কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ

রহমান মৃধা
রহমান মৃধা রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ০১:২১ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর। এই দিনটিতে আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তখনও আর যাই হোক ভোট চুরি বা ছিনতাই হয়নি। তবে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সে নির্বাচনের পর বিজয়ী শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করেছিল, এর জের ধরে কিন্তু শুরু হয়েছিল তীব্র রাজনৈতিক সংকট এবং শেষ পর্যন্ত গড়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে।

যার পরিণাম এবং পরিসমাপ্তি ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে। এবারে যদি ভোট চুরি করা হয়, যদি জনগণের অধিকার হরণ করার চেষ্টা চলে তবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা থাকবে না। মনে করিয়ে দিতে চাই পূর্ব পাকিস্তানে গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের মতো জেনারেলও।

এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান দায়িত্ব গ্রহণ করে সামরিক শাসন জারি করে। তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সময়ও একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো ঘাটতি ছিল না, কিন্তু বাংলাদেশে সে ঘাটতি গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেখা গেছে। এবারও যদি সেই ঘাটতি দেখা যায় তবে বাংলাদেশে সশস্ত্র বাহিনী জাতির এবং দেশের জন্য অভিশাপ হয়ে থাকবে।

আমার অনুরোধ থাকবে জনগণের প্রতি ঘরে বা লন্ডনে বসে ডিজিটাল না হয়ে পথে নামুন, ভোট কেন্দ্রে যান, নিজের ভোট নিজে দিন, বাধা দিলে হাত ভেঙে দিন, সাংবাদিক ভাইয়েরা সঠিক এবং সত্য খবর বিশ্ববাসীর দরবারে পেশ করুন। দেখবেন সত্যের জয় হবে, দেশ গণতন্ত্র ফিরে পাবে, স্বৈরশাসকের পতন ঘটবে। আপনারা যদি সময়ের ডাকে সাড়া দিতে ব্যর্থ হন তবে আগামী প্রজন্ম আপনাদেরই দায়ী করবে।

আমি সেই চল্লিশ বছর ধরে কলুর বলদের মতো ঘানি টেনে বেড়াচ্ছি দূরপরবাসে। কে চায় ঘুরে ঘুরে সরষে ভাঙাতে? কিন্তু বেচারা গরু এসবের কিছু ভাবতেই পারে না। অন্ধকারে অবিরাম ঘোরে সে। ছুটে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কর্তার (চালক) মর্জি হলে হয়তোবা গরুটির জন্য কিছুটা বিশ্রামের ব্যবস্থা হয়, কখনো হয় না। এভাবেই দিনের পর দিন একটানা খাটছে গরুটি। তার খাঁটুনির বিনিময়ে ফোঁটা ফোঁটা করে তেল পড়ে। খাঁটি সরষের তেল।

ঘানির তেল নামে যাকে চিনি আমরা। তেল মাড়াইয়ের এই প্রাচীন পদ্ধতিটা নিষ্ঠুর বা কঠিন হলেও সবার কাছে এর চাহিদা দারুণ।জানি না এ যুগে তার মূল্য কত এবং এত দামের তেল মাড়ানোর জন্য পরিশ্রম করা বলদ গরুটির বেতনই বা কত?—তোমরা যারা এ সময়ের ডিজিটাল তোমরা নিজেরাই নাহয় অঙ্ক করে বের করে নিও, একই সাথে দেশটি লুটপাট হয়ে যাচ্ছে সেদিকে একটু খেয়াল কর। পুরো জাতিকে বোকা ডিজিটাল বানানো হয়েছে যাতে করে তারা ২০৪১ সালে স্মার্ট ডিজিটাল হতে পারে।

আমি নিজে কোনো পার্টির সাপোর্টার না তবে আমি জনগণের ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাসী। তবে এই ন্যায্য অধিকার তো ঘরে বসে আদায় করা যাবে না। দেশকে ডিজিটাল করার অর্থ এই নয় যে সবাই ঘরে বসে টিকটক তৈরি করবে, রূপকথার বানী রসিকতায় পরিপূর্ণ করে টকশো বা ইউটিউবে ছাড়বে আর জাতি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে।

সেগুলো নিয়ে চায়ের দোকানে, স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডাখানায় শেয়ার করবে এবং অট্টহাসির খোরাক যোগাবে। মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে চলমান গতিতে থাকার জন্য, ডিজিটাল হয়ে শুধু ঘরে ঘরে টকশো আর ইউটিউবটার হবার জন্য নয়। ঘরে বসে যেমন কৃষি কাজ করা সম্ভব নয় ঠিক ঘরে বসে ডিজিটাল হয়ে টিকটক, ইউটিউব বা টকশো করে দেশের পরিকাঠামো বা রাজনীতির পরিবর্তন করা যেমন সম্ভব নয় ঠিক তেমনি আদর্শ এবং যুগোপযোগী সুশিক্ষাও পাওয়া সম্ভব নয়।

গরিব দেশ সমস্যা নেই, দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি সমস্যা আছে। দিনের ভোট রাতে, সমস্যা আছে। অন্যায় করবা বলা যাবে না সেটা হবে না। দেশের দুর্দিনে থাকবা না সেটাও হবে না। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, এটাই আমার শক্তি। আমার শক্তি, আমার বিশ্বাস, আমার দুর্বলতা, আমার ভালোবাসা আর আমার বাংলাদেশ আমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]

এমআরএম/জিকেএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]