আখেরাতে মুত্তাকিদের প্রতিদান
সুরা নাবা কোরআনের ৭৮তম সুরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪০টি, রুকু ২টি। সুরা নাবা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে বর্ণিত ‘নাবা’ শব্দটি থেকে এ সুরার নাম হয়েছে নাবা। নাবা শব্দের মূল অর্থ সংবাদ, এখানে কেয়ামতের ও আখেরাতের সংবাদ বোঝানো হয়েছে। কেয়ামত ও আখেরাতের সংবাদই এ সুরার মূল আলোচ্যবিষয়।
সুরা নাবার ৩১-৪০ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
(৩১)
إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازاً
ইন্না লিলমুত্তাকীনা মাফাঝা।
মুত্তাকিদের জন্যে রয়েছে সাফল্য।
(৩২)
حَدَائِقَ وَأَعْنَاباً
হাদাইকা ওয়া আনাবা।
উদ্যান, আঙ্গুর,
(৩৩)
وَكَوَاعِبَ أَتْرَاباً
ওয়া কাওয়াইবা আতরাবা।
সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী।
(৩৪)
وَكَأْساً دِهَاقاً
ওয়া কাসান দিহাকা।
এবং পূর্ণ পানপাত্র।
(৩৫)
لا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْواً وَلا كِذَّاباً
লা ইয়াসমাউনা ফীহা লাগওয়াওঁ ওয়ালা কিযযাবা।
তারা তথায় অসার ও মিথ্যা বাক্য শুনবে না।
(৩৬)
جَزَاءً مِنْ رَبِّكَ عَطَاءً حِسَاباً
জাঝাআম-মির-রাব্বিকা আতাআন হিসাবা।
এটা আপনার রবের তরফ থেকে যথোচিত দান,
(৩৭)
رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الرَّحْمَنِ لا يَمْلِكُونَ مِنْهُ خِطَاباً
রাব্বিস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়ামা বাইনাহুমার-রাহমানি লা ইয়ামলিকূনা মিনহু খিতাবা।
যিনি প্রতিপালক আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও এদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছুর, যিনি দয়াময়; তাঁর নিকট আবেদন-নিবেদনের শক্তি তাদের থাকবে না।
(৩৮)
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلائِكَةُ صَفّاً لا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَاباً
ইয়াওমা ইয়াকূমুর রূহু ওয়াল-মালাইকাতু সাফফাল-লা ইয়াতাকাল্লামূনা ইল্লা মান আযিনা লাহুর-রাহমানু ওয়া কালা সাওয়াবা।
যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতিত কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্য বলবে।
(৩৯)
ذَلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّ فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ مَآباً
যালিকাল ইয়াওমুল-হাক্কু ফামান শাআ-ত্তাখাযা ইলা রাব্বিহী মাআবা।
এই দিবস সুনিশ্চিত; অতএব যার ইচ্ছা সে তার রবের শরণাপন্ন হোক।
(৪০)
إِنَّا أَنْذَرْنَاكُمْ عَذَاباً قَرِيباً يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُولُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِي كُنْتُ تُرَاباً
ইন্না আনযারনাকুম আযাবান কারীবাইঁ ইয়াওমা ইয়ানযুরুল-মারউ মা কাদ্দামাত ইয়াদাহু ওয়া ইয়াকূলুল-কাফিরু ইয়ালাইতানী কুনতু তুরাবা।
আমি তো তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে এবং কাফির বলবে, ‘হায়, আমি যদি মাটি হতাম!’
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই
১. আখেরাতে মুত্তাকিরা প্রভূত সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। জান্নাতের অভাবনীয় নেয়ামতের জগতে তারা বসবাস করবে।
২. মিথ্যা ও অনর্থক কথা শোনা মানুষের জন্য কষ্টকর। কাফেররা অনেক সময় মুমিনদের মিথ্যা ও অনর্থক কটূ কথা শুনিয়ে কষ্ট দেয়। জান্নাতের আল্লাহর একটি নেয়ামত হলো সেখানে কেউ মিথ্যা বা অনর্থক কথা বলবে না, শুনবেও না।
৩. কেয়ামতের দিন মানুষ, জিন ও ফেরেশেতারাসহ সব সৃষ্টি আল্লাহর ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকবে। আল্লাহর সামনে কথা বলার মতো সাহস কারো থাকবে না। তিনি যাকে অনুমতি দেবেন বা কথা বলার নির্দেশ দেবেন, সেই শুধু কথা বলবে এবং সত্য কথা বলবে।
৪. আখেরাত, হিসাব ও প্রতিদানে বিশ্বাস মুসলমানদের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, আখেরাতে অবিশ্বাসী হয়ে কেউ মুমিন হতে পারে না। আখেরাতের বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করা আমাদের কর্তব্য।
৫. আখেরাতের বিশ্বাস যাদের অন্তরে আছে, তাদের কর্তব্য আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা।
৬. আখেরাতে প্রত্যেকেই তাদের কৃতকর্ম সামনে দেখতে পাবে এবং কাফেরদের জন্য আফসোস ছাড়া কিছুই থাকবে না।
ওএফএফ/জেআইএম