রিয়াদে মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা

নিজ ভাষাচর্চা ও ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ রাষ্ট্রদূত-কূটনীতিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৫ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সৌদি আরবের রিয়াদে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দূতাবাসের অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক ও সৌদি অফিশিয়ালদের নিয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা নিজ ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ এবং নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা নিজ নিজ ভাষাচর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বজায় রাখার আহ্বানও জানান।

নিজ ভাষাচর্চা ও ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ রাষ্ট্রদূত-কূটনীতিকদের

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মোহাম্মদ আল জারকানি ও কূটনৈতিক কোরের ডিন জিবুতির রাষ্ট্রদূত দায়া আদদীন সাঈদ বামাখারামা বক্তব্য দেন।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টফি ফারনড, সৌদি আরবের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হানি মানসি এবং ওআইসির রাজনৈতিকবিষয়ক সহকারী মহাসচিব ইউসেফ আল দুবেহ বক্তব্য দেন।

রাষ্ট্রদূত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষা করার বিষয়ে বাঙালি জাতির অবদানের কথা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, দিবসটি পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে সংগ্রাম ও ভাষার অধিকার আদায়ের এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত। তিনি ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা বর্ণনা করে বলেন, দ্রুতই পৃথিবী থেকে বিভিন্ন ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে, একই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও।

জাবেদ পাটোয়ারী আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার মাতৃভাষা রক্ষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছে। তিনি মাতৃভাষা রক্ষায় দেশ-কাল ভেদে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মাতৃভাষায় শিক্ষার ওপর জোর দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর নিজ নিজ ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ এবং নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা নিজ নিজ ভাষাচর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বজায় রাখার আহ্বানও জানান। এছাড়া ভাষার বৈচিত্র্য যে কোনো দেশের জন্য গর্বের বিষয় বলে জানান বক্তারা। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনে অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন অতিথিরা।

নিজ ভাষাচর্চা ও ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ রাষ্ট্রদূত-কূটনীতিকদের

অনুষ্ঠানে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। এসময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি তথ্যচিত্র ও ১২টি ভাষায় একুশে ফেব্রুয়ারির গান পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে ১০ জন রাষ্ট্রদূতসহ ৪০ জন কূটনীতিক অংশ নেন।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে দিনের শুরুতে দূতাবাস চত্বরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এরপর রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া রিয়াদস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ও জাতির পিতার জীবনী ও তার জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করতে প্রবাসীরা ভূমিকা রাখবেন।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় অনুষ্ঠানে। এছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও ভাষা আন্দোলন’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. বেলাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- রিয়াদস্থ ব্যবসায়ী এম আর মাহবুব, প্রফেসর মো. নুরুন্নবী, শাহজাহান চঞ্চল ও মিশন উপপ্রধান আবুল হাসান মৃধা প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া করা হয়।

আইএইচআর/এমকেআর/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]