স্লোভেনিয়ায় করোনার ৬ মাস
স্লোভেনিয়ায় করোনা মহামারির ৬ মাস পূরণ হলো আজ। এদিনে দেশটিতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি মরোক্কো ভ্রমণে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে ইতালি হয়ে পুনরায় রাজধানী লুলিয়ানাতে ফিরে আসেন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে মধ্য ইউরোপের এ দেশটিতে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত বাড়তে থাকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্লোভেনিয়া সরকার ১৯ মার্চ সমগ্র দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা আরোপের ঘোষণা দেয়। ইউরোপের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ সকল দেশ যেখানে করোনার ভয়াবহ ছোবলে একের পর এক মৃত্যুর মিছিল দেখেছে, সেখানে স্লোভেনিয়া ছিল করোনা মোকাবিলায় অত্যন্ত সফল।
সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং একই সঙ্গে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যকার সচেতনতা ও বিকেন্দ্রিকরণ শাসন ব্যবস্থার কারণে স্লোভেনিয়া গোটা বিশ্বে করোনা মোকাবিলায় নিজেদেরকে এক রোল মডেল হিসেবে অধিষ্ঠিত করে।
গত ১৫ মে ইউরোপের সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে স্লোভেনিয়া নিজেদেরকে করোনা মহামারিমুক্ত ঘোষণা করে। একটা সময় দেশটিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে নতুন করে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেকটা শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। তবে গত জুনের শেষের দিক থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীতে চলে যেতে শুরু করে।
দেশটিতে নতুন করে আবার আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে, মূলত লকডাউন পরবর্তী প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত সংযোগ পুনরায় চালু করার পর বলকান রাষ্ট্র বিশেষত সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া এ সকল দেশের থেকে মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধির কারণে স্লোভেনিয়াতে পুনরায় করোনাভাইরাসে আক্ৰান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম।
একই সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের জন্য অনেকে দেশটির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে জড়ো হচ্ছেন। এছাড়াও দেশটির জনসাধারণের একটা বড় অংশ গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের জন্য প্রতিবেশী দেশ ক্রোয়েশিয়ার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে যাতায়াত করেন। অবকাশ শেষে যখন তারা স্লোভেনিয়াতে ফিরে আসছেন তখন তাদের অনেকের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হচ্ছে।
এজন্য স্লোভেনিয়ার সরকার নিয়ম করেছে কোনও ব্যক্তি যদি এ মুহূর্তে ক্রোয়েশিয়া থেকে স্লোভেনিয়াতে প্রবেশ করেন তাহলে বাধ্যতামূলকভাবে তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন পালন করতে হবে। এছাড়াও লকডাউন শিথিল পরবর্তী দেশটির মানুষের মাঝে আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে খুব বেশি সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪০০ এর কিছু বেশি। অথচ সেকেন্ড ওয়েভ শুরু না হতেই দেশটিতে এ সংখ্যা পৌঁছেছে তিন হাজারের ঘরে। সেকেন্ড ওয়েভে সংক্রমণের হার প্রথম ওয়েভের তুলনায় বেশি মনে করা হচ্ছে।
গতকাল ৪ আগস্ট পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩০৭৯ জন। এছাড়াও প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রভাবে এখন পর্যন্ত মধ্য ইউরোপের এ দেশটিতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩ জন এবং চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাঘরে ফিরেছেন ২,৪৪০ জন।
পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো স্লোভেনিয়াও নিজস্ব ফর্মুলায় ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে স্লোভেনিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যামেস্ট্রি কর্তৃক উদ্ভাবিত এ ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করেছে এবং ইঁদুরের শরীরে এ ভ্যাকসিনের প্রভাবে কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধ করতে পারে এ রকম কার্যকরী অ্যান্টিবডির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। শিগগিরই স্লোভেনিয়ার উদ্ভাবিত এ ভ্যাকসিনটি মানুষের শরীরে পরীক্ষার জন্য উন্মুক্ত করা হবে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এমআরএম/জেআইএম