স্বাধীনতা মানে বঙ্গবন্ধুর মুখের বাণী

রহমান মৃধা
রহমান মৃধা রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২২

বাংলাদেশের ৫১তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। যার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল বাংলাদেশ নামক এক ভূখণ্ডের, তার কথা বলছি। স্বাধীনতা তুমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মুখের বাণী, যে মূল্যবান বাণী মূলত ৭ মার্চ ও আরও একটি দলিল যা আমার হৃদয়ে লিপিবদ্ধ হয়ে রয়েছে।

‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাহাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত ও চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’ শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।

বিজ্ঞাপন

দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা সেই থেকে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে চলেছি। আমার জীবনে বাংলাদেশে থাকাকালীন দিনটি উদযাপন করেছি ১৯৭১-১৯৮৫ সাল অবদি। দিনটি উদযাপন করেছি শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। পরে কুচকাওয়াজ ও নানা ধরনের বিনোদনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে দিনটির। সকাল থেকে সন্ধ্যাজুড়ে যে বিনোদগুলো বেশি আনন্দ দিয়েছে তা হলো নানা ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে যে জিনিসগুলো বেশি প্রাধান্য পেয়েছে তার মধ্যে ছিল কবিতা আবৃত্তি, নানা ধরনের গান, অভিনয় ও পুরস্কার বিতরণী। ১৯৮৫ সালের পর থেকে বাকি স্বাধীনতা দিনগুলো দেশের বাইরে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দেশে উদযাপন করা হয়েছে নানাভাবে, কখনও বড় আকারে কখনও ঘরোয়া পরিবেশে। ভেবেছিলাম অনেক প্রাপ্তি নিয়ে এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। গত বছর করোনা মহামারির কারণে দিবসটি মনঃপূতভাবে উদযাপিত হয়নি। বর্তমানে মহামারি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে এবার স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের সারিতে উত্তরণের পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রাপ্তি নিয়েই এবার জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করে।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে ভোরেই তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

এদিনে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঢাকা শহরসহ সারা দেশের সকল দৃশ্যমান ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হয়। সারাদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীসহ শিক্ষার্থীদের বাদক দল বাদ্য বাজানো হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে সারা বিশ্বের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীরা বাণী পাঠান দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার হয়েছে। সবই হয়েছে তবে দুটো জিনিস আমাকে অবাক করেছে যা তুলে ধরার জন্য মূলত আমার এ লেখা। কারণ স্বাধীনতা যদি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন না হয় তবে দরকার হলে আমি আবারও যুদ্ধ করবো। আমরা যখন যুদ্ধ করেছি এক সনে তখন কে তুমি তা কে জানতো? তখন ছিল না ভয়, ছিল না লাজ মনে।

জীবন বয়ে গেছে অশান্তে। বঙ্গবন্ধু, তুমি ডাক দিয়েছো, আমরা ছুটে এসেছি হাসি মুখে, কত না বন-বনান্ত হতে। শহীদের রক্তে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা অথচ তাকে বাদ দিয়ে আমলাকে সালাম স্বাধীনতার সকালে এ কেমন অবিচার! স্বাধীনতা তুমি তো সংগ্রামী মুক্তি বাহিনী তবে কেন স্বৈরাচার ও আমলাতন্ত্রের ষড়যন্ত্র ভাঙো না কেন? কোন গান গাওয়া হবে, কোন কবিতা আবৃত্তি করা হবে বা কোন কথা বলা হবে এ কথাও কি বলে দিতে হবে?

বিজ্ঞাপন

সবই যদি এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তবে নতুন প্রজন্ম কি কখনও চেতনা পাবে নিজের মতো করে ভাবতে? এখনও কি একজন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে নেই যাকে কুচকাওয়াজের ময়দানে লাল সবুজের পতাকার তলে দাঁড়িয়ে সেই সালামটি দেওয়ার? বেঁচে যদি থাকে তাহলে একেবারে নীরব না থেকে সত্য কথাটি তুলে ধর না কেন? স্বাধীনতা তোমাকে আবার নতুন করে স্বাধীন হতে হবে। স্বাধীনতা তোমাকে ভুলে গেলে চলবে না যে তোমাকে পেতে সবুজের বুক হয়েছে লাল যার ফলস্বরূপ পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা। এই স্বাধীন পতাকায় জড়িয়ে রয়েছে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নময় বিশ্বাস।

আমি বলেছি স্বাধীনতা মানে বঙ্গবন্ধুর মুখের বাণী তাই মনে করিয়ে দিতে চাই এবারের সংগ্রাম হোক অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম হোক আমলাতন্ত্রের ষড়যন্ত্রকে ভেংঙে দেবার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম হোক আগামীদিনের স্বাধীনতা উপভোগ করার সংগ্রাম।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।rahman.mridha@gmail.com

বিজ্ঞাপন

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com