দুর্যোগে সিঙ্গাপুর প্রবাসীরা: প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, ০১ মে ২০২০

সাইফ তমাল

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে প্রথমদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী কম থাকলেও ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে দেশটির সরকার বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে।

সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী অধিকাংশ ডরমেটরিতে থাকা প্রবাসী। এসব ডরমেটরি বড় ক্লাস্টার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চব্বিশটি ডরমেটরি আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সেগুলোতে অধিকাংশ বাংলাদেশিকর্মীর বসবাস বলে জানা গেছে।

অল্প সময়ে দ্রুত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ এসব ডরমেটরিতে এক রুমে অনেক অভিবাসী থাকে। এক রুমে অনেক লোকের বসবাস হওয়ায় এই ভাইরাসটি দ্রুত সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। সে কারণে বাংলাদেশিকর্মীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে কর্মীরা কাজ হারিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কবে নাগাদ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরিবারের চিন্তায় তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে।

ইতোমধ্যে দেশটির সরকার অভিবাসী কর্মীদের নানাভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে সময়মতো বেতন পরিশোধ, তিনবেলা খাবার ও চিকিৎসা সুবিধা।
বর্তমানে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কোনো রকম পদক্ষেপ চোখে পড়েনি অভিবাসী বাংলাদেশিদের। এই চরম দুর্যোগের দিনে অভিবাসীদের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ হাইকমিশন। কিন্ত এখন তাদের কোনোরকম ভূমিকা নেই।

এই চরম বিপদের দিনে বাংলাদেশ হাইকমিশন তাদের পাশে এসে কোনোরকম আশস্ত না করায় অভিবাসী বাংলাদেশিকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়ছে। অথচ এই দুর্যোগের দিনে অভিবাসীকর্মীদের পাশে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ হাইকমিশনের এগিয়ে আসা উচিৎ ছিল বলে মনে করেন প্রবাসীরা।

কর্মীদের অভিযোগ তারা কাজ হারিয়ে প্রত্যেকে যার যার বাসায় অবস্থান করছে। শুধুমাত্র বেসিক বেতন তাদের পরিশোধ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র বেসিক বেতনে তাদের দেশে পরিবারের কাছে টাকা পাঠানো কষ্টকর হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে তারা দাবি করেন তাদের এই বিপদের দিনে বাংলাদেশ সরকার প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে অভিবাসীদের পরিবারকে সহযোগিতা করলে তারা অনেক উপকৃত হবে।

অভিবাসী নুরুল আলম বলেন, ‘একদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ভয় অন্যদিকে চাকরি হারানোর ভয়ে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছি। আমাদের এই বিপদের দিনে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন কোনোরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেয়নি। কাজ হারিয়ে দিনদিন দিশেহারা হয়ে কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না’।

অভিবাসী সজীব আহমেদ বলেন, ‘আমরা কাজ হারিয়ে খুবই বিপদের মধ্যে আছি। কবে আবার কাজে যোগদান করতে পারব এখনো নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছি না’।

আরেকজন অভিবাসী রকিবুল ইসলাম রকি বলেন, ‘আমরা এখন চরম শঙ্কার মধ্যে আছি। এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার পর আমাদের চাকরি থাকবে কি-না আমরা কেউ জানি না। দেশে পরিবার নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি। কোম্পানি আমাদের বেসিক বেতন পরিষোধ করছে। কিন্তু ওভারটাইম না থাকলে বেসিক বেতন দিয়ে আমাদের দেশে পরিবারকে সহযোগিতা করা দুঃসাধ্য হয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত অভিবাসীদের জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে কোন আশার বাণী শুনতে পাইনি’।

দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো সচল রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বিগত দিনগুলোতে সরকারি হিসাবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে প্রথম চালিকাশক্তি হিসাবে গণ্য করা হয়।

এমতাবস্থায় সকল অভিবাসীকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। তাদের এই বিপদের দিনে প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনার মাধ্যমে অভিবাসীদের সহযোগিতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে।

এমআরএম/এমকেএইচ

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]