খালিদ বিন ওয়ালিদ : বিজয়ী বীর সেনানী


প্রকাশিত: ০১:৪৬ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর কিছু বড় বড় গোত্র প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কিছু সংখ্যক মুসলমান তাদের পূর্বের ধর্মে ফিরে যায়। ভণ্ড নবির আবির্ভাব ঘটে, ইসলামি কোষাগারে যাকাত দিতে অস্বীকৃতিসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়। যা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু শক্ত হাতে দমন করেন। ইসলাম ত্যাগী তথা রিদ্দার যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের কিছু শক্তিক্ষয় করলেও তাদের ভিতরের যে সকল লোক শুধু মুখে বা ক্ষমতা দখলের জন্য সুযোগ সন্ধান করছিল, তাদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে পরে ও তারা সমূলে উৎপাটিত হয়। এতে করে মুসলমানদেরই অনেক উপকার হয়। তারপরই শুরু হয় ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যুদ্ধের দামামা। যার নেতৃত্ব দেন খালিদ বিন ওয়ালিদ।

ইয়ারমুকের যুদ্ধ শুরুর প্রক্কালে সম্রাট হেরাক্লিয়াসের প্রধান সেনাপতি মাহানের অধীনে অস্ত্রসস্ত্রে সুসজ্জিত দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার সৈন্য বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এমন সময় মুসলিম শিবিরে খবর এল, রোমক সেনাপতি মাহান মুসলিমদের সহিত কথা বলতে চান। সে মতে মুসলিম বাহিনীর প্রধান হজরত আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর নির্দেশে সমরাস্ত্রে সজ্জিত দুই লাখ চল্লিশ হাজার সেনাবাহিনীর সারির মধ্য দিয়ে হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ১০০ অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে রোমক সেনাপতির শিবিরে গিয়ে পৌঁছেন।

রোমক সেনাপতির উদ্দেশ্য মুসলিম দূত তাদের শান শওকত ও রোমক দরবারে ঐশ্বর্য দেখে মানসিকভাবে দুর্বল হবে এবং মুসলিম সেনাপতিকে তাদের ভয়াবহ বিপদের খবর দিবে। কিন্তু হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত ও কারুকার্য-খচিত চেয়ারগুলো সরিয়ে রেখে নিঃসংকোচে মেঝেতে আসন গ্রহণ করলেন, তখন সেনাপতি মাহান নিজেই মনে মনে দুর্বল হয়ে পড়েন। তারপর রোমক সেনাপতির সাথে হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর আলোচনা হয়।

সেনাপতি মাহান প্রস্তাব দেন প্রত্যেক মুসলিম সৈন্যকে একশত দিনার, মুসলিম সেনাপতিকে তিনশত দিনার এবং খলিফাকে দশ হাজার দিনার আমি দান করবে। যার বিনিময়ে মুসলমানরা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু দুটি পাল্টা প্রস্তাব রাখলেন, ক. ইসলাম গ্রহণ করুন; নতুব খ. যিযিয়া দিন। রোমক সেনাপতি মুসলিম দূতের প্রস্তাব দাম্ভিকতার সঙ্গে প্রত্যাখান করে, তরবারির মাধ্যমে ফয়সালার ঘোষণা দেন।

হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ স্পষ্ট অথচ কঠোর ভাষায় জানিয়ে দেন, যুদ্ধের বাসনা তোমাদের চেয়ে আমাদেরই বেশি এবং আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরাজিত করব। আর বন্দি করে খলিফার দরবারে হাজির করব। (ইনশাআল্লাহ) মুসলিম দূতের কথা সেনাপতি মাহান তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল, এখনই তোমার সামনে তোমাদের পাঁচজন সঙ্গীকে হত্যা করছি। হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ধীর কণ্ঠে বলে উঠলেন, তুমি আমাদেরকে মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছ অথচ শাহাদাতের মৃত্যুই আমাদের একান্ত কাম্য। কারণ মুসলমানদের জীবন তো মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয়।

দুই লক্ষাধিক সৈন্য বাহিনীর সামনে সেনাপতি মাহানকে জিন্মি করে ১০০ অশ্বারোহী মুসলিম সৈন্যকে নিয়ে স্বীয় তাঁবুতে ফিরে আসেন। যা ছিল ইয়ারমুক যুদ্ধে জয়লাভের প্রথম পদক্ষেপ। পরবর্তীতে হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বেই ১৫ হিজরির ২৫ রবিউস সানী ইয়ারমুকের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী জয় লাভ করেন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।