মিশরে ঈদুল আজহা উদযাপন

মিশরে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়েছে। বুধবার (২৮ জুন) কায়রোর প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদ আল-আযহার, আমর ইবনুল আস, সাঈদা জয়নবসহ দেশটির সব মসজিদ ও কিছু মসজিদ সংলগ্ন মাঠে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফজরের নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুআল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ ধ্বনি আসতে আসতে থাকে মহল্লার বিভিন্ন মসজিদ থেকে। ভোরের আলো ফোটার আগেই দেখা যায় নারী পুরুষ ও শিশুরা হাতে জায়নামাজ নিয়ে ছুটে চলছে মসজিদের দিকে।
সূর্য উদয়ের ঠিক ২০ মিনিট পরেই সারাদেশে একযোগে মসজিদ গুলোতে জামাত শুরু হয়। ঈমাম প্রথম রাকাতে ৭ তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকাতে ৫ তাকবীরের সহিত নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজ শেষ করে ইমাম যথারীতি খুতবা (মুসল্লিদের সামনে প্রদত্ত ধর্মীয় বক্তৃতা) দেন। তবে এ দেশে সিংহভাগ মুসুল্লিই নামাজের সালাম ফিরিয়েই ত্যাগ করেন মসজিদ ও জামাতের মাঠ।
শাফী মাজহাবের অনুসারী মিশরীয়রা কোনো নামাজের পর ঈমামের সঙ্গে হাত তুলে মোনাজাত পড়েন না এবং ঈদ উপলক্ষে আমাদের দেশের মতো কোলাকুলি করতে দেখা যায় না।
নামাজ শেষ হওয়ার পর পরই রাস্তায় দেখা যায় ‘গাজ্জার গাজ্জার’ বলে কসাইদের হাক ডাক। হেদাইয়া (উপটোকন) পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোরবানির পশু তারা জবাই ও কেটে দিয়ে যায়। একটি খাশি/ দুম্বা জবাই, চামড়া ছারানো ও বড় বড় সাইজে কেটে দিতে তাদের দিতে হয় বাংলাদেশি টাকায় পনের শত টাকা এবং গরু, মহিষ ও উট প্রতি তিন হাজার টাকা।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে ছেলে-বুড়ো সবাই। কোরবানির পশুর সামনে তারা ভিড় করে। শিশুদের জন্য নানা ধরনের খেলনা-বেলুন নিয়ে পসরা সাজায় বিক্রেতারা। নারীদের দেখা যায় গয়না ফেরিওয়ালার কাছ থেকে দরদাম করে কেনাকাটা করতে। মিশরে ঈদের নামাজের পর থেকে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো দেশ। এছাড়াও নানা ধরনের আয়োজন করা হয় দেশজুড়ে।
এ দেশের দাতব্য সংস্থাগুলো ও ধনাট্য ব্যক্তিরা কোরবানির মাংশ ছাড়াও গরীবদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে গোশত বিতরণ করে থাকে। এ দিনে সবাই পরিবার-পরিজন ও বন্ধু বান্ধবের সহিত দেখা হলেই বলে, ‘কোল্লু সানা ওয়া আনতুম তাইয়েবীন’ যার অর্থ দাঁড়ায় ‘বছরটি আপনার ভালো কাটুক’ ।
মিশরে কর্মরত প্রবাসীরা তাদের নিজ নিজ এলাকার মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন মাঠে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় ও কুরবানি করেন। তবে আলেক্সান্ডারীয়া, পোর্ট সাঈদ, ইসমায়েলিয়া ও আশরা-রামাদানসহ বিভিন্ন শহরে কর্মরত পরিবারবিহীন প্রবাসীদের অনেকেই কায়রোর ঐতিহাসিক মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত আদায় করতে দল বেঁধে ছুটে আসেন রাজধানীতে।
দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম দূতাবাসের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজের মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মিশর, কঙ্গো এবং ইরিত্রিয়াতে বসবাসরত প্রবাসীদের পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানান। তিনি দেশ তিনটিতে কর্মরত প্রবাসীদের দেশে থাকা পরিবারের সদস্য স্বজন-প্রিয়জনদেরও শুভেচ্ছা জানান।
এমআইএইচএস/এএসএম