আস্থা-অনাস্থা

ছেলেমেয়েদের সব কথা শুনতে হবে নাকি!

শায়লা জাবীন
শায়লা জাবীন শায়লা জাবীন
প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

গেলো বার প্যারেন্ট মিটিংয়ে ছেলের একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় স্কুলের শিক্ষকও বলেছেন সন্তানের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত বাবা-মা একসঙ্গে নেবেন, দরকার হলে আমাদের জানাবেন, আমরাও একই রকমের বলবো কিন্তু কখনোই দুজনে দুরকম বলবেন না, এতে বাচ্চারা ফাঁকফোকর খুঁজে পায় এবং ধীরে ধীরে মা-বাবাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে।

জ্বি, স্কুল শিক্ষক ঠিকই বলেছেন, একই প্রসঙ্গে আপনি একটা বলছেন, আপনার স্বামী আর একটা বলছেন এতে করে বাচ্চাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে, বুঝতে পারে বাবা-মা এর মাঝে মিল নেই, যেটা বাচ্চাদের মনে স্বস্তি দেয় না আর কেউ যদি এই সময়ে বেঠিক বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে তাহলে সেটা আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে।

এই বয়সের বাচ্চারা একটু বেশি স্বার্থপর হয় এবং ভয়ঙ্কর রকমের বন্ধুবান্ধব প্রীতি থাকে, এদের সব চাহিদা পূরণ করাও কঠিন আসলে।

জ্বি, কিন্ত হিসাম এগুলোর কিছুই বুঝতে চায় না... সে আমি যা বলবো তার উল্টা করবে এবং তার কাজের কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা নেই।

আচ্ছা, বুঝলাম। আপনি আর কিছু বলবেন নাকি উনাকে ডাকবো?

ডাকেন, আমি বাইরে গিয়ে বসি...
তানাজ রহমান মুখ ভার করে উঠে চলে গেলেন।

হিসাম মাহমুদ এসে বসলেন, মুখ গম্ভীর...

বলুন আপনি কি বলতে চান?

জ্বি, আমি কিছুই বলতে চাই না, কিন্তু আমি বাচ্চাদের শিক্ষক দিতে ইচ্ছুক না, প্রাইভেট স্কুলে দিতেও ইচ্ছুক না, ওরা সরকারি স্কুলে যাবে, কোনো কোচিংও দেবো না।

আচ্ছা, ঠিক আছে, কিন্তু আপনি ধর্মীয় শিক্ষা বা আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে সাঁতার, কারাতে এগুলোও শিখতে দিতে চান না কেন?

এগুলো বড় হয়ে প্রয়োজন মনে হলে শিখবে, এখনই কেন শিখতে হবে? ছেলেমেয়েরা কিছু বললেই সব কথা শুনতে হবে নাকি, আমরা কি ছেলেবেলায় সবচেয়ে পেয়েছি?

মানুষ হই নাই? তানাজ এগুলো বুঝতে চায় না, বাচ্চারা যা বলে তাই করতে চায়, তার দিনদুনিয়া একদিকে বাচ্চা আর এক দিকে।

পারিজাত রহমান স্থির চোখে তাকিয়ে আছেন হিসাম মাহমুদের দিকে, মুখে বললেন সেটা নির্ভর করে ছেলেমেয়ে কি চাইছে তার ওপর, তাদের চাওয়া সময়ের সাথে যৌত্তিক হলে এবং সামর্থ থাকলে অবশ্যই দেওয়া যায়, অযৌত্তিক হলে ভিন্ন কথা,
আচ্ছা ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে আপনার সমস্যা কি?

সমস্যা নেই, কিন্তু জোরাজুরি নেই কোনো, ইচ্ছে হলে শিখলো, না হলে পরে শিখবে। এখনই নামাজ, কোরআন হাদিস সব শিখতে হবে কেন? সারাজীবন পড়ে আছে, আস্তে ধীরে শিখবে।

ওহ আচ্ছা, আপনি অ আ, ক খ, A B C বা সংখ্যা গণনা ছোটবেলায় শিখেছেন না? ওগুলো আগে না শিখলে কি বড় ক্লাসে উঠে বানান করে বই পড়তে পারতেন? বা অংক করতে পারতেন?

ওগুলো তো প্রয়োজন, শিখতেই হবে।

কোনটা প্রয়োজন না? ধর্মশিক্ষা, আত্মরক্ষা এগুলো আপনার কাছে হয়তো প্রয়োজন না কিন্তু অন্য অনেকের কাছে বেশি প্রয়োজন। আপনার হয়তো মনে হচ্ছে স্মার্টফোন, ইলেকট্রিক ডিভাইস প্রয়োজন কিন্তু বাচ্চাদের যা শেখাতে চান তা ছোটবেলাতেই শেখাতে হয়, নয়তো বড় হয়ে শেখাটা আরও কঠিন হয়।

আপনি আবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, আচ্ছা আপনি সাঁতার জানেন?

জী, জানি...

কবে কোথায় শিখেছেন?

ছোটবেলায়, বাসার সামনের পুকুরে, গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেলে বিলে... এখানে তো ওসব সুবিধা নেই, সুইমিং পুলে নিতে হবে, আনতে হবে। ছুটির দিনে কই একটু বিশ্রাম নেবো, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবো, তা না... আধাবেলা বাচ্চাদের নিয়ে দৌঁড়াতে হবে, বাজার থাকে এসব ভালো লাগে না। আমি আমার বাচ্চাদের এগুলো শেখাতে চাই না।

আপনি কারাতে জানেন?

না

এক সপ্তাহ পরীক্ষামূলক ক্লাস করে দেখতে পারেন, দেখবেন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলো আপনার চেয়ে আগে শিখে ফেলছে, যেটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। আপনি যখন সাঁতার শিখেছেন তখন যত সহজে শিখেছেন, এখন যদি শিখতে যান, ওতো সহজ শিখতে পারবেন না।

তবে আপনি আপনার বাচ্চাকে কি শেখাবেন আর কি শেখাবেন না এটা সম্পূর্ণ আপনাদের সিদ্ধান্ত, আপনার একক সিদ্ধান্ত না, তাই আগে আপনার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে দুজনের ঠিক এক রকমের ব্যাখ্যা দিয়ে বাচ্চাদের বুঝিয়ে বলবেন আপনারা কোনটা শেখাতে চান এবং কোনটা চান না।

দুজনে দুরকমের বললে সমস্যা... এটা বাচ্চাদের মনে ভিন্ন বার্তা দেয় মা বাবা সম্পর্কে।

জ্বি, কিন্তু তানাজের সঙ্গে তো মত মেলে না...

না মিললে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে, ঠিকমতো বোঝাতে পারলে উনি বুঝবেন আর ইস্যু যেহেতু বাচ্চা এবং দুজনেই নিশ্চয়ই বাচ্চাদের ভালোই চান, তাই না?

শুধু দুজনের চিন্তাভাবনার ধরণ ও বিষয়বস্তু আলাদা, কারণ আপনারা দুজনে দুটো ভিন্ন পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। বাচ্চাদের স্বার্থেই আপনাদের সমঝোতায় আসতে হবে এবং একসঙ্গে এগোতে হবে নতুবা আপনাদের বাচ্চারা তাদের পথ নিজেরাই খুঁজে নেবে, আপনারা থাকবেন নিজেদের দ্বন্দ্ব নিয়ে।

জ্বি, আজকে তাহলে উঠি...
ইজ্ব আসুন, ৪ সপ্তাহ পরে আবার একদিন আসবেন, কেমন যাচ্ছে জানাতে, সেদিন দুজনের সঙ্গে একসাথে কথা বলবো, আজকের মতো আলাদা না।

জ্বি, ধন্যবাদ আপনাকে।

এমআরএম/জিকেএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]