ধর্মীয় অনুশাসনেই হ্রাস পাবে এইডস

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ০১ ডিসেম্বর ২০২২

আল্লাহ তাআলা মানুষকে রোগ-ব্যাধি দিয়ে থাকেন। কিন্তু কোনো কোনো রোগ-ব্যাধি মানুষের পাপ তথা সীমালংঘনের কারণেও হয়ে থাকে। যা মানুষের জন্য অভিশাপ। এইডস সম্পর্কিত তথ্য সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। এইডস-এর মতো মরণব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে এবং জাতিকে মুক্ত রাখতে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার বিকল্প নেই।

সচেতনতা সৃষ্টি

এইডস কি?  কেন এবং কিভাবে এ রোগের সৃষ্টি হয়? কিভাবে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে? এর পরিণাম কি? এ বিষয়গুলো মানুষকে অবহিত করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলেই এইডস-এর মতো মরণ ব্যাধি থেকে সমগ্র জাতি মুক্তি লাভ করতে পারবে।

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা

যারা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে তুলনামূলকভাবে তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। গবেষনায় দেখা গেছে অর্ধেকের বেশি এইডস রোগীর বয়স ১৫-২৪ বৎসরের মধ্যে। সুতরাং প্রত্যেক বাবা-মার লক্ষ্য রাখা উচিত যে, তাঁর সন্তান কোথায় যায়, কী করছে?

১৫ বছরের আগে সন্তানরা সাধারণত বাবা-মায়ের সঙ্গেই বেশি থাকে। তাই তাদেরকে ধর্মীয় জীবন-যাপনের প্রতি জোর দেওয়া বাবা-মায়ের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَهۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُهَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ عَلَیۡهَا مَلٰٓئِکَۃٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا یَعۡصُوۡنَ اللّٰهَ مَاۤ اَمَرَهُمۡ وَ یَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদের আদেশ করা হয়। (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)

যেহেতু উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ে, তরুণ-তরুণীরা এইডস ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত। তাই প্রত্যেক বাবা মায়ের উচিত তাদের সন্তানকে এইডস বিষয়ে সচেতন করে তোলা। তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া এবং তারা যেন কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা।

জিনা-ব্যভিচার না করা

জিনা-ব্যভিচার ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন-

وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ سَبِیۡلًا

‘আর তোমরা যিনার কাছেও যেও না। কেননা এটি অত্যন্ত অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ (সুরা ইসরা : আয়াত ৩২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী স্থান (জিহ্বা) আর দুই ঊরুর মধ্যবর্তী স্থানের (যৌনাঙ্গের) দায়িত্ব নেবে, আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নেব।’

অবাধ যৌনাচার এইডস রোগ হওয়ার একটি মাধ্যম। তাই আল্লাহর নির্দেশ মেনে অবাধ যৌনাচার থেকে মুক্ত থাকাই  কোরআন-সুন্নাহর অকাট্য নির্দেশ।

পর্দা মেনে চলা

ইসলামে নারী-পুরুষ সবার জন্য পর্দাকে ফরজ করা হয়েছে। বেপর্দার কারণে অপর নারীর সৌন্দর্য যেন কাউকে জিনার দিকে প্ররোচিত না করে, সে জন্য ইসলাম বেপর্দায় কঠিনভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আল্লাহ বলেন-

قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِهِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَهُمۡ ؕ ذٰلِکَ اَزۡکٰی لَهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ-  وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِهِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَهُنَّ

‘হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ আবার পরের আয়াতে বলেন, ‘আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩০-৩১)

সমকামিতা বন্ধ করা

ইসলামে সমকামিতা নিষিদ্ধ। সমকামীরা আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত। কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা কি তোমাদের যৌন তৃপ্তির জন্য স্ত্রীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষের কাছে আসবে?

কোরআনের অন্যত্র এসেছে, ‘তোমরা কামবশত পুরুষদের কাছে গমন করো স্ত্রীদের ছেড়ে, বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’

আল্লাহর এ বিধান লঙ্ঘনের দায়ে তিনি পূর্ববর্তী (কাওমে লুত) জাতিকে, তাদের জনপদকে উল্টিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। এছাড়াও সমাজ থেকে নারী-পুরুষের অবাধ যৌনাচার, পতিতালয়, বহুগামিতা ও পরকীয়াসহ সব নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থেকে শৃংখলাবদ্ধ জীবন-যাপন করার তাগিদ দিয়েছে ইসলাম।

সুতরাং দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনে এইডসমুক্ত থাকতে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো পালন করা একান্ত জরুরি। এইডসমুক্ত জীবন ধারণে এর কোনো বিকল্প নেই। তাহলো-

১. ধর্মীয় ও আদর্শ অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলা। শিক্ষা ক্ষেত্রে সব স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামিক স্কলারগণও এ  বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন।

২. এইডসের কুফল গণমাধ্যমে তুলে ধরা। বিশেষ করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যম হিসেবে খ্যাত মসজিদের ইমামদেরকে এইচআইভি/এইডসের ওপর বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজে লাগানো। এ ক্ষেত্রে মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার ধর্মীয় যাজকগণকেও এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা।

৩. সব ধরনের অনৈতিক, অবৈধ ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক বর্জন করা।

৪. যৌন কৌতূহল জাগে বা যৌনকর্ম সম্পাদনে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, এমন কাজ বন্ধ করা। যেমন যৌন আবেদনময়ী অশ্লীল উপন্যাস, নোংরা যৌন পত্রপত্রিকা, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর নগ্ন দেহ প্রদর্শনী প্রভৃতি বন্ধ করা।

৫. পতিতাপল্লী তথা দেহ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

৬. বিয়ে করতে সক্ষম ব্যক্তিদের বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করা। নচেৎ সংযম অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া।

৭. উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের প্রতি অভিভাবকদের সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা। বয়ঃসন্ধিকালে তাদেরকে ধর্মীয় অনুরাগ ও ধর্মীয় নীতি-আদর্শ মেনে চলার ব্যবস্থা করা।

৮. জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে এইআইভিমুক্ত রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া।

৯. অপারেশনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের আগে জীবাণুমুক্ত করা।

১০. দুগ্ধপোষ্য শিশুদেরকে এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করানো থেকে বিরত রাখা।

এইডস আক্রান্তদের প্রতি করণীয়

যারা এইডস আক্রান্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে  উত্তম আচরণ করা। কারণ এইডস  কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। সুতরাং তাদের প্রতি সদয় হওয়া, সুস্থ্য জীবন-যাপনে তাদের সহযোগিতা করা ঈমানের অপরিহার্য দাবি। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই।’

আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করে সুস্থ-সুন্দর-সুনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনের জন্য কোরআনুল কারিমকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে দান করেছেন। এতে রয়েছে বান্দার কল্যাণের পথ নির্দেশ আবার অকল্যাণের কথাও।

সুতরাং কোরআন অনুযায়ী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে দুনিয়ার শান্তি এবং আখিরাতের মুক্তি সুনিশ্চিত। এ বিধান মেনে চলার মাঝেই রয়েছে এইডস-এর মতো মরণ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার উত্তম উপায়। আল্লাহ তাআলা সমগ্র মানবজাতিকে এইডস মুক্ত রাখুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।