মানুষের ভাষাবৈচিত্র্য আল্লাহর নিদর্শন

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ১১:০২ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাষা সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বহু ভাষায় মানুষ কথা বলে। আবার মানুষের কথা বলার ভঙ্গিও বহু রকম। মানুষের এই ভাষাবৈচিত্র্যকে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন উল্লেখ করে কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,

وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖ خَلۡقُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافُ اَلۡسِنَتِکُمۡ وَ اَلۡوَانِکُمۡ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّلۡعٰلِمِیۡنَ

আর তার নিদের্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদের্শনাবলি রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। (সুরা রুম: ২২)

ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গির পাশাপাশি মানুষের কণ্ঠস্বরেও বৈচিত্র্য রয়েছে। প্রত্যেককে আল্লাহ স্বতন্ত্র ও পৃথক কণ্ঠস্বর দান করেছেন। একজনের কণ্ঠস্বর আরেকজনের সাথে মেলে না। আমরা যাদের চিনি, তাদের কণ্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারি কে কথা বলছে। পুরুষ, নারী, বালক ও বৃদ্ধের কণ্ঠস্বরও আলাদা আলাদা। আমরা কারও গলা শুনে তার লিঙ্গ ও বয়সও অনুমান করতে পারি। অথচ সবার বাগযন্ত্র তথা জিহ্বা, ঠোঁট, তালু ও কণ্ঠনালী একই রকম। এটা নিঃসন্দেহে আল্লাহর সৃষ্টিক্ষমতার নিদর্শন।

পৃথিবীর প্রাণীকুলের মধ্যে মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের ভাষা বা বলতে পারার যোগ্যতা। সুরা আর-রাহমানের শুরুতে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার নেয়ামতের কথা উল্লেখ করার পরপরই উল্লেখ করেছেন তাকে ভাষা দান করার নেয়ামতের কথা। আল্লাহ বলেন,

اَلرَّحۡمٰنُ. عَلَّمَ الۡقُرۡاٰنَ. خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ. عَلَّمَهُ الۡبَیَانَ.

পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাষা। (সুরা আর-রাহমান: ১-৪)

অর্থাৎ মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। একটি মানবশিশু বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে তার মাতৃভাষায় কথা বলতে শেখে। আলাদা করে তাকে শেখানোর প্রয়োজনও পড়ে না। এটা আল্লাহর নেয়ামত ও তার সৃষ্টিক্ষমতার নিদর্শন।

কোরআনে আল্লাহ তাআলা মানুষের ভাষাকে তার নেয়ামত ও নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি ভাষার উত্তম ব্যবহারের নির্দেশও দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,

لَا تَعۡبُدُوۡنَ اِلَّا اللّٰهَ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّ ذِی ‌الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا وَّ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ

তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না, সদাচার করবে পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও মিসকিনদের সাথে। আর মানুষকে উত্তম কথা বলো, নামাজ কায়েম কর এবং জাকাত প্রদান কর। (সুরা বাকারা: ৮৩)

এ আয়াতে এক আল্লাহর ইবাদত, বাবা-মায়ের সাথে সদাচার, নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদানের সাথে যুক্ত করে মানুষের সাথে উত্তম কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের সাথে সুন্দর ভাষায় হাসিমুখে কথা বলো। সুন্দর আচরণ করো। এটাও একজন মুসলমানের দীনি কর্তব্য ও ইবাদত। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কোনো নেক কাজকেই খাটো করে দেখ না; যদি তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও হয়। (সহিহ মুসলিম: ২৬২৬)

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।