কানেকটিকাট প্রবাসীদের স্বল্পমূল্যে করসেবা দেবেন সিপিএ শ্রাবনী
যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বল্পমূল্যে করসেবাসহ সমাজকল্যাণমূলক কাজে সহযোগিতা প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্টেন্ট শ্রাবনী সিং। করোনার কারণে সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতরে সহায়তা প্রদানকারী বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন।
প্রতিকূলতা পেরিয়ে আবারও তিনি কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যকেই কর্মস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সেখানে জরুরি প্রয়োজনে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সাথে তিনি কাজ করবেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্কে বসবাস করছেন।
২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর তিনি বসবাসের উদ্দেশ্যে প্রথম কানেকটিকাটে এসেছিলেন। বাংলাদেশি সংগঠন থেকে সাহায্যের আশ্বাস পেলেও মনোপুত চাকরি না পাওয়ায় এবং কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির রোষানলে পড়ে তিনি প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। ফলে কয়েক মাস পরেই তিনি নিউ ইয়র্কে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
শ্রাবনী সিং নিউ ইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে খুব পরিচিত একজন সিপিএ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিদের সাথে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। করোনার কারণে তিনি তার অফিস বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং বাসা থেকে কাজ করছিলেন। তিনি ব্যবসায়িক কাজের পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতরে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি আর ব্যক্তিগতভাবে ট্যাক্স ফাইলিংয়ের কাজ আগের মতো করতে পারবেন না। তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন সিপিএ শ্রাবনী সিং।
শ্রাবনী সিং জানান, উন্নত জীবনদর্শন ও বিশ্বব্যাপী নাগরিকত্বের মানসিকতা নিয়ে ১৯৯৯ সালে বাবা মার সাথে যুক্তরাষ্ট্র আসেন তিনি। শৈশব থেকেই একজন ব্যবসায়ী হতে চেয়েছেন শ্রাবনী।
শ্রাবনীর বাবা চট্টগ্রামের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। আর্থিকখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আগ্রহের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস আর্লিংটন থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেয়ার পর নিউ ইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিটে ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করেন শ্রাবনী।
জেপি মরগ্যান, এইচএসবিসি মেরিল লিঞ্চ-এর মতো বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনে কাজ করার পর একটি উচ্চতর নির্বাহী কর্মকর্তার অবস্থানে থেকেও তিনি নিউ ইয়র্ক ইস্ট হারলেম বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও মাইক্রোফিনান্সিং স্ট্রাটেজিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন বাংলাদেশি ও মূলধারার ব্যবসায়ী তথা স্বল্প আয়ের পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতাও দেন তিনি।
ক্যাপিটাল ওয়ান ব্যাংক এবং ইস্ট হারলেম বিসনেস ক্যাপিটাল কর্পোরেশনসহ বহু সংগঠনের অ্যাওয়ার্ড ও রিকগনিশন পাবার পর ক্যারিয়ারকে আরো সমৃদ্ধ করতে শ্রাবনী উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। শ্রাবনী সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্টেন্ট এক্সামের সব পার্ট এক চান্সেই পাশ করে বিশ্বের অন্যতম দুইটি একাউন্টিং ফার্ম কেপিএমজি ও প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারে কাজ করে সিপিএ লাইসেন্স অর্জন করেন তিনি।
এই সময়ে তাকে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। আটলান্টায় স্নেহের পুত্র সন্তান যুবরাজ সিং (খ্রিস) জন্মগ্রহণ করার পর শ্রাবনী কাজ থেকে অবসর নিয়ে কানাডাতে যান। ২০১৮ সালে সন্তান লালন পালন নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে মতানৈক্য দেখা দিলে আবারও নিজের ক্যারিয়ার গঠন তথা সন্তানকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে বড় করার প্রয়াসে শ্রাবনী আমেরিকাতে আসেন।
তিনি কানাডার ক্যালগাড়ীতে অবস্থিত ইউএসএ কনস্যুলেট থেকে জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আমেরিকায় ফিরে আসেন। আমেরিকা ও কানাডার ডুয়েল সিটিজেন পুত্র সন্তানের চাইল্ড কাস্টডি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলার কঠিন মুহূর্তে নিউ ইয়র্কের বাসাভাড়াসহ অন্য অনেক ব্যয় কমাতে তিনি নিউ ইয়র্ক-এর কাছাকাছি কানেকটিকাটে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর তিনি প্রথম কানেকটিকাটে আসেন। এ সময় অনেক বাংলাদেশি সংগঠন ও কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে সাহায্যে আশ্বাস দিলেও মনোপুত চাকরি না পাওয়ায় এবং কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির রোষানলে পড়েছিলেন। তিনি প্রায় দিশেহারা হয়ে কয়েক মাস পরেই নিউ ইয়র্কে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একজনের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে আবারো তিনি কানেকটিকাটে ফিরে আসেন। তারপর আবারো অনেক রকম জটিলতার কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই একেবারেই শূন্য হাতে ফিরে যেতে হয় নিউ ইয়র্কে। প্রচন্ড প্রতিবন্ধকতার মাঝেও দৃঢ় সংকল্পে একক প্রচেষ্টায় নিজের ক্যারিয়ারকে গড়ে তোলেন শ্রাবনী।
২০১৯ সালে শ্রাবনী তার একক সিপিএ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নিউ ইয়র্ক এবং কানেকটিকাটের বিপুল সংখক মক্কেলকে একাউন্টিং, ট্যাক্স, ব্যবসা ও আর্থিক পরামর্শ দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। করোনাকালীন তার জ্যাকসন হাইটসের অফিস বন্ধ করে তিনি তার এলমহার্স্টের বাসা থেকে কাজ করেছেন।
এই সময়ে তার ফাইনান্সিয়াল পরামর্শের কারণে অনেক মানুষ আর্থিক ভাবে উপকৃত হয়েছেন। তাছাড়া তিনি মুদারিব ফাউন্ডেশন, হেল্পিং হ্যান্ড ফর চিটাগাং, বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডস সোসাইটি অফ কানেকটিকাটসহ (বাফস) অনেক অলাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সরকারিভাবে নিবন্ধন করে সেসব সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের করোনা আক্রান্ত কমিউনিটিতে সেবা দানের সুযোগ করে দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় করোনাকালীন নিয়মিত ফিনান্সিয়াল পরামর্শ দিয়ে তিনি কমিউনিটির অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তার নিয়মিত কলাম ট্যাক্স টকসহ অনেক প্রিন্ট মিডিয়ায় তার নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হইয়ে থাকে।
বিধাতার সুদৃষ্টিতে এরই মধ্যে তিন পেয়ে যান ইউনাইটেড স্টেটস অফিস অফ ডিসাস্টার অ্যাসিস্ট্যান্স-এ একটি ফিনান্সিয়াল স্পেশালিষ্টের পদ। হিলারি ক্লিনটনের উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রাবনী বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্য এখনো অনেক নারীকে কাঁচের সিলিংয়ের মতো অদৃশ্য বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এটি বৈষম্যের একটি সুক্ষ্ম।
তবে চরম ক্ষতিকারক দিক যেখানে একজন নারীর উপযুক্ততা এবং সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তার যাত্রা পথে কাঁটা বিছিয়ে তার নামে নানা রকম ঘটনা রটনা রটিয়ে তার ঊর্দ্ধগতি, অস্তিত্বকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলে।
শ্রাবনী বলেন, নিউ ইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রো কুওমো, এলিজাবেথ ওয়ারেনের মতো পলিটিশিয়ান কিংবা আইনস্টাইন এর মতো বিজ্ঞানী এ রকম অনেক মনীষীর ব্যক্তিগত জীবনেই থাকে বিচ্ছেদ আর ভালোবাসার অভিনব বিবরণ, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়গুলোকে ব্যক্তিগতভাবে সমাধান করে মানুষ তার কল্যাণকর ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিচয় গড়ে তুলতে পারেন।
শ্রাবনী আরও বলেন, আমার বর্তমান লক্ষ্য হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষা এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের উদ্যোগ প্রচার করা যাতে নারীদের তাদের সন্তান পরিবার এবং সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। প্রতিভাময়ী শ্রাবনী শাস্ত্রীয় সংগীতে ৭ বছরের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একজন সংস্কৃতিকর্মী ও আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে পরিচিত।
এমআরএম/এমকেএইচ