১০০ বছর পর গ্রিসের ঐতিহাসিক ইয়েনি যামি মসজিদে ঈদের নামাজ

মতিউর রহমান মুন্না
মতিউর রহমান মুন্না মতিউর রহমান মুন্না , গ্রিস প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:০০ এএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৪

১০০ বছর পর নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে গ্রিসের থেসালিনিকির ঐতিহাসিক মসজিদ ইয়েনি। গ্রিসে ঠিক ১০০ বছর আগে মুসলিমরা যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর অনেক মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার অন্যতম গ্রিসের ঐতিহাসিক ইয়েনি যামি মসজিদ।

জানা যায়, গ্রিসের ঐতিহাসিক ইয়েনি যামি মসজিদ, ১শ’ বছর আগে যেখানে নামাজ আদায় বন্ধ হওযার সিদ্ধান্ত অর্থোডক্স খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠদের দেশটিতে গত শতক থেকেই বহাল ছিল। সম্প্রতি, মত পাল্টায় দেশটির কর্তৃপক্ষ। এক শতাব্দি পর, গত বুধবার খুলে দেওয়া হয়। পরে মুসলিমরা আদায় করেন ঈদুল ফিতরের নামাজ।

৯৮ শতাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর দেশ গ্রিস মাত্র ২ শতাংশ মুসলিমদের জন্য এবারের ঈদে প্রায় এক শতাব্দী আগের বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রাচীন রাজধানী থেসালোনিকির ঐতিহাসিক মসজিদটি পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য খুলে দেওয়ায় খুশি মুসলমানরা।

অনন্য স্থাপত্যশৈলীর প্রাচীন নিদর্শনটি কখনো ব্যবহার হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে, কখনো বা জাদুঘর। আদতে এক সময় যা ছিল মসজিদ। একশ বছর পর, আবারও মুসলিমদের জন্য মসজিদটি খুলে দেওয়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমরা ফিরে পান হারানো ঐতিহ্য।

গ্রিসের এক নাগরিক বলেন, গ্রিসে মুসলিম আর সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এ ধরনের উদ্যোগ তারই বার্তা দেয়। আমার দেশ, আমার ধর্মকে সম্মান করছে। প্রার্থনা করতেও সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। সুতরাং, এটি খুবই ভালো আর গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

jagonews24

অটোম্যান শাসনামলে মসজিদটি তৈরি হয়েছিল মূলত ডনমেহ সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য। যারা ইহুদি থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৯২৩ সালে, গ্রিস এবং তুরস্কের মধ্যকার চুক্তি অনুসারে বিনিময় হয় দু’দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় মসজিদটিতে মুসলিমদের প্রার্থনা।

গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে অবস্থিত এই মসজিদ সম্পর্কে অজানা ছিলেন অনেকেই। সম্প্রতি, দেশটির কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে মসজিদটিতে ঈদের নামাজে অংশ নেন ৭০ মুসল্লি।

এ সময় এক মুসল্লি বলেন, আমাদের বলা হয়েছে ১শ’ বছরের মধ্যে এই প্রথম, মসজিদটির দরজা খুলে দেওয়া হবে। তাই নামাজ পড়তে এসেছিলাম। এতদিন এটাকে জাদুঘর হিসেবে চিনলেও, জানতাম না এটা একটা মসজিদ। প্রায় ৬৩ বছর যাবৎ এখানে আছি, আজকেই প্রথম দেখলাম।

প্রায় এক শতাব্দিরও বেশি সময়ের আগের (১৯০২) মসজিদটির স্থাপত্যে দেখা মেলে ইসলামিক কারুকার্যের। ১৯০২ সালে, ইতালিয়ান স্থপতি ভিতালিনো পোসেলির হাত ধরেই গড়ে ওঠে অনন্য নিদর্শনটি।

ইউরোপের দেশ, গ্রিসের অধিকাংশই অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ২০২০ সাল পর্যন্তও দেশটিতে মুসলিমদের জন্য ছিল না কোনো মসজিদ। বর্তমানে, মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

২০২০ এথেন্সের ভোটানিকোসে প্রথম সরকারিভাবে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটি পুরোপুরি চালু রয়েছে। এবারের ঈদুল ফিতরেও ভোটানিকোসে স্থাপিত একমাত্র সরকারি মসজিদে হাজারো মুসলমান জামাতের সহিত নামাজ আদায় করেছেন।

পাশাপাশি এথেন্সের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশিসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মুসলিম কমিউনিটিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য মসজিদ রয়েছে যেগুলোতে ঈদের জামাত হয়েছে। ছাড়া মানোলদায় বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থায়নে ক্রয়কৃত জায়গায় নির্মিত মসজিদ মাঠে ঈদের জামাতে হাজারো মুসল্লির ঢল নামে।

এমআরএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]