‘ব্যারাম’
এই বয়সে ভাবের জগতে ডুব দিয়ে কী হবে!

আমার ঝিম ধরা রোগ (আদৌ কি এটা কোন রোগ!) আছে। মাঝে মধ্যে ডুব দেই সবকিছু থেকে...
দৈনন্দিন সব কাজই করি, কিন্তু চুপচাপ। সবকিছুতেই আছি, আবার কিছুতেই নেই, কথা বন্ধ বা খুবই কম।
এটা মোটেও নতুন ব্যারাম না, অনেক দিনের পুরোনো ব্যারাম। কাছে পিঠের সবাই জানে আমার এই ব্যারামের কথা কথা, তাই তারা আর এখন তেমন ঘাটায় না। অনেক ধন্যবাদ তাদেরকে আমাকে আমার মতো থাকতে দেয় বলে।
বড়জোর হয়তো বলে আবার গর্তে ঢুকছো?
আমি বলি, গর্তেই তো কাটবে সারাজীবন,কয়দিন আর মর্তে?
কেউ আবার বলে এইবার কয়দিনের জন্য?
আমি বলি, দেখি কবে চিল্লা শেষ হয়।
ছোট্টবেলার বন্ধু হলে বলে,গর্ত থেকে বাহির হইলে আওয়াজ দিও, খালি খালি ঝাড়ের বাঁশ কাঁধে নিতে চাই না।
আমি বলি, আচ্ছা
স্কুল ফ্রেন্ড হলে বলবে, ভালো তো...
আমিও যদি এমন ডুব দিতে পারতাম সবকিছু থেকে
আমি বলি, কে মানা করছে?
বেশী কাছের কেউ বলে, শুরু হলো আবার , এখন তো আমাকেও চিনবা না, কোন কথাও বলবা না, আজব!
আমি বলি, হু...
আমার ছেলেরা আমার চেয়েও শান্ত মুডে চলে যায়, ঘূর্ণিঝড়, সুনামির আভাস তারাই সবার আগে পায় , তাই তারা নিরাপদ দূরত্বে ঝড় দুর্বল হওয়ার দোয়া দুরুদ পড়তে থাকে
আমি হাসি, কিছু বলি না
একটু দূরের কেউ হলে বলে সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন ট্রাক এর পিছনে যা লেখা থাকে সেটা (১০০ হাত দূরে...)
আমি বলি, তথাস্তু
বেশী দূরের কেউ হলে বলে, এতো ভাব উনার , এতো অহংকার, বাপরে...., কথাই বলে না!
আমি কোন উত্তর দেই না।
যদিও আমার মনে হয় আমি যথেষ্ট কথা বলি, ঐ ঝিম ধরে থাকা সময়কাল ছাড়া তবুও যার মনে যা...
তা যার খুশি বলুক গে
তখন আমি অন্য ভুবনে, কে কি বলছে কিছুই কানে ঢোকে না। দিনকাল কাটে অনেকটা শীতনিদ্রায় যাওয়ার মতো, দিন দুনিয়ার যা কিছু হোক, আমি কোথাও নেই, আমি আছি আমার মধ্যে, অন্য কোন কিছুতেই না। ঐ সময়ে এই আমার মধ্যে আমাকে রাখার বিষয়টা আমি প্রতি মুহূর্ত বেশ উপভোগ করি, ঐ সময়কাল আমাকে আরো শক্তিশালী করে, দুঃখ বা কষ্টবোধ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে, সুখের কিনারা ও শান্তির উৎস নির্ধারণ করতে সাহায্য করে ।
শুধু তাই নয় আমি আমার জীবনের যাবতীয় সঠিক সিদ্ধান্ত এই ঝিম ধরা সময়ে নিয়েছি, আমার অনেক পছন্দের কিছু লেখা আমি সেই সময়েই লিখেছি এবং নিজেকে মূল্যায়ন করতেও শিখেছি। নিজেকে নিজের মূল্যায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমি কোথায়, কি করছি, কেমন আছি, কি ভালো লাগছে, কি লাগছে না কেন মন খারাপ হলো, আমার কি কোন ভূমিকা ছিলো নাকি পুরোটাই আরোপিত!
সমাজের গতানুগতিক পুতুল আমি কখনোই ছিলাম না, এখনো না... এর জন্য আমাকে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, এখনো পোহাতে হয় কিন্তু বিচলিত হইনি কখনো। ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার কাছে সুখের চেয়েও শান্তি বেশী জরুরী, চিনির চেয়ে যেমন লবন বেশী জরুরী। চিনি ছাড়া চা-কফি দৈ খাওয়া যায়, লবন ছাড়া কোন তরকারি! জিহ্বাতেই ঠেকালেই বিপত্তি,গলা দিয়ে নামা তো দূরের কথা।
এই যে এত কথা বললাম, কেন জানেন?
বললাম কারণ সারাক্ষণ দিন দুনিয়ার পিছে না দৌড়ায়ে প্রত্যেকেরই নিজের নিজেকে সময় দেয় উচিত, নিজের তাগিদেই এজন্য সময় বের করা উচিত, এটা খুবই জরুরী একটা বিষয় । যারা নিজেরা নিজেকে সময় দেন না, বা নিজের মুখোমুখি হওয়ার মত সাহসী না। সপ্তাহধরে কাজে ব্যস্ত থাকেন, ছুটির দিনে দাওয়াত, খাওয়া-দাওয়া, হৈ হুল্লোড়,সাজগোজ , দলবেঁধে ছোটাছুটি, বন্ধু বান্ধব, শ'খানেক ছবি ইত্যাদি নিয়েই কাটে, ফের আবার কাজ।
একবার একটু এসব কমিয়ে নিজেকে সময় দিয়ে দেখুন, নিজেকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করান, দেখবেন নিজের জীবনকে দেখার যে দরজা জানালা সেগুলো কিছুটা হলেও বদলে গেছে , আগে হয়তো লোহার জানালা ছিলো, এখন কাঠের ফ্রেম খুঁজে পাবেন, বা আগে হয়তো কাঠ ফাটা রোদ দেখতেন, এখন শান্ত ছায়া ঘেরা টলটলে পুকুর দেখতে পাবেন। আগে যা ঝলমলে মনে হতো এখন মনে হবে সেতো মরীচিকা বা এমন নতুন কিছু খুঁজে পাবেন, যা অনেকদিন আপনার অবচেতনে ছিলো, সময় দেননি বলে এতদিন তা সামনে আসে নি।
এখন এমন কিছু সামনে আসলো যা আপনার পরবর্তী জীবনের চিন্তাধারা ও গতি বদলে দেবে। জীবন ক্ষনিকের,সেই জীবনে সবসময়েই অন্য সবার জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখার কোন মানে হয় না, দিনশেষে নিজের জীবনের দায়ভার কিন্তু নিজেকেই নিতে হয়। অন্যকে খুশী করার জন্য আপনি এই দুনিয়ায় আসেননি,কি কাজে আপনি এসেছেন ভাবুন, নিজের আত্মার খোঁজ নিন।
নিজেকে নিজে সময় দিলে দেখবেন জীবন শুধু হতাশা বা দুঃখভরা নয় , এর কিছু সুন্দর দিকও আছে, ব্যস্ত জীবনের সাথে তাল মেলাতে যেয়ে এদিকটা হয়তো ভুলতে বসেছিলেন। মাকড়সার জাল জমে ঢেকে গিয়েছিলো সব, সব সরিয়ে উঁকি দিলে দেখবেন অন্য ভুবন।
হয়তো অনেকে বলবেন, এতদিন যখন এভাবেই গেছে, বাকি ক'দিন ও যাবে..., এই বয়সে আর ভাবের জগতে ডুব দিয়ে কি হবে! তর্কে যাচ্ছি না, জীবন যার সিদ্ধান্ত তার।
শুধু বলবো এই ভাবের জগৎ আপনাকে আপনার দুনিয়াবী ব্যারামগুলো থেকে নিশ্চিতভাবে বাঁচাবে।
কোন উপলব্ধি একদম অনুভূত না হওয়ার চেয়ে দেরীতে অনুভূত হওয়াটা ভালো কিন্তু।
এমআরএম/জিকেএস