করোনা বদলে দিয়েছে প্রবাস জীবনের বাস্তবতা

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩৯ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২০

মীর তারেক, কুয়েত থেকে

কতদিন হয়ে গেল দেখা হয় না প্রাণকেন্দ্র কুয়েত সিটির মুরগাব। ছুটির দিনে পরিণত হতো বাঙালির মিলনমেলায়। মরুর বুকে কর্ম ব্যস্ততার মাঝেও প্রবাসী নেতাকর্মীসহ বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ও এলাকায় জমিয়ে আড্ডা দিতাম।

তবে চায়ের চেয়ে বেশি অবাক করে আড্ডার সঙ্গে ঝালমুড়ি ও গরম গরম রসগোল্লা। সত্যিই ওখানে গেলে ভালো লাগতো আমার। অবসর পেলেই ছুটে যেতাম ওই শহরে। বিশেষ করে সিটির মুরগাবে কমিউনিটির সভা, রাজনৈতিক দলের নানা কর্মসূচি সবকিছু মিলেমিশে থাকে হোটেলগুলিতে। যুবলীগের আয়োজনে প্রতিমাসে আমরা অংশগ্রহণ করতাম।

যেন সবাই সবার কথা ভুলে গেছি। মনের টান, আবেগ অনুভূতি এখন আর কারো ভেতরই নেই। সবার সঙ্গে চায়ের আড্ডায় মিলিত হওয়ার জন্য সে কি আকুতি ছটফটে, অস্থির, চঞ্চল মন আজ নেই বরং নির্বাক উত্তেজনাহীন বড়ই স্থবির।

কুয়েতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে গেছে। জনবহুল রাজধানীসহ অনেকটা থমকে গেছে। জনকোলাহল এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছিল। কেবল মৃত্যুশোক অশ্রু ভয় আর বাঁচার আর্তনাদ। মনে হয় ভুলে গেছি প্রিয় শহর ও নগরের চেনা সব পথ। কেমন আছে সকল নেতারা? বন্ধু বান্ধব প্রিয়জনেরা?

সত্যিই করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে প্রবাস জীবনের বাস্তবতা। শুরুতেই সামাজিক দূরত্বের মাপকাঠির মধ্যে দিয়েই প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে কাটিয়েছি, অদৃশ্য ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কাছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার পর এখনও কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় দীর্ঘ তিনমাস বাসা থেকে কোথাও যাওয়ার সাহস হয়নি।

কোনো একজন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর আসলেই মনে হয় নিজের কোনো আপনজন চলে গেছে! জীবন যে খুব ছোট, এই মহামারি আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেল। আমাদের উচিত প্রতিটা দিনকেই গুরুত্ব দেওয়া। যতদিন জীবন আছে, প্রতিটি দিনের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা উচিত সবার।

কুয়েত সরকারের নেওয়া লকডাউন কর্মসূচির কারণে খাদ্য সঙ্কটে পড়ে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। এমন অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করার জন্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে উপহার হিসেবে খাদ্য সামগ্রী নিজে হাতে পৌঁছে দিয়েছি। দুর্দিনে নিজের কথা চিন্তা না করেও মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য ছিল। এখন অনেক বাংলাদেশির চাকরি নেই, ফলে কর্মহীন সময় কাটাচ্ছেন এসব পরবাসীরা।
করোনা সংকটকে জীবন সংগ্রামের একটি অংশ হিসেবে ধরে নিয়ে এই কঠিন অধ্যায়কে অতিক্রম করে, নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। বিধাতার কাছে প্রার্থনা যেন সমগ্র বিশ্বকে এই মহামারি থেকে পরিত্রাণ দান করেন। বিশ্ববাসী যেন আবার ফিরে পায় পরিপূর্ণ জীবনযাত্রা।

এমআরএম/এমকেএইচ

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]