মালয়েশিয়ায় অজানা আতংকে বাংলাদেশিরা
মালয়েশিয়ায় করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১৮ মার্চ থেকে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। চলছে দীর্ঘ লকডাউন। এরই মধ্যেই গত ৪ মে থেকে শর্ত সাপেক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেয় সরকার।
তবে একই সময় থেকে অভিযান শুরু করে বিদেশিদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে। যা করোনার এই দুর্যোগকালে কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। আকস্মিক এ অভিযানে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে দেশটিতে প্রায় ৮ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। যাদের বড় অংশই শ্রমিক। অনেকেই ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত। অরেকটি অংশ, যারা সেকেন্ডহোম ও বিজনেস ভিসা নিয়ে ব্যবসা করছেন।
দেশটিতে চলমান পরিস্থিতিতে চাকরি ও ব্যবসা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন এসব বাংলাদেশিরা। সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তে এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অনেক বাংলাদেশির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আর এ সময় গ্রেফতার হয়ে যারা কারাগারে আছেন, তারা দেশটির সরকারের কালো তালিকায় ঢুকে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
রাজধানী কুয়ালালামপুরের প্রাণকেন্দ্রে লইয়াট প্লাজা। ইলেক্ট্রনিক্স ও আইটিসামগ্রীর এ মার্কেট সারা মালয়েশিয়াতে সুপরিচিত। বুকিত বিন্তাং পর্যটক এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় লয়েট প্লাজায় বেচাকেনা চলে ভালো। প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে।
এ মার্কেটে প্রায় সাড়ে ৫শ ইলেক্ট্রনিক্স দোকান ও আইটি সামগ্রীর শো-রুমের মধ্যে বাংলাদেশি মালিকানাধীণ দোকান রয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি। দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা করে আসছেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি ছাড়াও অনেক ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানী ব্যবসায়ী রয়েছেন।
এ মার্কেটে বাংলাদেশি দোকানের মালিকরা সাধারণত কোম্পানির ডাইরেক্টর ভিসা ও সেকেন্ড হোম ভিসা নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে থাকেন।
সরেজমিন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি প্রায় দেড়শরও অধিক বাংলাদেশি চাকরি করছেন।
লয়েট প্লাজায় ঝিনাইদাহ জেলার কোটচাঁদপুর থানার লক্ষীকুন্ড গ্রামের ছেলে হাবিবুর রহমান খান সুমন। প্রায় ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেন গ্লোবাল আইটি জোন এসডি এন বিএইচডি নামের কোম্পানি।
ধীরে ধীরে মালয়েশিয়ার সকল কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দেশটির স্বনামধন্য কোম্পানি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এ কোম্পানির অধীনে পরিচালিত হচ্ছে (www.projector.my) অনলাইন। কোম্পানির রেপুটেশনের কারণে অনলাইন অফলাইন দুই মাধম্যেই গ্রাহকদের ব্যাপক জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্থতা অর্জন করেছে।
কোম্পানি চালু করার পর থেকে ক্রেতাদের কাছে বিশ্বস্ত। পাশাপাশি সব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড কর্তৃক স্বীকৃতিও লাভ করেছে। লোকাল মালয়, চাইনিজ ও ইন্ডিয়ানদের পাশাপাশি ২০ জন বাংলাদেশির কর্মস্থল।
তবে মার্কেটটিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভালো চোখে দেখছে না অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের ম্যানেজমেন্ট চলমান করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশি শ্রমিক ও মালিকদেরকে রীতিমত বিভিন্ন শর্তের জালে আটকে রেখেছে বলে জানালেন এ ব্যবসায়ী।
কর্মরত শ্রমিকরা বলছেন, আগে খুবই ভালো ব্যবসা করতেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে তারা অনেক সমস্যা মোকাবিলা করছেন। দীর্ঘদিন মার্কেট বন্ধ থাকলেও এখন নেই ক্রেতা। করোনাভাইরাসের কারণে লোক সমাগম কম বললেই চলে। মিলছে না বেতন। তা ছাড়া রয়েছে ইমিগ্রেশনের অভিযান। সব মিলিয়ে সবাই অজানা আতংকে ভুগছেন, কখন কী হয়।
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৩-এর ৩৯ (বি) অনুচ্ছেদ অনুসারে ৭ মে থেকে রাজধানী কুয়ালালামপুরে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন বিদেশি ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আর যারা ভিসার অবৈধ ব্যবহার করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের প্রধান দাতুক খায়রুল দাজায়মি দাউদ স্থানীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, কুয়ালালামপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিদেশি অভিবাসীরা ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে বসে পরিচালনা করছে, যা অভিবাসন আইনে অবৈধ। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলবে।
প্রবাসীদের অভিযোগ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিধি-নিষেধে সবচেয়ে সংকটে পড়েছেন অবৈধরা। কারণ বেশির ভাগ অবৈধ শ্রমিক বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মার্কেটে কাজ করতেন। এরই মধ্যে চলছে ধরপাকড়। গ্রেফতার আতঙ্কে ও আর্থিক দুরবস্থায় কর্মহীন দিন কাটছে তাদের।
এদিকে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭৮ ভাগ অভিবাস কর্মী করোনায় আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষণা দিয়েছে বৈধ-অবৈধ সব অভিবাসিকে বাধ্যতামূলক কভিড-১৯ পরীক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে অবৈধদের গ্রেফতারে চালানো হচ্ছে অভিযান।
মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা মার্সি মালয়েশিয়ার সভাপতি দাতুক ডা. আহমদ ফয়জাল পারদৌস সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, অনিবন্ধিত প্রবাসী শ্রমিকরা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা কম। এর কারণ এটি নয় যে তারা পরীক্ষা করতে চান না, তারা আটক হওয়ার ভয়ে রয়েছেন।
এমআরএম/এমকেএইচ