যে কারণে ধ্বংস হয়েছিল ‘আসহাবুল উখদুদ’

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৮:৪৫ পিএম, ২০ মে ২০২৪

সুরা বুরুজ কোরআনের ৮৫তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ২২টি। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কার কাফেরদের তীব্র বিরোধিতা ও অত্যাচার-নির্যাতনে যখন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুসলমানরা অতিষ্ঠ, তখন সুরা বুরুজ নাজিল করে আল্লাহর পক্ষ থেকে সান্ত্বনা দেওয়া হয় যে, পূর্ববর্তী যুগেও আল্লাহর অনুগত বান্দারা কাফেরদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশার নামাজে সুরা বুরুজ ও সুরা তারিক পড়তেন। (মুসনাদে আহমদ)

সুরা বুরুজের ১-১১ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

(১)
وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْبُرُوجِ
ওয়াস সামাই যাতিল বুরূজ।
শপথ গ্রহ-নক্ষত্র শোভিত আকাশের,

(২)
وَالْيَوْمِ الْمَوْعُودِ
ওয়াল ইয়াওমিল মাওঊদ।
এবং প্রতিশ্রুত দিবসের,

(৩)
وَشَاهِدٍ وَمَشْهُودٍ
ওয়া শাহিদিওঁ ওয়া মাশহূদ।
আর শপথ সাক্ষ্যদাতার এবং যার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া হবে তার,

(৪)
قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ
কুতিলা আসহাবুল উখদূদ ।
ধ্বংস হয়েছিল কুণ্ডের অধিপতিরা-

(৫)
النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ

আন্নারি যাতিল ওয়াকূদ।
ইন্ধনপূর্ণ যে কুণ্ডে ছিল আগুন,

(৬)
إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ
ইযহুম আলাইহা কুঊদ।
যখন এরা এটার পাশে উপবিষ্ট ছিল;

(৭)
وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ
ওয়া হুম আলা মা ইয়াফআলূনা বিলমুমিনীনা শুহূদ।
এবং এরা মুমিনদের সঙ্গে যা করছিল তা প্রত্যক্ষ করছিল।

(৮)
وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلَّا أَنْ يُؤْمِنُوا بِاللهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
ওয়া মা নাকামূ মিনহুম ইল্লা আইঁ ইউমিনূ বিল্লাহিল আঝীঝিল হামীদ।
তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল,

(৯)
الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
আল্লাযী লাহূ মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াল্লাহু আলা কুল্লি শাইয়িন শাহীদ।
যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহর সামনে রয়েছে সবকিছু।

(১০)
إِنَّ الَّذِينَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ
ইন্নাল্লাযীনা ফাতানুল মুমিনীন ওয়াল মুমিনাতি সুম্মা লাম ইয়াতূবূ ফালাহুম আযাবু জাহান্নামা ওয়া লাহুম আযাবুল হারীক।
যারা মুমিন পুরুষ ও নারীকে নিপীড়ন করেছে, অতঃপর তওবা করেনি, তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে দহন যন্ত্রণা,

(১১)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيرُ

ইন্নাল্লাযীনা আমানূ ওয়া আমিলুস সালিহাতি লাহুম জান্নাতুন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু যালিকাল ফাওঝুল কাবীর।
যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের জন্য আছে জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে নির্ঝরিণী, এটা বিরাট সাফল্য।

এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:

১. আল্লাহর মুমিন বান্দাদের ওপর নির্যাতন চালানোর কারণে ধ্বংস হয়েছিল ‘আসহাবুল উখদুদ’ বা অগ্নিকুণ্ডের অধিপতিরা। শুধু আল্লাহর ওপর ইমান আনার কারণে কিছু মানুষকে তারা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল এবং নিজেরা ওই আগুনের পাশে বসে তাদের পুড়ে মরার দৃশ্য উপভোগ করেছিল।

২. মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়া, শেষ বিচার, ভালো ও মন্দ প্রতিদান অর্থাৎ জান্নাত-জাহান্নাম সত্য।

৩. দুনিয়াতে যেসব জালিম কাফিররা মুসলমানদের ওপর জুলুম করে এবং জুলুমের পথে থেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়, তাদের জন্য জাহান্নামের কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।

৪. দুনিয়ায় যে মুমিনরা কাফেরদের নির্যাতনের শিকার হয়ে ধৈর্য ধারণ করে, যারা ইমান আনে ও নেক কাজ করে, আখেরাতে তারা জান্নাতের সুখময় জীবন লাভ করবে।

ওএফএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।