অনিশ্চয়তায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সম্প্রচার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আগামী ১৬ অক্টোবর। ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণের এ মহারণ দেখতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন সবাই। তবে ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ, অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সম্প্রচার নিয়ে। টাকা পাঠানোর ছাড়পত্র না পাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ডলার সংকট থাকায় সাময়িক অনুমোদন বন্ধ রাখা হয়েছিল, এখন ওপেন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের ছাড়পত্র বা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করেছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শর্ত পূরণ করে এখনো মেলেনি ছাড়পত্র। ফলে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্ব কিনতে পারছে না দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থায় বিশ্বকাপ সম্প্রচারে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো। ফলে বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন দেশের কোটি ক্রিকেট ভক্ত। এছাড়া এ খাত থেকে আসা বিশাল অংকের রাজস্ব হারাতে পারে বাংলাদেশ সরকার।

ক্রিকেট বিশ্বের বড় বড় টুর্নামেন্ট দেশে সম্প্রচারের মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। গত দুই বছরে এই রাজস্ব আয় বেড়েছে। ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মতো বড় টুর্নামেন্ট সম্প্রচারের জন্য সরকারকে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে স্টার স্পোর্টস এবং সনি পিকচার্স নেটওয়ার্ক।

একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের সহায়তায় গুগল এবং ফেসবুকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও বড় অংকের রাজস্ব পেয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রচার স্বত্বধারীদের কাছ থেকে এ রাজস্ব পেয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে দেশের টিভি দর্শকরা এসব খেলা নিরবচ্ছিন্ন লাইভ সম্প্রচার উপভোগ করছেন।

এদিকে, ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হতে পারে এশিয়া কাপের সম্প্রচার স্বত্বের বকেয়া বিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি না পাওয়ায় আটকে আছে বকেয়া বিল পরিশোধ। গত মাসে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের বিল শিগগির পরিশোধ করা না গেলে দেশীয় চ্যানেলগুলোর সঙ্গে সম্প্রচার স্বত্বধারীদের সুসম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এমনকি এই জটিলতায় আইসিসি থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্বের সুযোগও হারাতে হতে পারে।

সম্প্রতি একই জটিলতায় পড়ে শ্রীলঙ্কা। এ কারণে দেশটি জাতীয় দলের অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিজ দেশে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্র না পাওয়ায় ফেসবুক ও গুগলের বিজ্ঞাপন বাবদ প্রায় পাঁচ মাসের বকেয়া আটকে আছে। এতে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় পড়তে পারে বাংলাদেশ।

সম্প্রচার স্বত্বের অন্যতম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মিডিয়াকমের সিইও অজয় কুমার কুন্ডু বলেন, দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের বিজ্ঞাপন ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে প্রচার করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক ও ইউটিউবের পাওনা পাঠানো যাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। ফেসবুক ও ইউটিউবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু টাকা পাঠানো হচ্ছে তা কিন্তু নয়, বরং এগুলোর মাধ্যমে প্রচুর টাকা বাংলাদেশেও আসছে।

তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি বিভিন্ন সময় সরকারের অনুমোদন নিয়ে আন্তর্জাতিক খেলার প্রচার স্বত্ব কিনেছি। এর বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার ভ্যাট ও ট্যাক্স পেয়ে আসছে। যদি বৈধভাবে টাকা পাঠানোর অনুমোদন বা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অসদুপায় অবলম্বন করবে। তাই বৈধপথে অর্থ পাঠানোর সুবিধার্থে যদি শিগগির ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসা যায়, সেটি সরকার এবং ব্যবসায়ী- উভয়ের জন্যই ভালো হবে।

এ বিষয়ে এশিয়াটিক মাইন্ড শেয়ারের এমডি মোর্শেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ দল অংশগ্রহণ করায় বরাবরের মতো এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরও দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। গতবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ভালো করেছে। তাই ক্রিকেটারদের ঘিরে আমাদের আগ্রহ ও প্রত্যাশা বেড়েছে। এবারের বিশ্বকাপের ম্যাচ সম্প্রচারে কোনো কারণে ব্যর্থ হলে খেলাধুলা নিয়ে পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রভাব ফেলবে।

সম্প্রচার স্বত্ব সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত নিরসনের আহ্বান জানিয়ে স্পোর্ডিয়ামের সিইও জিয়াউদ্দিন আদিল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনায় এরই মধ্যে একটি পদ্ধতিগত নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে নিয়ম মেনেই ফরেন এক্সচেঞ্জ এবং রাজস্বের হার নির্ধারণ করে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখানো হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে এভাবেই আন্তর্জাতিক খেলাগুলো সম্প্রচার করে আসছি। কিন্তু সম্প্রতি এশিয়া কাপের মতো একটি বড় ইভেন্ট বিশেষ বিবেচনায় সম্প্রচার করার পরও আমরা সম্প্রচার স্বত্বের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। এই অনিশ্চয়তায় আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া নারী এশিয়া কাপের সম্প্রচারে জটিলতা তৈরি হতে পারে। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক খেলা ঘিরে দেশীয় গণমাধ্যমে শতাধিক কোটি টাকার বিজ্ঞাপনকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞের সুযোগ তৈরি হয়। এতে ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ মোটা অংকের রাজস্ব পায় সরকার।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের ছাড়পত্র বা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করেছিল। এটি এখন ওপেন করা হয়েছে। কাজেই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সম্প্রচার করার ক্ষেত্রে এখন কোনো বাধা নেই। আগে ডলারের চাপ (সংকট) থাকায় সাময়িককালের জন্য অনুমোদন বন্ধ রাখা হয়েছিল, এখন ওপেন করা হয়েছে।

আইএইচআর/কেএসআর/জেআইএম

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শর্ত পূরণ করে এখনো মেলেনি ছাড়পত্র। ফলে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্ব কিনতে পারছে না দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো

সম্প্রতি একই জটিলতায় পড়ে শ্রীলঙ্কা। এ কারণে দেশটি জাতীয় দলের অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিজ দেশে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্র না পাওয়ায় ফেসবুক ও গুগলের বিজ্ঞাপন বাবদ প্রায় পাঁচ মাসের বকেয়া আটকে আছে। এতে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় পড়তে পারে বাংলাদেশ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।