প্রবাসীদের সুরক্ষায় যা করছে সিঙ্গাপুর

ওমর ফারুকী শিপন
ওমর ফারুকী শিপন ওমর ফারুকী শিপন , সিঙ্গাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:০১ পিএম, ১৩ মে ২০২০

সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রায় ৯০ ভাগই বিভিন্ন দেশের প্রবাসী। দেশটিতে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অভিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনা মোকাবিলায় পরবাসীদের সুরক্ষায় ইতোমধ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এক, সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্ত:সংস্থা টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে৷ এই টাস্ক ফোর্স সিঙ্গাপুরে ডরমেটরিতে বসবাসকারী অভিবাসী কর্মীদের সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দিতে একটি বিস্তৃত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এছাড়া প্রবাসীদের দেখাশোনায় বিভিন্ন সরকারি এজেন্সি থেকে ২২০০ জন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সরকারি এজেন্সিগুলো হলো- জনশক্তি মন্ত্রণালয় (এমওএম), সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী, হোম দল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (এমওএইচ), বিল্ডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন অথরিটি এবং যোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয়।

দুই, গত তিন সপ্তাহ ধরে আন্ত:সংস্থা টাস্ক ফোর্স আবাসিক অপারেটর এবং বাসিন্দাদের সহায়তার জন্য ফরওয়ার্ড আশ্বাস এবং সাপোর্ট টিম মোতায়েন করেছে। ১৭০টিরও বেশি দ্রুত দল মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সমস্ত সাধারণ ডরমেটরিগুলিতে (পিডিবি) অবস্থিত ৪৩টি দল, এবং ফ্যাক্টরি কনভার্টড ডরমেটরিগুলি নির্মাণ অস্থায়ী কোয়ার্টারে (সিটিকিউ) এবং ব্যক্তিগত আবাসিক প্রাঙ্গণে কাভারেজ সরবরাহকারী ১২৭টি মোবাইল টিম রয়েছে।

তিন, টিমের সদস্যরা খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং স্বাস্থ্যবিধি রক্ষণাবেক্ষণসহ তাদের চিকিৎসা সেবা এবং রেমিট্যান্সের প্রয়োজনীয়তার সুবিধার্থে শ্রমিকদের দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তাদের কাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে। তারা ২৪ ঘণ্টা ডরমেটরিতে টহল দিয়ে থাকে।

চার, আন্ত:সংস্থা টাস্ক ফোর্স অভিবাসী কর্মীদের সাথে উৎসব উদযাপন এবং বড় ইভেন্টগুলি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছে৷ উদাহরণস্বরূপ, টাস্কফোর্স ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল তামিল ও বাংলা নববর্ষের সময় বিদেশিকর্মীদের মধ্যে উৎসবযুক্ত গুডিজ এবং ফাস্টফুড ট্রিট বিতরণের জন্য হিন্দু এন্ডোমেন্টস বোর্ডের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছিল। মুসলিম বিদেশি কর্মীদের সাথে রমজান মাসকে স্বাগত জানাতে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে৷

পাঁচ, আন্ত:সংস্থা টাস্ক ফোর্স ৪৩টি ডরমেটরিতে মেডিকেল সুবিধা প্রদান করেছে। যাতে অসুস্থ বা তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণগুলি প্রদর্শনকারী শ্রমিকরা যথাযথ এবং সময়োচিত চিকিৎসা পান। এছাড়াও, অভিবাসী কর্মীদের সহায়তার জন্য মাঠে মোতায়েন করা ৫০ টিরও বেশি মেডিকেল কর্মীদের সমন্বয়ে ১২ টি মোবাইল মেডিকেল টিম রয়েছে।

ছয়,আন্ত:সংস্থা টাস্ক ফোর্স শিগগিরই ডরমেটরিতে অবস্থানকারী কর্মীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন সেবা সরবরাহ করবে। যাতে তারা প্রয়োজন হলে ক্লিনিকে যেতে পারে৷ শ্রমিকদের নিকটস্থ মেডিকেল পোস্টে নেওয়ার জন্য জনশক্তি মন্ত্রণালয় দ্বারা চুক্তিবদ্ধ পরিবহন সরবরাহকারীদের একটি তালিকা ডরমেটরি অপারেটরদের দেওয়া হবে। এতে করোনায় সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।

সাত, আন্ত:সংস্থা টাস্ক ফোর্স সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ডরমেটরিগুলিতে কর্মীদের জন্য যত্ন নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ডরমেটরিগুলোতে অনসাইটে কমিউনিটি কেয়ার সুবিধা (সিসিএফ) স্থাপন করেছে৷

আট, করোনায় আক্রান্ত শ্রমিকরা সুস্থ হওয়ার পরে, যাতে পুনরায় কাজ শুরু করতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করছে আন্ত:সংস্থা টাস্ক ফোর্স সুস্থ হওয়া কিছু শ্রমিক তাদের ডরমেটরিতে ফিরে আসবে। তবে তাদের রাখা হবে নির্দিষ্ট ব্লকে। সুস্থ হওয়া শ্রমিকরা অবশ্যই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবে এবং অন্যান্য ব্লকের বাসিন্দাদের সাথে আন্তঃসংযোগ করা নিষিদ্ধ থাকবে৷ এই ব্যাপারে টাস্ক ফোর্স ডরমেটরি কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করবে।

নয়, তাদের প্রয়োজনের বাইরেও, জনশক্তি মন্ত্রণালয় অভিবাসী কর্মীদের যথাসময়ে বেতন প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য নিয়োগকারীদের সাথে কাজ করছে৷

যেসব কর্মীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই তাদের নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে জনশক্তি মন্ত্রণালয় নিয়োগদাতাদের সাথে কাজ করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সার্কিট ব্রেকার শুরুর আগে ৪৭২০০০ জন শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল আর এখন ৫২১০০০ জন শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে৷

দশ, বিদ্যমান ডরমেটরির পাশাপাশি আন্ত:সংস্থা টাস্ক ফোর্স শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত আবাসন সক্ষমতা তৈরি করছে। একটি স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা হিসাবে ভাসমান জাহাজে আবাসন, ক্রুজ জাহাজের পাশাপাশি স্পোর্টস হলগুলির মতো ব্যবস্থা রেখেছে৷

এগার, কম আক্রান্ত ডরমেটরিগুলোতে তারা ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তারজন্য সোয়াব টেস্ট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আনুমানিক দৈনিক ৮ হাজারের ও বেশি শ্রমিকদের সোয়াব টেস্ট করা হয়। এছাড়াও অভিবাসীদের আরও কার্যকর চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে চিকিৎসা পদ্ধতি দীর্ঘায়িত করবে৷

বার, বর্তমানে ৪৩টি ডরমেটরিতে খাবার দেওয়া হচ্ছে৷ দৈনিক ১০ মিলিয়নের উপরে মিল সরবরাহ করা হয়। রোজাদারদের জন্য স্পেশাল খাবার দেওয়া হয়। ডরমেটরিতে খাবার পৌঁছানোর ৩০ মিনিটের মধ্যে অভিবাসীদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। খাবারের মান উন্নতিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। এই ব্যাপারে ডরমেটরির অপারেটর ও খাবার সরবাহকারীদের সাথে কাজ করছে জনশক্তি মন্ত্রণালয়।

তের, ডরমেটরিতে অবস্থানকারী শ্রমিকরা অনলাইন সেবা গ্রহণ করতে পারবে। তারা অনলাইনে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী অর্ডার করতে পারবে৷

এরই মধ্যে প্রায় ৪১০,০০০ প্যাকেট নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে থার্মোমিটার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও অন্যান্য সামগ্রী। ফ্রি ওয়াই ফাই ও ২০০০০০ ডাটা সিম (৫০ জিবি) বিতরণ করা হয়েছে।

৩০০ এর উপরে তামিল ও হিন্দি মুভি চ্যানেল ফ্রি দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে৷ সিঙ্গাপুর সরকারের গৃহীত এমন সুন্দর পদক্ষেপে অভিবাসীদের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে। অভিবাসীরাদের কাছে সিঙ্গাপুর প্রধানমন্ত্রী Lee Hsien Loong একজন সুপার হিরো।

এমআরএম/এমকেএইচ

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]