স্লোভেনিয়া ও হাঙ্গেরি প্রবাসীদের না বলা কথা

রাকিব হাসান রাফি
রাকিব হাসান রাফি রাকিব হাসান রাফি , স্লোভেনিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯:২১ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাস নিঃসন্দেহে এ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্যোগ। কোনো যুদ্ধ নয়, অতি ক্ষুদ্র এক ধরনের আলোক আণুবীক্ষণিক বস্তুর কাছে গোটা পৃথিবী অসহায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ২০৫টি দেশে এ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারো মানুষ এ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছেন, ঝরে পড়ছে অসংখ্য প্রাণ।

মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতেও চলছে করোনার তাণ্ডব। এখন পর্যন্ত স্লোভেনিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৪৪ জন। এছাড়া এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৭ জন। আর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ১৯৭ জন। অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৮ জন। আর দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২১৩ জনের।

করোনাভাইরাসের মহামারি প্রাদুর্ভাব রোধ এ দু’টি দেশে গত মাস থেকেই চলছে জরুরি অবস্থা। শুধু নির্দিষ্ট কিছু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ছাড়া বন্ধ রয়েছে সবকিছু। খুব প্রয়োজন না হলে কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে দেশ দু’টির সরকার।

ফ্রান্স, ইতালি, পর্তুগাল, গ্রেট ব্রিটেন, স্পেন, গ্রিস, অস্ট্রিয়া ইউরোপের এ সব দেশের মতো বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস নেই স্লোভেনিয়া কিংবা হাঙ্গেরিতে। তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি দেশ দুইটিতে বসবাস করছেন। হাঙ্গেরিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। অন্তত দুই থেকে আড়াইশ’র মতো বাংলাদেশির বসবাস রয়েছে পূর্ব ইউরোপের এ দেশটিতে। হাঙ্গেরিতে বসবাসরত বেশিরভাগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বসবাস রাজধানী বুদাপেস্ট এবং দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ডাবরিচেনে।

অন্যদিকে স্লোভেনিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী এবং অন্যরা বিভিন্ন পেশাভিত্তিক কাজের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন দুইটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো স্লোভেনিয়া এবং হাঙ্গেরি এ দু’টি দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবনকে রুদ্ধশাস পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় এ দুইটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে। এ দুইটি দেশে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। তাই অস্ট্রিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এ দুই দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাষ্ট্রীয় সব প্রয়োজনে সহায়তা করে থাকে। তবে এ পরিস্থিতিতে এখনও এ দুই দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

তন্ময় ওবালডিন গমেজ একজন প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যিনি হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে অবস্থিত কোদোলানি ইয়ানোস ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে ব্যাচেলর সম্পন্ন করছেন বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ওপর। তিনি জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তাকে বাসায় অবস্থান করতে হচ্ছে। পার্টটাইম কাজ করে যে আয় হতো তা দিয়ে কোনোভাবে নিজের থাকা-খাওয়ার খরচের সংস্থান করা সম্ভব হত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তার কাজ নেই। নিজের কাছে যে সামান্য সঞ্চয়টুকু ছিল তাতে আর বেশিদিন চলবে না। এ পরিস্থিতিতে দেশ থেকেও খরচের টাকা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ওবালডিন গমেজ বলেন, হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশিরা ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, অস্ট্রিয়া, জার্মানির মতো সে অর্থে তেমন অবস্থাসম্পন্ন না হওয়ায় এবং হাঙ্গেরিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কোনো সংগঠিত কমিউনিটি না থাকায় কেউ কাউকে সহায়তা করতে পারছেন না।

মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবস্থাও সংকটাপন্ন। তৌসিফ রহমান একজন প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, যিনি ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানার অধীনে ইরাসমাস মুন্ডুস শিক্ষাবৃত্তির অধীনে মাস্টার্স সম্পন্ন করছেন।তিনি জানান, এ দুর্দিনে স্লোভেনিয়ায় বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউই নেই। হাঙ্গেরির মতো স্লোভেনিয়ায়ও প্রবাসীদের মাঝে কোনো কমিউনিটি না থাকায় এ সময় একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না।

তিনি বলেন, এখানে যারা প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন তাদের কেউই সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিকভাবে তেমন উঁচু অবস্থানে নেই। এজন্য স্লোভেনিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা একে অপরকে সহায়তা করতে পারছেন না।

তৌসিফ বলেন, তাই এ অবস্থায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং একই সঙ্গে অস্ট্রিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ স্লোভেনিয়া এবং হাঙ্গেরি ইউরোপের এ দুই দেশের বাংলাদেশিদের দুর্যোগকালীন সময়ে সহায়তা করার জন্য খুব শীঘ্রই পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

এমএফ/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]