নফসে মুতমাইন্নাহর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিশেষ ধরনের নফস (প্রাণ, আত্মা, মনন) দান করেছেন, যা তাকে অন্যান্য সৃষ্টির চেয়ে বিশেষভাবে আলাদা করেছে। মানব-নফস এমন এক সত্তা, যেখানে যুক্তি ও প্রবৃত্তি একত্রে বিদ্যমান। পক্ষান্তরে, পশুরা শুধু প্রবৃত্তি ও কামনার অনুসারী, আর ফেরেশতারা শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন, প্রবৃত্তি-বর্জিত। এজন্য মানুষকে তার যুক্তি ব্যবহার করে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বলা হয়েছে যেন সে কামনা-বাসনার পেছনে অন্ধভাবে না ছোটে, কল্যাণের পথে অগ্রসর হয়।
কোরআনের দৃষ্টিতে মানুষের নফসের তিন অবস্থা হতে পারে:
১. নফসে আম্মারা বিস-সু (মন্দ কাজে প্ররোচনা দেয় এমন নফস)
এটি সেই নফস, যা তার অধিকারীকে সবসময় খারাপ কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তির অনুসরণে মগ্ন থাকে এবং ইসলামের কোনো নির্দেশনার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। ফলে মানুষ গোমরাহির পথে ধাবিত হয় এবং নিজের ওপর জুলুম করে।
২. নফসে লাওয়ামাহ (মন্দ কাজে তিরস্কার করে এমন নফস)
এই নফস নিজের গুনাহের জন্য নিজেকে তিরস্কার করে, অনুতপ্ত হয়। আবার ভালো কাজেও অলসতা করে।
৩. নফসে মুতমাইন্নাহ (প্রশান্ত নফস)
এটি সেই উন্নত স্তরের নফস, যা মন্দ প্রবণতা থেকে মুক্ত হয়ে পুরোপুরি আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে ধাবিত হয়। এই নফস আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও সন্তুষ্টি অর্জন করে। এই নফসের অধিকারী দুঃখে-কষ্টে, সুখে-সাচ্ছন্দ্যে—সব অবস্থায় আল্লাহমুখী থাকে। আল্লাহর নির্ধারণে সন্তুষ্ট থাকে।
এই নফসের অধিকারী অন্তরের অস্থিরতা থেকে মুক্তি পায়। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে অন্তরের দৃঢ়তা ও স্থীরতা লাভ করে।
নফসে মুতাইন্নাহর অধিকারীরা আখেরাতে নিশ্চিতভাবে জান্নাত লাভ করবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নফসে মুতমাইন্নাহ! তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে, আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও আর আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। (সুরা ফজর: ২৭-৩০)
নফসে মুতমাইন্নাহর চার বৈশিষ্ট্য
এক. নফসে মুতমাইন্নাহর অধিকারী অন্তরে ও বাইরে নেক হয়। তার বাহ্যিক আচরণ ও অন্তরের বিশ্বাসের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব বা অসঙ্গতি থাকে না।
দুই. নফসে মুতমাইন্নাহর অধিকারী আল্লাহর ফয়সালা ও নির্ধারণে সন্তুষ্ট থাকে। বিপদে ভেঙে পড়ে না, হা-হুতাশ করে না, বরং ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহর তাআলার সাহায্য প্রার্থনা করে।
তিন. নফসে মুতমাইন্নাহর অধিকারী হয় অহংকারমুক্ত ও বিনয়ী। সে নিজেকে অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও উন্নত মনে করে না। কোনো নেক আমল করার সুযোগ পেলে এটাকে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ মনে করে।
চার. নফসে মুতমাইন্নাহর অধিকারী অন্যের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায় না। পরচর্চা ও পরনিন্দা থেকে বিরত থাকে। নিজের কী ত্রুটি আছে তা খোঁজার চেষ্টা করে এবং নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করে।
ওএফএফ/জেআইএম