শরণার্থীদের সংযুক্ত করেছে ‘স্পিক’
করোনাভাইরাস মহামারিতে সামাজিক দূরত্বে থাকা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক, অভিবাসী ও শরণার্থীদের জন্য। সামাজিক দূরত্বের এই বাঁধাকে অতিক্রম করতে ‘স্পিক’ তাদের সকল কার্যক্রম দু’মাস পূর্বে অনলাইনে রূপান্তর করে। ভাষা এবং সংস্কৃতি আদান-প্রদানের এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাচ্ছে সকল স্তরের মানুষ।
গত দু’মাসে স্পিকের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ৬ হাজার মানুষ ভাষা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান করেছে যা এই সময়ে সামজিক দূরত্বের বাঁধা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই সময় বিশ্বের ২৫টি ভাষা একে অপরের সাথে আদান-প্রদান করা হয়েছে যার মধ্যে যেমন ছিল বহুল প্রচলিত ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষা তেমনি তুলনামূলক কম প্রচলিত মারাঠি ভাষাও।
শুধুমাত্র ঢাকাতে ১০টির বেশি ভাষা শিক্ষাকোর্স অনলাইনে পরিচালিত হয়েছে যেখানে একশোর বেশি শিক্ষার্থী বিনাখরচে সেগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে বিভিন্ন ভাষা শিখতে এবং অন্যের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে।
স্পিকের এই পদ্ধতির একটি কার্যকরি দিক ছিল, বিগত কয়েক মাসে এই ধারণার মাধ্যমে গ্রিস, ইতালি, পর্তুগাল, স্পেন, সিরিয়া, এবং যুক্তরাজ্যের প্রায় তিনশ শরণার্থী এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন ভাষা শেখার সুযোগ পায়।
মারিয়া এদোয়ারদো, একজন ডাক্তার এবং স্পিকের একজন শিক্ষার্থী সে তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। স্পিক আমার দৈনন্দিন জীবনের জন্য অনেক সহায়ক। বর্তমান সময়ে একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমার পক্ষে কখনোই একটি ভাষা শেখা সম্ভব হতো না, যদি না তা অনলাইন হয়। মহামারির এই সময়ে যদিও আমাকে প্রতিদিন হাসপাতালে যেতে হয় তথাপি আমি আমার অবসর সময়গুলো স্পিকের মাধ্যমে অতিবাহিত করি।
ভাষা শিক্ষার সেই অনলাইন গ্রুপগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মজার মজার মানুষের সাথে পরিচয় হওয়ার পাশাপাশি অনেক কিছু সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছি। এই বিশেষ সময়ে বিশ্বব্যাপী একটি সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে এই উদ্যোগ বিশেষ করে অন্য ভাষা এবং সংস্কৃতি জানা। আমি খুবই আনন্দিত এই উদ্যোগের সাথে সংযুক্ত হতে পেরে।
ইরাক থেকে আহমেদ নামের আরও এক শরণার্থী তার অভিজ্ঞতার কথা জানান, আমি এবং আমার পরিবার আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ এই ধরনের একটি সুযোগ তৈরি করার জন্য। অনলাইনের ক্লাসগুলো খুবই চমৎকার এবং আমরা অনেক কিছু শিখতে পারছি যা আমাদের কাছে মনে হয় আমরা আমাদের পরিবার পরিজনের কাছেই রয়েছি।
ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ জনপ্রিয় সামাজিক এই উদ্যোগ এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করে এই বছরের শুরুতে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপ, আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং আফ্রিকার একটি দেশসহ বিশ্বব্যাপী ১১টি দেশের ২৪টি শহরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই প্রথম ঢাকাতে এশিয়ার কোনো শহর হিসেবে কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে।
স্পিক মূলত কাজ করে ভাষা, সাংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য, মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিগত ধারণা ও অভিজ্ঞতা একে-অপরের সাথে আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় মানুষজনের সাথে অভিবাসী, সাময়িক কাজে আসা বিদেশি দক্ষ ও আধা দক্ষ কর্মী, বিশ্বের শিক্ষার্থী এবং শরণার্থীদের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হয় ভাষা এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে। এখান থেকে সহজে যেকোন মানুষ যে কোনো দেশের ভাষা শিখতে এবং অন্যদের শেখাতে পারে।
এমআরএম/এমকেএইচ