মুসলমানের সর্বোত্তম ইবাদত ‘হজ’

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪৯ এএম, ১১ জুলাই ২০১৭

আবহমান কাল থেকেই হজ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বিশ্ব মুসলিমের জন্যও হজকে আর্থিক এবং শারীরিকভাবে পালনীয় সর্বোত্তম আবশ্যকীয় (ফরজ) ইবাদত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি ইসলামের সর্বশেষ ও পঞ্চম স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নারী ও পুরুষের জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ।

হজ হলো মুসলিম উম্মাহর যৌগিক ইবাদত। যে ইবাদতে একজন মুসলমানকে প্রথমত আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে হয়। অতঃপর থাকতে হয় শারীরিক এবং মানসিক সক্ষমতা। এ ইবাদত পালনে একজন মুসলিমকে অর্থ ব্যয়, শারীরিক পরিশ্রম এবং পরিবার-পরিজনের ভালোবাসা ত্যাগ করে মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়।

আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হয়ে এ হজ সম্পাদন করতে হয়। এর জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট সময়ও। আল্লাহ তাআলা হজ সম্পাদনের বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন-

‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।

এতে রয়েছে মকামে ইবরাহিমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না।’ (সুরা আল ইমরান : আয়াত ৯৬ ও ৯৭)

হিজরি (আরবি) বছরের জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হলো হজের জন্য নির্ধরিত সময়। এ পাঁচ দিন মুসলিম উম্মাহ হজ পালনের উদ্দেশ্যে বর্তমান সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থিত বাইতুল্লাহ তাওয়াফ এবং মক্কার নিকটবর্তী মিনা প্রান্তর, আরাফাতের ময়দান এবং মুযদালিফায় অবস্থান করে নির্ধারিত কর্ম সম্পাদন করতে হয়।

হজ হলো শক্তি এবং সামর্থের ইবাদত। এ ইবাদত সুন্দর ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য আল্লাহ তাআলা প্রথমেই বান্দাকে বাইতুল্লায় পৌছার ক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন। অতঃপর শারীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিরাই হজের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ অভিমুখে রওয়ানা হবেন। এমনটিই কুরআনে পাকের ঘোষণা।

হজে রওয়ানা হওয়ার আগেই হজ পালনেচ্ছু ব্যক্তিকে হজের প্রস্তুতি নিতে হয়। এ প্রস্তুতির মধ্যে থাকবে যথাক্রমে ব্যক্তিগত, শারীরিক, আর্থিক, অফিসিয়াল এবং হজ সম্পাদনে পালনীয় ও করণীয় যাবতীয় বিষয়সমূহ।

সারা বিশ্ব থেকে শারীরিক ও আথির্কভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এ হজ সম্পাদনে ৩টি ফরজ, ৫টি ওয়াজিব এবং সুনির্দিষ্ট কিছু সুন্নাত কাজ আদায় করতে হয়। জাগো নিউজে ধারাবাহিকভাবে যার বিস্তারিত বিরবরণ পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হবে।

হজ হলো মহান প্রভুর সঙ্গে বান্দার প্রেমের গভীর সম্পর্ক তৈরির অনন্য এক মাধ্যম। হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- ইচ্ছা করা বা সংকল্পবদ্ধ হওয়া।

তবে ইসলামি বিধানে হজ বলতে বুঝায়-

পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত বাইতুল্লাহ শরিফকে (তাওয়াফ) প্রদক্ষিণসহ বাইতুল্লাহ নিকটবর্তী স্থান আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, মিনায় কংকর নিক্ষেপ এবং মুযদালিফায় রাত জাগরণ করাসহ আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে প্রাণী কুরবানি করা। যা আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা সম্পন্ন মুসলমানের জন্য জীবনে একবার আদায় করা ফরজ ইবাদত।

হজের গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমন অবস্থায় ফিরে আসে, যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রুপই হয়ে যায়।’ (বুখারি)

অন্য হাদিসে এসেছে-

>> শয়তান আরাফার দিন অপেক্ষা অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না; কেননা ওই দিনই আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা (বড়) গোনাহ ক্ষমা করে দেন।

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, "একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেশত ব্যতিত অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।

পরিশেষে...

আল্লাহর ঘোষণার মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহ পবিত্র নগরী বাইতুল্লায় এবং আরাফাতের ময়দানে আল্লাহর মেহমান হয়ে তাঁর ডাকে সারা দিয়ে ‘হজ’ নামক বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনে যোগদান করেন। উদ্দেশ্য একটাই, সেখান থেকে হজের নৈতিক ও আত্মিক সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে শান্তি ও সৌহার্দ্যের বাণী নিয়ে আল্লাহ প্রেমিক মুমিন বান্দা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়।

অনেক মর্যাদাপূর্ণ কথা হলো-

কোনো মুমিন বান্দা যখন হজ পালনের নিয়ত করে; তখন থেকেই ওই বান্দা আল্লাহ তাআলার সম্মানিত মেহমানে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কেননা সে দুনিয়ার সব লোভ-লালসা থেকে নিজেকে মুক্ত করে পরকালের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিসহ হজে গমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে যায়।

হজ আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে সব পাপ থেকে মুক্ত করতে, নিষ্পাপ মাছুম হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে সে বদ্ধপরিকর। গোনাহ মাফের মাধ্যমে সে নিজেকে উন্নত ও পবিত্র চরিত্রের আলোয় আলোকিত করতে নেয় দীপ্ত শপথ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ পালনেচ্ছু ব্যক্তিকে যথাযথভাবে হজের সব আনুষ্ঠানিকতা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পালনের তাওফিক দান করুন।

হজের আগেই হজের করণীয় কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করার প্রস্তুতি নেয়ার তাওফিক দান করুন। হজের জন্য দুনিয়ার যাবতীয় মোহ ও মায়া ত্যাগ করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।