বাড়ি ভাড়ার চাপে চাকরি খুঁজছেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ২৯ মে ২০২০

মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলিদের মতো তারকাখ্যাতি নেই তার নামের পাশে। নেই কোটি ভক্ত-সমর্থকও। তবে পুরোপুরি নিজের ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে ভারতকে দুইটি বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন অন্ধ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক শেখর নায়েক।

ব্যাঙ্গালুরুর বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী নায়েক ২০১২ সালে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি এবং ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যার সুবাদে ২০১৭ সালে প্রথম প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার হিসেবে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন নায়েক।

কিন্তু তার মতো অন্ধ প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের জন্য এসব জাতীয় পুরস্কারের চেয়ে একটা নিরাপদ চাকরিই বেশি জরুরি বলে জানিয়েছেন নায়েক। যিনি বর্তমানে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই মাস ধরে পাননি কোন বেতন।

Shekhar

যার ফলে জমে গেছে বাড়ি ভাড়া। নিজের জমানো টাকার প্রায় পুরোটা খরচ করে ফেলেছেন নায়েক। তাই তিনি এখন সাহায্য করছেন দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজুর কাছে। যাতে করে অন্তত খেলাধুলা কোটায় হলেও একটি সরকারি দেয়া হয় তাকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মিড ডেকে নিজের বর্তমান দুরাবস্থার কথা জানিয়ে নায়েক বলেছেন, ‘আমার বেতন ২৫ হাজার, যার মধ্যে ১২ হাজার রুপিই দিতে হয় বাড়ি ভাড়া। কোন না কোনভাবে আমি এটা ব্যবস্থা করে এসেছি। কিন্তু লকডাউনের কারণে আমার বেতন আটকে গেছে এবং দুই মাস ধরে বাড়ি ভাড়াও দিতে পারছি না। আমার পরিবার এখন খুবই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’

বিগত বছরগুলোতে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেও একটা নিরাপদ চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেননি দুই সন্তানের জনক নায়েক। তবু হাল ছাড়ছেন না তিনি। এখনও আশায় আছেন একটি সরকারি চাকরির, যাতে করে দূর হয় তার পরিবারের দুঃখ কষ্ট।

নায়েক বলেন, ‘গত ৮ বছরে আমি কর্ণাটকার বিভিন্ন মূখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, তাদের কাছে একটি সরকারি চাকরি অনুরোধ করেছি। গত ডিসেম্বরে আমি ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাকে বলেছি, আমার আসলে পদ্মশ্রী পুরস্কারের চেয়ে একটি চাকরি বেশি জরুরি। কারণ আমার স্ত্রীও অন্ধ।’

জন্ম থেকে পুরোপুরি অন্ধ ছিলেন শেখর নায়েক। পরে আট বছর বয়সে একটি অপারেশনের মাধ্যমে ডান চোখের ৬০ শতাংশ দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসে কিন্তু বাম চোখ রয়ে গেছে পুরোপুরি দৃষ্টিহীন।

Shekhar

২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বি-২ ক্যাটাগরিতে ছিলেন শেখর নায়েক। মিডিয়াম পেস বোলিং করে নিয়েছিলেন ২২টি উইকেট, জিতেছিলেন সেরা বোলারের পুরস্কার। তখন কর্ণাটকা সরকার তাকে ৩ লাখ রুপি অর্থ পুরস্কার দিয়েছিল। এই অর্থ দিয়ে ভাড়া বাড়ির ডিপোজিট পরিশোধ করেছিলেন তিনি।

পরে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৬৫০ রান ও ১৭ উইকেট নিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেন অধিনায়ক নায়েক। সেবার তিনি পান ৭ লাখ রুপি। এর মধ্য থেকে ২ লাখ ১০ হাজার রুপি তিনি দান করেন ভারতের অন্ধ ক্রিকেটারদের সংগঠনে।

২০১৭ সালে যখন পদ্মশ্রী পুরস্কার জেতেন নায়েক, তখনও কেন্দ্রীয় সরকার এবং কর্ণাটকা রাজ্যসভা থেকে ১ লাখ করে মোট ২ লাখ রুপি পুরস্কার পান তিনি। যার আংশিক তিনি ব্যাংকে জমা রেখেছেন দুই মেয়ের জন্য আর বাকিটা খরচ করেছেন তাদের শিক্ষার কাজে।

এখন করোনাভাইরাসের লকডাউনের কারণে বেতন আটকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নায়েক। তাই তার আশা নিরাপদ চাকরির, ‘অন্ধ ক্রিকেটাররাও পুরস্কৃত হচ্ছে, এটা অবশ্যই ভাল দিক। তবে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের যেন নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য ভাল একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।’

এসএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।