তারাবিহের আলোচনা

যুগে যুগে আল্লাহর পথে নবি-রাসুলদের দাওয়াত

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২১ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২৩

১৪৪৪ হিজরির রমজান মাসের ৬ষ্ঠ তারাবিহ আজ। আজকের তারাবিহতে সুরা আরাফের ১২ নং আয়াত থেকে (২০৬) শেষ পর্যন্ত এবং সুরা আনফালের শুরু থেকে ৪০নং আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। যুগে যুগে নবি রাসুলদের দেওয়া সতর্ক বার্তায় ভরপুর আজকের দুই সুরা। আল্লাহর পথে তাদের আহ্বানগুলোও পড়া হবে আজ। শয়তানের ধোকা ও প্রতারণা থেকে হেফাজত থাকার সেরা সতর্ক বার্তা রয়েছে আজকের তারাবিহতে। হাফেজে কোরআনগণ ৯ পারা পর্যন্ত তেলাওয়াত শেষ করবেন আজ।

আজকের তারাবিহতে পড়া হবে সবচেয়ে বহুল পঠিত দোয়া। যে দোয়ায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেয়েছিলেন হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম। সুরা আরাফের ১২ নং আয়াত থেকে (২০৬) শেষ পর্যন্ত এবং সুরা আনফালের শুরু থেকে ৪০নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ওঠে এসেছে তার কিছু তুলে ধরা হলো-

সুরা আরাফ (১২-২০৬)

সুরা আরাফের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ তাআলা এ সুরার চার স্থানে মানবজাতিকে ‘হে আদম সন্তান!’ বলে সম্বোধন করেছেন।এ সুরায় হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের ক্ষমা প্রার্থনার ঐতিহাসিক দোয়া তুলে ধরা হয়েছে। আজকের তারাবিহর প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

قَالَ مَا مَنَعَکَ اَلَّا تَسۡجُدَ اِذۡ اَمَرۡتُکَ ؕ قَالَ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡهُ ۚ خَلَقۡتَنِیۡ مِنۡ نَّارٍ وَّ خَلَقۡتَهٗ مِنۡ طِیۡنٍ

‘তিনি বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছ না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ১২)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইবলিসকে আল্লাহ তাআলা আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর যদি ইবলিসকে সমস্ত জিন জাতির পিতা বলা হয়, তখন তো এ ব্যাপারে আর কোনো কথাই থাকে না। কারণ অন্যান্য আয়াতেও জিন জাতিকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন-

وَ الۡجَآنَّ خَلَقۡنٰهُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ

‘আর এর আগে আমরা সৃষ্টি করেছি জিনদেরকে অতি উষ্ণ নিধুম আগুন থেকে।’ (সুরা আল-হিজর: আয়াত ২৭)

তাছাড়া অন্যত্র আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, জিন জাতিকে ‘মারেজ’ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর ‘মারেজ’ হচ্ছে, নিধুম অগ্নিশিখা। আল্লাহ বলেন-

وَ خَلَقَ الۡجَآنَّ مِنۡ مَّارِجٍ مِّنۡ نَّارٍ

‘আরন জিনকে সৃষ্টি করেছেন নিধুম আগুনের শিখা হতে।’ (সুরা আর-রহমান: আয়াত ১৫)

পরের আয়াতে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে শয়তানের আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমতা চেয়ে নেয়ার বিষয়টি ওঠে এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা কোরআন সে কথা তুলে ধরেছেন এভাবে-

قَالَ اَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ قَالَ اِنَّکَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ  قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَاطَکَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ  ثُمَّ لَاٰتِیَنَّهُمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَ عَنۡ اَیۡمَانِهِمۡ وَ عَنۡ شَمَآئِلِهِمۡ ؕ وَ لَا تَجِدُ اَکۡثَرَهُمۡ شٰکِرِیۡنَ

সে বলল- আমাকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন- নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত। সে বলল- আপনি আমাকে যেমন পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।' (সুরা আরাফ: আয়াত ১৪-১৭)

শয়তান আল্লাহর আল্লাহর হুকুম অমান্য করার পর বেহেশত থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছিল। সেই জেদ থেকেই জান্নাতের নেয়ামতের পরিবর্তে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার ক্ষমতা লাভ করে শয়তান। সব সময় মানুষকে ঈমান-আমল থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে উলঙ্গ করে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত। যেভাবে আদি পিতা ও মাতাকে বেহেশতে থেকে উলঙ্গ করে বের করে দিয়েছিল শয়তান। আল্লাহ তাআলা তা উল্লেখ করেন বলেন-

یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ لَا یَفۡتِنَنَّکُمُ الشَّیۡطٰنُ کَمَاۤ اَخۡرَجَ اَبَوَیۡکُمۡ مِّنَ الۡجَنَّۃِ یَنۡزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِیُرِیَهُمَا سَوۡاٰتِهِمَا ؕ اِنَّهٗ یَرٰىکُمۡ هُوَ وَ قَبِیۡلُهٗ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَهُمۡ ؕ اِنَّا جَعَلۡنَا الشَّیٰطِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ لِلَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ

'হে বনি আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।' (সুরা আরাফ : আয়াত ২৭)

ক্ষমা প্রার্থনার ঐতিহাসিক দোয়া

এরপর হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে এভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন-

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

'হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।' (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)

উত্তম পোশাক পরে নামাজ আদায়ের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কেননা নামাজ মুমিনের মেরাজ। সে কারণে আল্লাহ তাআলা নামাজে উত্তম পোশাক পরে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়ে বলেন-

یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ

'হে বনি আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৩১)

জান্নাতের অধিবাসীরা দুনিয়ার সব ঘোষণার সত্যতা পাবে পরকালে। সে ঘটনার বর্ণনা এবং জাহান্নামিদের সঙ্গী হওয়া থেকে বিরত থাকতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। সে ঘটনা ও দোয়া এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-

وَ نَادٰۤی اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ اَصۡحٰبَ النَّارِ اَنۡ قَدۡ وَجَدۡنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلۡ وَجَدۡتُّمۡ مَّا وَعَدَ رَبُّکُمۡ حَقًّا ؕ قَالُوۡا نَعَمۡ ۚ فَاَذَّنَ مُؤَذِّنٌۢ بَیۡنَهُمۡ اَنۡ لَّعۡنَۃُ اللّٰهِ عَلَی الظّٰلِمِیۡنَ

'জান্নাতিরা দোজখের অধিবাসীদেরকে ডেকে বলবে, আমাদের সাথে আমাদের প্রতিপালক যে ওয়াদা করেছিলেন, তা আমরা সত্য পেয়েছি? অতএব, তোমরাও কি তোমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা বলবে, হ্যাঁ। অতপর একজন ঘোষক উভয়ের মাঝখানে ঘোষণা করবে- আল্লাহর অভিশাপ জালেমদের উপর।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৪৪)

জান্নাতিরা দোয়া করবে এভাবে। যেভাবে আমাদের দোয়া করা উচিত। আর তাহলো-

رَبَّنَا لاَ تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ জালেমদের সাথী করো না।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৪৭)

এ সুরায় আসমান জমিন সৃষ্টি ও তার অবস্থানের কথাও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন এভাবে-

اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّهَارَ یَطۡلُبُهٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِهٖ ؕ اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ

'নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৫৪)

আল্লাহ মৃত জমিনকে যেভাবে বৃষ্টি দিয়ে সজিব করে মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করেন, তার ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

وَ هُوَ الَّذِیۡ یُرۡسِلُ الرِّیٰحَ بُشۡرًۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِهٖ ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَقَلَّتۡ سَحَابًا ثِقَالًا سُقۡنٰهُ لِبَلَدٍ مَّیِّتٍ فَاَنۡزَلۡنَا بِهِ الۡمَآءَ فَاَخۡرَجۡنَا بِهٖ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ ؕ کَذٰلِکَ نُخۡرِجُ الۡمَوۡتٰی لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ وَ الۡبَلَدُ الطَّیِّبُ یَخۡرُجُ نَبَاتُهٗ بِاِذۡنِ رَبِّهٖ ۚ وَ الَّذِیۡ خَبُثَ لَا یَخۡرُجُ اِلَّا نَکِدًا ؕ کَذٰلِکَ نُصَرِّفُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّشۡکُرُوۡنَ

'তিনিই বৃষ্টির আগে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে হাঁকিয়ে দেই। অতপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করি। অতপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনি ভাবে মৃতদেরকে বের করব যাতে তোমরা চিন্তা কর। যে শহর উৎকৃষ্ট, তার ফসল তার প্রতিপালকের নির্দেশে উৎপন্ন হয় এবং যা নিকৃষ্ট তাতে অল্পই ফসল উৎপন্ন হয় এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বর্ণনা করি কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্যে।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৫৭-৫৮)

যুগে যুগে আল্লাহর পথে নবি-রাসুলদের দাওয়াত

যুগে যুগে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত ও ইবাদতের যে দাবি নিয়ে নবি রাসুলদের আগমন ঘটেছিল তার উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ও আল্লাহর পথে দাওয়াতের বর্ণনা ওঠে এসেছে এ সুরায় আর তাহলো-

> হজরত নুহ আলাইহিস সালামের দাওয়াত

لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا اِلٰی قَوۡمِهٖ فَقَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَیۡرُهٗ ؕ اِنِّیۡۤ اَخَافُ عَلَیۡکُمۡ عَذَابَ یَوۡمٍ عَظِیۡمٍ

'নিশ্চয় আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠিয়েছি। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্যে একটি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৫৯)

> হজরত হুদ আলাইহিস সালামের দাওয়াত

وَ اِلٰی عَادٍ اَخَاهُمۡ هُوۡدًا ؕ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَیۡرُهٗ ؕ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ

'আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। সে বলল- আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোনো উপাস্য নেই।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৬৫)

> হজরত সালেহ আলাইহিস সালামের দাওয়াত

وَ اِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاهُمۡ صٰلِحًا ۘ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَیۡرُهٗ ؕ قَدۡ جَآءَتۡکُمۡ بَیِّنَۃٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ ؕ هٰذِهٖ نَاقَۃُ اللّٰهِ لَکُمۡ اٰیَۃً فَذَرُوۡهَا تَاۡکُلۡ فِیۡۤ اَرۡضِ اللّٰهِ وَ لَا تَمَسُّوۡهَا بِسُوۡٓءٍ فَیَاۡخُذَکُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ

'সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে। সে বলল- হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি প্রমাণ এসে গেছে। এটি আল্লাহর উষ্ট্রী তোমাদের জন্যে প্রমাণ। অতএব একে ছেড়ে দাও, আল্লাহর ভুমিতে চড়ে বেড়াবে। একে অসৎভাবে স্পর্শ করবে না। অন্যথায় তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি পাকড়াও করবে।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৭৩)

> হজরত লুত আলাইহিস সালামের সতর্কতা

وَ لُوۡطًا اِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهٖۤ اَتَاۡتُوۡنَ الۡفَاحِشَۃَ مَا سَبَقَکُمۡ بِهَا مِنۡ اَحَدٍ مِّنَ الۡعٰلَمِیۡنَ  اِنَّکُمۡ لَتَاۡتُوۡنَ الرِّجَالَ شَهۡوَۃً مِّنۡ دُوۡنِ النِّسَآءِ ؕ بَلۡ اَنۡتُمۡ قَوۡمٌ مُّسۡرِفُوۡنَ

'আর আমি লুতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল- তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের আড়ে সারা বিশ্বের কেউ করেনি? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৮০-৮১)

> হজরত শোয়ায়েব আলাইহিস সালামের দাওয়াত

وَ اِلٰی مَدۡیَنَ اَخَاهُمۡ شُعَیۡبًا ؕ قَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَیۡرُهٗ ؕ قَدۡ جَآءَتۡکُمۡ بَیِّنَۃٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ فَاَوۡفُوا الۡکَیۡلَ وَ الۡمِیۡزَانَ وَ لَا تَبۡخَسُوا النَّاسَ اَشۡیَآءَهُمۡ وَ لَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ بَعۡدَ اِصۡلَاحِهَا ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ

'আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। সে বলল- হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রমাণ এসে গেছে। অতএব তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ন কর এবং মানুষকে তাদের দ্রব্যাদি কম দিয়ো না এবং ভুপৃষ্টের সংস্কার সাধন করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। এই হল তোমাদের জন্যে কল্যাণকর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।' (সুরা আরাফ : আয়াত ৮৫)

আল্লাহকে ভয় করলে তার নেয়ামত দান করার বিষয়টিও ওঠে এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ বলেন-

وَ لَوۡ اَنَّ اَهۡلَ الۡقُرٰۤی اٰمَنُوۡا وَ اتَّقَوۡا لَفَتَحۡنَا عَلَیۡهِمۡ بَرَکٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ وَ لٰکِنۡ کَذَّبُوۡا فَاَخَذۡنٰهُمۡ بِمَا کَانُوۡا یَکۡسِبُوۡنَ

'আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। (সুরা আরাফ : আয়াত ৯৬)

এ ছাড়াও হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা বেশি বর্ণিত হয়েছে। মুসা আলাইহিস সালামকে দেওয়া মুজিজাগুলো ছিল সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট। বিশেষ করে লাঠি ও শুভ্র হাতের মোজেজা দুটি। এ জাদুকে ফেরাউন ও তার লোকেরা জাদু মনে করত। মুসার মোকাবিলার জন্য জাদুকররা এসেছিল সাপ নিয়ে। মুসা আলাইহিস সালাম-এর হাতের লাঠিটি সাপ হয়ে সেগুলোকে গিলে ফেলে। এতে জাদুকররা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ঈমান আনে। ফেরাউন ঈমানের ‘অপরাধে’ এদের শূলে চড়ায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لَاُقَطِّعَنَّ اَیۡدِیَکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ مِّنۡ خِلَافٍ ثُمَّ لَاُصَلِّبَنَّکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ

'অবশ্যই আমি কেটে দেব তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে। তারপর তোমাদের সবাইকে শূলীতে চড়িয়ে মারব।' (সুরা আরাফ : আয়াত ১২৪)

অতপর আল্লাহর কাছে মুমিনরা ধৈয্য লাভ ও ঈমানি মৃতু্যর দোয়া করবে এভাবে-

رَبِّنَا لَمَّا جَاءتْنَا رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ

'হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার খুলে দাও এবং আমাদের মুসলমান হিসাবে মৃত্যু দান কর।' (সুরা আরাফ : আয়াত ১২৬)

মুসা আলাইহিস সালামের দাওয়াতের প্রত্যুত্তরে ফেরাউন ও তার জাতি অহংকারের পথ বেছে নিয়েছিল। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তিতে নিপতিত করেন। তুফান, দুর্ভিক্ষ, ফল-ফসলে ঘাটতি, পঙ্গপাল, উকুন ও ব্যঙ্গের উপদ্রব এবং যাবতীয় পানিকে রক্তে পরিণত করে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেন। আজাব দেখলে এরা তওবা করত; কিন্তু আবার হঠকারী হয়ে যেত। আল্লাহ বলেন-

فَاَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمُ الطُّوۡفَانَ وَ الۡجَرَادَ وَ الۡقُمَّلَ وَ الضَّفَادِعَ وَ الدَّمَ اٰیٰتٍ مُّفَصَّلٰتٍ ۟ فَاسۡتَکۡبَرُوۡا وَ کَانُوۡا قَوۡمًا مُّجۡرِمِیۡنَ

সুতরাং আমি তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। তারপরেও তারা গর্ব করতে থাকল। বস্তুতঃ তারা ছিল অপরাধপ্রবণ। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৩৩)

বনি ইসরাইল ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালামের ওপর তাওরাত কিতাব নাজিল করেন। কিন্তু নবি মুসা তাওরাত আনতে তুর পাহাড়ে গেলে সামেরি এদের গো-পূজায় লিপ্ত করে। তাছাড়া তাদের শনিবারে মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও তারা হিলা বাহানা করে মাছ ধরত। এ কারণেও তারা শাস্তি পেয়েছিল।

এ ছাড়া মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহকে দেখার যে আবেদন করেছিলেন সে আবেদন ও আল্লাহর দিদারের কথাও পড়া হবে আজ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

'তারপর মুসা যখন আমার প্রতিশ্রুত সময় অনুযায়ী এসে হাজির হলেন এবং তাঁর সাথে তার পরওয়ারদেগার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রভু! তোমার দিদার (দেখা) আমাকে দাও, যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কস্মিনকালেও দেখতে পাবে না, তবে তুমি পাহাড়ের দিকে দেখতে থাক, সেটি যদি স্বস্থানে দঁড়িয়ে থাকে তবে তুমিও আমাকে দেখতে পাবে। তারপর যখন তার পরওয়ারদগার পাহাড়ের উপর আপন জ্যোতির বিকিরণ ঘটালেন, সেটিকে বিধ্বস্ত করে দিলেন এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। অতপর যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে এল; বললেন, হে প্রভু! তোমার সত্তা পবিত্র, তোমার দরবারে আমি তওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপন করছি।' (সুরা আরাফ : আয়াত ১৪৩)

> হজরত মুসা আলাইহিস সালাম নিজের জন্য তার ভাইয়ের জন্য রহমত ও দোয়া কামনা-

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلأَخِي وَأَدْخِلْنَا فِي رَحْمَتِكَ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ

হে আমার পরওয়ারদেগার, ক্ষমা কর আমাকে আর আমার ভাইকে এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যে সর্বাধিক করুণাময়। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৫১)

> আল্লাহ সবচেয়ে উত্তম রক্ষাকারী ও গোনাহ মাগফকারী

أَنتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ

'তুমি যে আমাদের রক্ষক-সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের উপর করুনা কর। তাছাড়া তুমিই তো সর্বাধিক ক্ষমাকারী।' (সুরা আরাফ : আয়াত ১৫৫)

> কোরআন তেলাওয়াত শোনায়ও রয়েছে আল্লাহর রহমত। তিনি বলেন-

وَ اِذَا قُرِیٴَ الۡقُرۡاٰنُ فَاسۡتَمِعُوۡا لَهٗ وَ اَنۡصِتُوۡا لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ

'আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।' (সুরা আরাফ : আয়াত ২০৪)

সুরা আনফাল (১-৪০)

সুরা আনফাল মদিনায় নাজিল হয়েছে। এ সুরাটির রুকু সংখ্যা ১০ এবং আয়াত সংখ্যা ৭৫। এ সুরাটিতে ঐতিহাসিক যুদ্ধের ঘটনাবলীর পর্যালোচনা করা হয়েছে। সুরাটি দ্বিতীয় হিজরির বদর যুদ্ধের পর নাজিল হয়েছে। ইসলাম ও কুফরের মধ্যে সংঘটিত এ প্রথম যুদ্ধের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

প্রথম আয়াতে গনিমতের সম্পদ বণ্টননীতি প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে। তারপর আল্লাহ তাআলা মুমিনদের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করেছেন এবং আল্লাহ তাআলা বদরের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামকে যে সাহায্য করেছেন, তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। যা ছিল ইসলামের ইতিহাসের প্রথম জিহাদ ও বিজয়। যে জিহাদে আল্লাহ তাআলা মুসলমানগণকে বিজয় দান করেছিলেন।

আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।