লারা সেদিন জয় করেন ৪০০ রানের চূড়া

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ
শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ , স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০১:৫০ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০২০

১৯৯৪ সালের এপ্রিলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যান্টিগা টেস্টে ৩৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ব্রায়ান। টেস্ট ক্রিকেটে সেটিই ছিল তৎকালীন সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড। একই বছরের জুনে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও নিজের করে নেন লারা, খেলেন ৫০১ রানের অপরাজিত ইনিংস।

লারার প্রথম রেকর্ডটি টিকে ছিল প্রায় দশ বছর, ২০০৩ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পার্থে ৩৮০ রান করেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ম্যাথু হেইডেন, বনে যান টেস্টের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের মালিক। তবে এখনও টিকে আছে লারার ৫০১* রানের সেই রেকর্ড।

বিজ্ঞাপন

অবশ্য টেস্টের রেকর্ডটিও সেই লারারই দখলে। হেইডেনকে এই রেকর্ডের শীর্ষে মাত্র ৬ মাস থাকতে দিয়েছিলেন ক্যারিবীয় রাজপুত্র। ২০০৪ সালের এপ্রিলে লারার ব্যাটেই প্রমাণিত হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যান এক ইনিংসেই ৪০০ রানও করতে পারেন!

সেই ইংল্যান্ড, সেই অ্যান্টিগা এবং সেই এপ্রিল মাসেই নিজের ৩৭৫ ও হেইডেনের ৩৮০ রানকে ছাপিয়ে প্রথম ও একমাত্র ৪০০ রানের রেকর্ড গড়েন লারা। আর সেটি হয়েছে আজ থেকে ঠিক ১৬ বছর আগে। অর্থাৎ আজ (১২ এপ্রিল) লারার ৪০০ রানের চূড়ায় বসার ১৬ বছর পূর্তি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৪ ম্যাচের সিরিজটিতে, ইতোমধ্যে ০-৩ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছিল ব্রায়ান লারার অধিনায়কত্ব। সবাই নিশ্চিত ছিল, এই সিরিজ পর আর অধিনায়ক থাকা হবে না লারার।

নিজের সেরাটা বের করে আনার জন্য যেন এমনই উপলক্ষ্যের অপেক্ষা করছিলেন ক্রিকেটের বরপুত্র। অ্যান্টিগা টেস্ট শুরু হয় ১০ এপ্রিল, টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লারা। ইনিংসের ১৪তম ওভারেই ড্যারেন গঙ্গা আউট হয়ে গেলে, প্রথম ঘণ্টায়ই ব্যাটিংয়ে নামতে হয় তাকে।

Lara

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সেই যে নামলেন প্রথম দিনের প্রথম সেশনে, তিনি খেললেন একদম তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশন পর্যন্ত। তাকে আর আউটই করতে পারেনি ইংল্যান্ডের বোলাররা। ইনিংসের ১৩.৪ ওভার থেকে অপরাজিত থেকেছেন একদম ২০২ ওভার পর্যন্ত।

প্রথম দিন শেষে লারার নামের পাশে ঝকঝকে ৮৬ রান। রামনরেশ সারওয়ানের সঙ্গে গড়েন ২৩২ রানের জুটি। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও ৯০ রানে আউট হয়ে যান সারওয়ান। ততক্ষণে দেড়শ পেরিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির পথে লারা।

বেশি কিছু করতে পারেননি রিকার্ডো পাওয়েল (২৩) ও রায়ান হিন্ডস (৩৬)। তবে দেখেছেন লারার ক্যারিয়ারের সপ্তম ডাবল সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার আগেই প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুইটি ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকানোর কৃতিত্ব অর্জন করেন লারা, দিন শেষে অপরাজিত থাকেন ৩১৩ রানে।

বিজ্ঞাপন

ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে লারার সঙ্গী তখন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রিডলি জ্যাকবস। তৃতীয় দিনে জ্যাকবস এগুচ্ছিলেন ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির দিকে লারার সামনে তখন হেইডেনের রেকর্ড ভাঙার হাতছানি। ইনিংসের ১৯০তম ওভারে গ্যারেথ ব্যাটিকে পরপর দুই বলে ছয় ও চার মেরে প্রথম হেইডেনের ৩৮০ এবং পরে ৩৮৪ রানে পৌঁছে যান লারা।

উইকেটে চুমু খেয়ে তৃপ্তি প্রকাশ করেন রেকর্ড ভাঙার। টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস তখন আবার লারার নামের পাশে। তবু কাজ বাকি ছিল। ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সুযোগ আসে ৪০০ রান করার। তা করতে গিয়েই খানিক খোলসবন্দী হয়ে পড়েন লারা।

ততক্ষণে সেঞ্চুরি হয়ে গেছে জ্যাকবসের, অপেক্ষা শুধুই লারার কোয়াড্রপল সেঞ্চুরির। তৃতীয় দিনের চা পানের বিরতির খানিক আগে সেই গ্যারেথ ব্যাটিকেই সুইপ শটে এক রান নিয়ে স্বপ্নের ৪০০ রানের চূড়ায় উঠে যান লারা। নিজের চিরচেনা লাফ দিয়ে উদযাপন করেন সেই অর্জন।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

ঐ ওভারেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন লারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস তখন ২০২ ওভারে ৫ উইকেটে ৭৫১ রান। এর মধ্যে ৯৭ ওভার তথা ৫৮২ বল খেলে লারা একাই করেন ৪০০ রান। প্রায় পৌনে তিন দিন ও ১৩ ঘণ্টা লম্বা ইনিংসটিতে ছিল ৪৩টি চারের সঙ্গে ৪টি ছয়ের মার।

এসএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।