মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের মানবেতর জীবন, মৃত্যু ১

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি মালয়েশিয়া
প্রকাশিত: ০৮:৫০ এএম, ০২ মার্চ ২০২৪
ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন পাবনার মো. শফিকুল ইসলাম (৩৩)। ছবি- সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় কাজ না পেয়ে, ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন পাবনার প্রবাসী মো. শফিকুল ইসলাম (৩৩)। উন্নত জীবনের আশায় লাখ টাকা খরচ করে বছরের ৫ আগস্ট পেত্রা জেহরা বারহাদ নামে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে, ইউনিক নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কাজের ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন শফিকুল।

প্রায় পাঁচ মাস কাজ না পেয়ে ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় শফিকুলের। শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শফিকুল মারা যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, সে অসুস্থ ছিল, চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। প্রতিদিনের মতো রাতে ঘুমাতে গেলেও ঘুম থেকে আর ওঠেনি।

শফিকুলসহ এ কোম্পানিতে কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় আসেন ৭১ জন বাংলাদেশি। তাদের কেউ কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে, আবার কেউ জমি বিক্রি করে দালালদের অর্থ পরিশোধ করেছেন। দালালরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মালয়েশিয়ায় তাদের নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ দেওয়া হবে, যেখানে বেতন মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

মালয়েশিয়ায় আসার পরপরই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তাদের। প্রায় পাঁচ মাস কাজ না পেয়ে ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে এসব প্রবাসী। কষ্টের অভিযোগ তুলে ধরতে গেলেই শিকার হতে হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের। সেখানে অবস্থানরত বাকি বাংলাদেশিদের অবস্থাও ভালো নয়। ভয় আর আতঙ্কে সময় কাটে তাদের।

নিয়োগকর্তার লোকের দ্বারা নিয়মিতই নির্যাতনের শিকার হতে হয় এসব প্রবাসীদের। ৫ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় আসলেও এখনও মেলেনি পাসপোর্ট কিংবা কাজ।

কাজ না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনেও যান এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন। আশ্বাস মিললেও চূড়ান্ত কোনো সুরাহা করতে পারেনি হাইকমিশন।

আরও পড়ুন:

এ বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, পেত্রা জেহরা বারহাদ কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক, তাদের বিরুদ্ধে আমরা এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। ভবিষ্যতে এই কোম্পানি যেন নতুন কোনো কর্মী না আনতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে হাইকমিশন। এখনও কাজ না পাওয়া কর্মীদের সমস্যা সমাধানে হাইকমিশন কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের মানবেতর জীবন, মৃত্যু ১

পেত্রা জেহরা বারহাদ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির হোস্টেলে প্রবাসীদের কাটছে মানবেতর জীবন। ছবি- সংগৃহীত

নিহত শফিকুল ইসলামের মরদেহ কোম্পানির মাধ্যমে দেশে পাঠাতে কাজ করছে হাইকমিশন বলে মন্তব্য করেন লেবার কাউন্সিলর। একই সঙ্গে বৈধভাবে আসায় তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

পেত্রা জেহরা বারহাদ কোম্পানিতে কর্মরত ইফতেকার নামে এক বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সঠিক নয়, তাদের গায়ে হাত তোলা হয়নি, কোম্পানি থাকা খাওয়ারও সু-ব্যাবস্থা করেছে। ট্যাক্স জটিলতার কারণে পাঁচ মাস ধরে তাদের বসিয়ে রাখতে হয়েছে। তবে ৪/৫ মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে সবাই ভিসা পাবে বলেও জানান তিনি।

ইফতেখার জানান, মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর শফিকুল ইসলামকে সেপাং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

কলিং ভিসায় এসে কাজ না পাওয়া কর্মীদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়মিতই এমন অভিযোগ আসছে হাইকমিশনে।

এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা এমন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের কোনো ছাড় নেই। অভিযোগ রয়েছে এমন কোম্পানিকে পরবর্তীতে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিতে চিন্তা করবে হাইকমিশন।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]