শান্তি ও মঙ্গল কামনায় উৎযাপিত হলো বড়দিন


প্রকাশিত: ০৭:৫২ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

খ্রিস্টান ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন। বড়দিন উপলক্ষে সারাদেশসহ রাজধানীর তেজগাঁও ও কাফরুল গির্জা সাজানো হয়েছে বাহারি ফুল, পাতা-পল্লব আর হরেক রকম আলো দিয়ে।

তেজগাঁও গির্জার প্রবেশপথে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য শিশু কিশোররা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। পাশেই দেয়াল ঘেষে সাজানো যিশু খ্রিস্টের ছবি। রয়েছে ক্রস এবং শুভেচ্ছা কার্ডসহ উপহারসামগ্রী বিক্রির দোকান।

ক্রিস্টমাস ট্রি সজ্জা ও আলোকসজ্জার পাশাপাশি শিশুকিশোরদের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে সান্তা ক্লজ। গির্জায় আগত শিশুদের হাতে সান্তা ক্লজ তুলে দিচ্ছেন উপহার চকলেট। গির্জার ভেতরে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে আসছে গির্জার প্রধান পুরোহিতের বিনীত প্রার্থনার আওয়াজ।

তিনি বলেন, “ধন্য সেই পদযুগল। যিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য নিয়ে এসেছেন মঙ্গলবার্তা। হে সৃষ্টিকর্তা, তোমাকে ধন্যবাদ যে আমাদের তুমি আত্মশুদ্ধির সুযোগ দিয়েছো, সেজন্য দূত হিসেবে পাঠিয়েছো নিজের সন্তানকে।”

সকাল থেকে গির্জা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। নিরবে বসে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা শুনছেন প্রধান পুরোহিতের যিশুর প্রশংসা শ্রুতি। শুরুতে প্রার্থনা, শেষেও ছিল প্রার্থনা। মাঝে যিশুর জয়োধ্বনি, বাণী পাঠ ও মঙ্গল সমাচার।

ফাদার অ্যালবার্ট রোজারিও তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি গির্জার প্রধান পুরোহিত। বৃহস্পতিবার সকালে গির্জায় প্রার্থনা শেষে জাগোনিউজকে তিনি বলেন, বড়দিন মনে করিয়ে দেয় যিশুর মানবিকতার সুমহান আদর্শ। পাপ ও অকল্যাণকে না, পূণ্য ও কল্যাণের প্রতি সাড়া। বড়দিনে হয়ে উঠুন মহান যিশু সহিষ্ণুতা ও অহিংসার শিক্ষার প্রতিভু। সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক বড়দিন আনন্দ।”

তিনি বলেন, এখানে উপস্থিত সবাই আমরা খুশি ও গর্বিত। কারণ আমরা পাপিষ্ট স্বত্ত্বেও গড আমাদের উপর নারাজ নন। বরং তিনি আমাদের মুক্তির জন্য নিজের সন্তান যিশুকে উৎসর্গ করেছেন।”

তিনি বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো সৃষ্টিকর্তার কাছে শান্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। তবে এবার প্রার্থনায় বিশেষ করে পরিবারের শান্তি কামনা করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের সবাই যেন একসঙ্গে মিলে-মিশে শান্তিতে থাকে, সে মিনতি করা হয়েছে। পরিবারের শান্তি ও পবিত্রতা কামনার মধ্য দিয়ে এবার নতুন বছর শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন রঞ্জেন গোমেজ। গীর্জায় এসে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, “আমরা গর্বিত ও অনুপ্রাণিত। সৃষ্টিকর্তা তার সন্তান যিশুকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। বিপথগামীরা ভুল বুঝে তাকে হত্যা করলেও সৃষ্টিকর্তা প্রতিবাদ করেননি, আমাদের ত্যাগ করেননি। সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আমাদের জন্য এরচেয়ে বড় উপহার আর কি হতে পারে।

মেরি ক্রিস্ট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক। তিনি বলেন, পরিবারে ভাইবোন, ভাবি মা সবাই আছে। সবাই যৌথভাবে মিলেমিশে থাকি। এবারের বড় দিনের মূল প্রতিপাদ্য পরিবারের শান্তি ও পবিত্রতা কামনা। আমি মনে প্রাণে তাই কামনা করছি যেন আমাদের আত্মার বাঁধন অটুট থাকে।

প্রার্থনা শেষে যুথি শ্যানাল নামে এক গৃহিনী বলছেন, বড়দিন উপলক্ষ্যে বন্ধু স্বজনদের উপহার ও কার্ড বিনিময় হয়েছে। প্রার্থনা শেষে বাসায় গিয়ে রান্না শুরু করবো। বিকেলে বাচ্চানের নিয়ে সবাই মিলে ঘুরতে বের হবো।

তেজগাঁও ও কাফরুল গির্জা সূত্রে জানা গেছে, মধ্যরাত থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলছে। আজ রাত পর্যন্ত গির্জায় বিশেষ উপাসনা চলবে। এ গির্জায় বড়দিনের আয়োজনের মধ্যে রয়েছে, উপহার ও কার্ড বিনিময়, সঙ্গীত অনুষ্ঠান, গির্জায় প্রার্থনা, ভোজ, ক্রিস্টমাস ট্রি সজ্জা ও আলোকসজ্জা। নিমন্ত্রিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

দুটি অনুষ্ঠানের স্পন্সর হিসেবে রয়েছে প্রাণ ট্যাংগো। বড়দিন উপলক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয়ে ট্যাংগো দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। তেজগাঁও ও কাফরুল গির্জার সামনে ও ভিতরে ২৫টিরও বেশি পণ্য সামগ্রী নিয়ে ১০টি স্টল সাজিয়েছে প্রাণ। এ অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে জাগোনিউজ২৪.কম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।