্রজন্মের মিলনমেলা।

ger4

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

মিলনমেলা বসেছিল ফজর মোহাম্মদ বিশ্বাস ও সামসুন্নেসার ছেলে মেয়ে নাতি-নাতনি ও পুতি পুতনিদের নিয়ে। এ যেন এক বিশাল বটবৃক্ষ ও তার শাখা-প্রশাখা।

এই পরিবারের সবচেয়ে বড় নাতি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দানকারী শহীদ আ খ ম সাইফুল ইসলাম ঠান্ডু। মুক্তিযুদ্ধে তার অসীম বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ রাজশাহীর ভদ্রার মোড়ে নির্মিত হয়েছে ‌‌‌‌"স্মৃতি অম্লান" ভাস্কর্য।

উত্তরসুরীদের মহা মিলনমেলার উদ্দেশ্য ছিলো পারস্পরিক চেনা পরিচয় বৃদ্ধি করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক মজবুত করা, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। একটা ফান্ড গঠন করে পরিবারের কোনো সদস্যের লেখাপড়া, চিকিৎসা, বিবাহ ইত্যাদিতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সেখানে সহযোগিতা করাসহ বিভিন্ন গঠনমূলক কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে অনুষ্ঠানে।

ger4

ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন লেখিকার মা হাসিবা খাতুন

ফজর মুহাম্মদ বিশ্বাস ও সামসুন্নেসার কনিষ্ঠ কন্যা হাসিনা বানুর মেজ মেয়ে হাসিবা খাতুনের বড় মেয়ে আমি। বর্তমানে জার্মানির মাইঞ্জ শহরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি এবং জোহানেস গুটেনবার্গ ইউনিভার্সিটি অফ মাইঞ্জ এ পদার্থ বিজ্ঞানে গবেষণারত আছি।

প্রায় তিন শতাধিক আত্মীয় স্বজন অংশগ্রহণ করেছিল সেদিনের সে মিলনমেলায়। দেশের প্রায় সকলেই অংশগ্রহণ করেছিল সে অনুষ্ঠানে। কিন্তু আমরা যারা প্রবাসে তারা উপস্থিত হতে না পারলেও আমাদের মন পড়েছিল সেই মিলনমেলায়, চোখ ছিল মোবাইলের স্ক্রিনে অনুষ্ঠানের আপডেটের জন্য। কোনো কাজেই যেন মন বসাতে পারছিলাম না। মনের ভিতর এক অন্য রকম আবেগ কাজ করছিল সারাদিন।

ger4

সন্তানসহ লেখিকা

কষ্ট আরো বেড়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম যখন মিলনমেলার ভিডিও দেখে জার্মানিতে জন্ম নেওয়া আমার তিন বছরের মেয়ে বলে উঠে "মাম্মি আমার যেতে মঞ্চ (মন চায়)"। নিজের আবেগ আটকে রাখতে পারছিলাম না দুই চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো। মেয়েকে বুকে নিয়ে কল্পনায় চলে গিয়েছিলাম পারিবারিক সেই মহা মিলনমেলায়।

ইনশাআল্লাহ্ কোনো এক মিলনমেলায় আমিও আমার মেয়ে তাবিয়াহকে এবং মেয়ের বাবাকে নিয়ে সবার সাথে উপস্থিত থাকব। আমার জার্মান মেয়ে সেদিন মঞ্চে উঠে গাইবে, "আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই। আমি আমার আমিকে চিরদিন-এই বাংলায় খুঁজে পাই। আমি বাংলায় গান গাই...."

লেখক: তামান্না ফেরদৌস, সাবেক শিক্ষার্থী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষক, জোহানেস গুটেনবার্গ ইউনিভার্সিটি, মাইঞ্জ-জার্মানি।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]