দান করার আদব ও নিয়ম

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৫ পিএম, ০৪ মার্চ ২০২১

দুনিয়ার প্রতি কাজের আদব বা শিষ্টাচার আছে। আর এখানেই ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। দান-সাদকারও বিশেষ কিছু আদব ও নিয়ম আছে। দানের সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি।তাহলো-

> দানের অর্থ পবিত্র বা বৈধ হওয়া আবশ্যক। কেননা হারাম অর্থ সাওয়াবের আশায় দান করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজে পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া কোনো কিছুই গ্রহণ করেন না।
> আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল দান করা। এ জন্য অল্প হলেও নিয়মিত দান করা উত্তম।
> সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা। অল্প দানে লজ্জিত না হওয়া এবং তুচ্ছ মনে না করা।
> সাওয়াবের নিয়তে প্রশস্ত ও খুশি মনে দান করা।

> শুধু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য দান করতে হবে। মানুষের প্রশংসা কিংবা বাহবা পাওয়ার আশায় দান করা যাবে না। দানের সঙ্গে দুনিয়াবি কোনো স্বার্থে জড়িত না থাকাই শ্রেয়।
> দানের ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া। কেননা আত্মীয়-স্বজনকে দান করায় রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াবের হাতছানি।
> নিকটাত্মীয়দের পরে নিজ বাড়ি সংলগ্ন পাড়া-প্রতিবেশিকে দান করা উত্তম। দান পাওয়ার ক্ষেত্রে পাড়া-প্রতিবেশির অগ্রাধিকার বেশি।
> অতঃপর যার অভাব-অনটন বেশি, তাকে দান করা। তবে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে দানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি নয়।

> গোপনে দান করা উত্তম। দান উদাহরণ এমন হওয়া যে, ডান হাত যা দান করে তা যেন বাম হাতও টের না পায়।
> ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতে অমুসলিমকে দান করা।
> পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তিকে ভালো পথে আনতে দান করা যাবে। যদি পাপাচারী ব্যক্তি দান পেলে অন্যায়-অপরাধ ছেড়ে দেয়।

> যদি জানা যায়, যাকে দান করা হবে তার হাতে অর্থ গেলে সে তা হারাম ও গুনাহের কাজে ব্যয় করবে তাহলে তাকে দান করা বৈধ নয়।
> বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে কবর, মাজার, গাছ, মন্দির ইত্যাদি স্থানে দান করা বৈধ নয়।
> দান করার দানে খোঁটা দেয়া যাবে না। এটি নিষিদ্ধ কাজ। এতে সাওয়াব নষ্ট হয়ে যায়।
> দান করার পর তা ফিরিয়ে নেয়া হারাম বা নিষিদ্ধ।

> দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে দান করা যাবে। যদি শিরক-কুফর ও বেদাআতি শিক্ষামুক্ত প্রতিষ্ঠান হয়। তাওহিদ ও সুন্নাহ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকে।
> প্রিয় ও ভালো জিনিস দান করা উত্তম এবং অধিক সাওয়াবের কাজ।

> বাবা-মা কিংবা মৃত মুসলিম বা আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকেও দান করা বৈধ। এতে যার উদ্দেশ্যে দান করা হয় তার কবরে দানের সাওয়াব পৌঁছে যায়। এক্ষেত্রে-
‘এমন স্থানে দান করা আবশ্যক। যে দান দীর্ঘস্থায়ী হয়। আর তা উত্তম। যেমন- জায়গা-জমি ওয়াকফ করা, মসজিদ ও মাদরাসা নির্মাণ, টিউবওয়েলের ব্যবস্থা, দরিদ্র দ্বীনি শিক্ষায় খরচ, শিক্ষার্থীদের জন্য বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা, পোশাক, বই-পুস্তক ইত্যাদি। কেননা এগুলো সব সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত।’
> অল্প হলেও নিয়মিত সারা বছর দান করা। তবে রমাযানে অধিক পরিমাণে দান করা সুন্নত। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বরকতময় মাসে 'প্রবহমান বাতাস' এর চেয়ে বেশি দান করতেন।

> সমাজের অভাবি লোকদের খোঁজ নিয়ে তাদের বাড়িতে দানের সামগ্রী গোপনে পৌঁছে দেয়া উত্তম ও সাওয়াবের কাজ। কারণ সমাজের অভাবিদের মাঝে এমন মানুষও রয়েছে, যারা অভাবি হওয়া সত্ত্বেও লজ্জায় কারো কাছে দান চেয়ে নিতে পারে না।
> সম্পদের প্রতি বেশি আকর্ষন ও মায়া থাকা অবস্থায় দান করা উত্তম। সে সময়ের দান আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দান করার চেয়ে এ সময় দান করার মর্যাদা বেশি।

মনে রাখা জরুরি
যাকে দান করা হয়, তার প্রতি স্নেহ ও মমতা রাখা খুবই জরুরি। তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশও জরুরি। তাদের সুখে-দুঃখে আর্থিক দান করতে না পারলেও তাদের পাশে থাকায়ও রয়েছে সাওয়াব ও কল্যাণ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দানের নেয়ামত, কল্যাণ ও সাওয়াব পাওয়ার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি দান করার তাওফিক দান করুন। দানের হক ও আদব মেনে দান-সাদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।