অবিশ্বাস্য মেসি, অকল্পনীয় এমবাপে!

মুতাসিমুল ইসলাম
বিশ্বকাপ জেতায় মেসির ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান ঘাঁটছিলাম। এমন কিছু নেই যে মেসির ভান্ডারে নেই। কিন্তু আরও অবিশ্বাস্য হচ্ছে এক বিশ্বকাপ ছাড়া পর্তুগালের রোনালদোর অর্জন প্রায় সব কিছুতেই মেসির চেয়ে বেশি।
রোনালদোকে অনেকেই মাঠের কার্যকারিতায় মেসির চেয়ে সেরা বলে মনে করেন। সেই যে ২০ বছর আগে পর্তুগালের লুই ফিগোর দলে অল্পবয়েসী এক তরুণ খেলতে নামলো, তখন থেকেই তো সে বিশ্বসেরার লড়াইয়ে! ক্লাব ফুটবপে রোনালদো খেলেছেন ইংলিশ লীগ, স্পেনিশ লীগ, ইটালিয়ান সিরি এ। মেসি ইংলিশ লীগের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লীগ খেলেননি।
রোনালদো কি প্রজন্মের এক দুর্ভাগা নন? যার সঙ্গে আলভারেজ, ডি মারিয়া, মার্টিনেজের মত সহখেলোয়াড় ছিল না তাই বিশ্বকাপ জেতেননি?
এমবাপে কি অসাধারণ, গতিময়, কার্যকরী আর বড় ম্যাচের খেলোয়াড় সেটা ১৯ বছর বয়সে অভিষেকেই বিশ্বকাপ জিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এবার তো নিজেকে আরো প্রমাণ করেছেন। আগামী এক যুগে এমবাপে মেসি, রোনানদোর মতো পাহাড় চূড়ায় উঠবেন, সেটা না হলে হবে নিরেট দুর্ভাগ্য।
প্রতিপক্ষের জন্য সাক্ষাৎ ত্রাস, নিজ দলের জন্য জেগে ওঠার টনিক, এমবাপ্পের মতো কার্যকরী স্ট্রাইকার ইতিহাসেই বিরল! ব্রাজিলের নেইমার অসাধারণ ক্ষণজন্মা এক ফুটবলার। বিশ্বকাপ জিততে ভাগ্যও লাগে। নেইমার আর রোনালদো সেই সৌভাগ্য হয়নি, তাতে তাদের গ্রেটনেস কি অনেক কমে যায়? নেইমার, রোনালদোর চোখের জল কি আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়নি?
ছোটবেলা থেকেই পেলে, ম্যারাডোনার কথা শুনে বড় হয়েছি। তারা ফুটবল ইতিহাসে সেরা প্লেয়ার অবশ্যই, তবে আমার বিচারে সর্বকালের সেরা প্লেয়ার জুটি লিওনেল মেসি আর রোনালদো। পেলে, ম্যারাডোনার যুগে ফুটবল এত গতিময়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না। এত দর্শক ফুটবল দেখতো না। ভিডিও এনালাইসিস, ল্যাটটপ গ্রোগ্রামিং এ ম্যাচের ট্যাক্টিক্যাল বিশ্লেষণ হতো না।
ছিল না এত মিডিয়া, এত পাপারাজ্জি। লীগ,কাপ, নানা টুর্নামেন্ট, জাতীয় দলে খেলার এত শিডিউল, এত চাপও ছিল না। এত দীর্ঘ সময় শারীরিকভাবে ফিট থেকে ধারাবাহিকভানে তারা খেলেনওনি। এত এত কিছু মিলে, এত চাপ মাথায় নিয়ে আজকের মেসি, রোনালদো, এমবাপ্পে, নেইমাররা যুগের পর যুগ যে খেলা আমাদের দেখিয়ে যাচ্ছেন তার তুলনা ইতিহাসে আমি দেখি না। আমরা ভাগ্যবান যে এই ফুটবলারদের যুগে আমরা জন্মেছি, তাদের খেলা দেখছি।
মেসি, রোনালদো, এমবাপ্পে, নেইমার এই চারজনকে একই সময়ে খেলতে দেখা অসাধারণ ভাগ্যবান দর্শকদের আমরা কজন। নিঃসন্দেহে অনেক কাল এমন ঘটনা আর ঘটবে না। চার দেশের এই ক্ষণজন্মা ফুটবলারদের লাল সেলাম। এইজন্যেই ফুটবল বিশ্বের সেরা স্পোর্টস! এজন্যেই ফুটবল এত আনন্দময়ী!!
মুতাসিমুল ইসলাম
কাউন্সেলর (শ্রম) বাংলাদেশ দূতাবাস স্পেন।
এমআরএম/জিকেএস