মিশরে অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য খোলা হলো চট্টগ্রামের ‘মেহমানখানা’
![মিশরে অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য খোলা হলো চট্টগ্রামের ‘মেহমানখানা’](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/egipt-cover-20240221144144.jpg)
ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে ইহুদি সেনাদের দ্বারা গাজায় নির্যাতিত অসহায় ফিলিস্তিনিরা মারাত্মক আহত বা বিভিন্ন কারণে জন্মভূমি ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশ মিশরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
বিভিন্ন দেশ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি এই অসহায় ফিলিস্তিনিদের আহারে সহযোগিতার জন্য রাজধানী কায়রোসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে খোলা হয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ‘মেহমানখানা’।
মিশরের এনজিও সংস্থা ইজিপশিয়ান ইয়ুথ কাউন্সিলের সহযোগিতায় আমেরিকাভিত্তিক বাংলাদেশের আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন ‘আশ’ আয়োজন করেছে এই মেহমানখানার।
গত শুক্রবার গিজা শহরের ‘জাজিরাতুল অররা’ এলাকার একটি মেহমান খানায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শত নারী ও শিশু ফিলিস্তিনি শরণার্থীর জন্য নীলনদের মাছ দিয়ে রান্না হচ্ছে মিশরীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘সামাক সাইয়ীদিয়াত’। তার সাথে আছে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, ফলমূল ও কোমল পানীয়।
বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি কিছু শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ হাতে এসব খাবার তৈরি করছেন আশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন।
এ সময় উপস্থিত গাজার অসহায় শরণার্থীরা আয়োজক সংস্থা আশকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের মর্মান্তিক দুদর্শাও তুলে ধরেন এই প্রতিনিধির কাছে। বিশেষ করে নিজেদের ঘনিষ্ঠ স্বজন হারানোর পর যে দুয়েক জন স্বজন এখনো জীবিত আছেন বলে তারা জেনেছেন, তাদের মিশরে আনার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে আন্তরিক অনুরোধ করেন মিশর সরকারসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে।
মায়ের সঙ্গে মেহমানখানায় আসা মায়াবী চেহারার আট বছরের শিশু তা’লা ও পাঁচ বছরের সিলা তাদের বাবাকে তাদের কাছে এনে দেওয়ার আকুতি করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, গাজাবাসীর জন্য আশ ফাউন্ডেশন রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে যুদ্ধাবস্থার প্রথম থেকেই কায়রো থেকে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে সরাসরি গাজায় জরুরি খাবার সামগ্রীর পাশাপাশি কাফনের কাপড়, স্যানিটারি ন্যাপকিন পাঠানোর বিষয়গুলো এরই মধ্যে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আমরা এবার রাজধানী কায়রোসহ ভিন্ন ভিন্ন শহরে অবস্থানরত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য মেহমান খানার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি জানান, চট্টগ্রামে করোনাকালীন থেকে অদ্যাবধি চলমান মেহমানখানার একটি শাখা নিয়ে মিশরে এসেছি নির্যাতিত অসহায় গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে। মেহমানখানায় খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি অসহায় পরিবারগুলোর জন্য বিশেষ ফুড প্যাকেজ বিতরণ কর্মসূচিও চলছে।
নাছির উদ্দিন জানান, শিগগির গাজার অসহায় বাচ্চাদের জন্য আশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটা এতিমখানা তৈরির কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। গাজা থেকে মিশরে আসা শরণার্থী শিশুদের থেকে ১শত এতিম শিশুকে বাংলাদেশে নিয়ে শামসুল হক ফাউন্ডেশনের এতিম খানায় পালন করতে চাই।
প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এ বিষয়ে কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করলে মিশরে অবস্থানরত গাজার এতিম শিশুদের বাংলাদেশে নিয়ে লালন পালন করা সম্ভব। এ বিষয়ে আশ ফাউন্ডেশন মাঠ পর্যায়ের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে।
গাজায় ইসরাইলের হামলায় পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করলে রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় হাজার হাজার নারী ও শিশু শরণার্থী হয়ে মিশরে প্রবেশ করেন।
এমআরএম/এএসএম