আবাহনী-মোহামেডান

মিরপুরে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই বুধবার

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৩১ পিএম, ২১ মার্চ ২০২৩

আবাহনীর জয়রথ কি সচল থাকবে? না মোহামেডান লিগে প্রথম জয়ের মুখ দেখবে? সে প্রশ্ন সামনে রেখেই ২২ মার্চ, বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগের জমজমাট ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী এবং মোহামেডান। বুধবর সকাল সাড়ে ৯ টায় শুরু হবে সাদা কালো ও আকাশী হলুদ জার্সির লড়াই।

দু’দলেই তারকার মেলা। নামী ও প্রতিষ্ঠিত পারফরমারকে মানদন্ড ধরলে মোহামেডান এগিয়ে। তবে আবাহনী তুলনামূলক সাজানো-গোছানো। ব্যাটিংযের পাশাপাশি বোলিংটাও বেশ দারুণ। আবাহনী লাইনআপে ব্যাটার ও বোলারদের একটা বড় অংশ তরুণ। তাদের জাতীয় দলে খেলার বয়স আছে। তাদের ভেতরে ব্যাট ও বল হাতে ভাল করে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পাশাপাশি নিজেকে মেলে ধরার তাগিদটাও তুলনামুলক বেশি।

অন্যদিকে মোহামেডানের বেশ কয়েকজনের গায়ে ‘সাবেক জাতীয় ক্রিকেটারের’ তকমা। তাদের নিজেকে মেলে ধরার তাড়া ও তাগিদটাই কম। মাঠেও কেমন যেন আড়ষ্ঠ, নিস্পৃহ মোহামেডান। যাত্রাই শুরু হয়েছে বিব্রতকর হার দিয়ে।

প্রথম ম্যাচে গাজী গ্রুপের কাছে ১২৮ রানের বিরাট ব্যবধানে হেরেছে সাদা কালোরা। পরের ম্যাচে রুপগঞ্জ টাইগার্সের সঙ্গে বৃষ্টির কল্যাণে এক পয়েন্ট পেয়েছে কাগজে-কলমে অন্যতম সমৃদ্ধ দল মোহামেডান। বুধবার আবাহনীর কাছে হারলে মোহামেডান পড়ে যাবে তলানিতে। আর আবাহনী জিতলে কক্ষপথেই থাকবে।

দলবদলে দেশসেরা পারফরমার ও শীর্ষ তারকা সাকিব ও সময়ের অন্যতম তুখোড় অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজকে নিলেও এখনো তাদের সার্ভিস পায়নি মোহামেডান। সাকিব আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যস্ত। মিরাজও ওই সিরিজ খেলার জন্য জাতীয় দলে। তারা মোহামেডানের হয়ে খেলতে পারেননি।

এর বাইরে ইমরুল, সৌম্য, মাহমুদউল্লাহ, শুভাগত হোম, খালেদ, আবু জায়েদ রাহিকে ঠিকই পাচ্ছে মোহামেডান। এছাড়া রনি তালুকদার প্রথম ম্যাচ খেললেও পরে ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পেয়ে সিলেট চলে গেছেন। তাকেও পাচ্ছে না মোহামেডান। বুধবারও মোহামেডানকে খেলতে হবে রনি তালুকদারকে ছাড়া। প্রথম ম্যাচে গাজী গ্রুপের বিপক্ষে ৬১ বলে ৮০ রানের দারুন এক ইনিংস খেলেছেন রনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকেও আসে ফিফটি (৫৭ বলে ৫৮)।

এদিকে বিদেশী কোটায় মোহামেডান এবার পেয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অলরাউন্ডার অনুষ্টুপ মজুমদারকে। প্রথম ম্যাচে ৩ রানে রানআউট হয়ে গেছেন এ ক্রিকেটার। বল হাতেও কোন কারিশমা দেখাতে পারেননি। ব্যাট হাতে প্রথম ম্যাচে রান পাননি। ১ রানে রানআউট হয়ে যান।

অন্যদিকে আবাহনী বুধবারের ম্যাচে বাঁ-হাতি আফিফ হোসন ধ্রুবকে পাচ্ছে। তাকে শেষ ওয়ানডের আগে জাতীয় দল থেকে ফ্রি করে প্রিমিয়ার লিগ খেলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর আগে ব্রাদার্সের বিপক্ষে আবাহনীর হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন আফিফ। সে ম্যাচে ৪৭ বলে ৬৫ রানের দারুন ইনিংসও খেলেছিলেন।

এদিকে এবার আবাহনীর হয়ে খেলতে এসে দারুন পারফর্ম করছেন এনামুল হক বিজয়। প্রথম দিন ব্রাদার্সের বিপক্ষে অনবদ্য শতক (১১৮ বলে ১২৩) উপহার দেয়া বিজয় পরের খেলায় সাইনপুকুরের বিপক্ষে আবারও ফিফটি (৫৪) হাঁকিয়েছেন। সাথে অপর ওপেনার নাইম শেখের ব্যাটেও (৭৪ বলে ৮৫ ও ৪৮ বলে ৪৩) রান আছে।

এর বাইরেও আকাশী জার্সি গায়ে মাহমুদুল হাসান জয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, জাকির আলী অনিক, ভিনদেশি অরপিত ভাসাবাদা, স্পিনিং অলরাউন্ডার নাহিদুল ইসলাম, দুই বাঁ-হাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান, তানভির ইসলাম এবং অলরাউন্ডর সাইফউদ্দীন ও পেসার তানজিম হাসান সাকিবও আছেন।

রাকিবুল-তানভির দু’দুজন কোয়ালিটি বাঁহাতি স্পিনার। সাইফউদ্দীন ও তানজিম সাকিব দুজন পেসার এবং অফস্পিনিং অলরাউন্ডার নাহিদুল। সাথে অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অফস্পিনও বড় ব্যাকআপ। আর আফিফও অফস্পিনার। সব মিলে আবাহনীর বোলিং লাইনআপটা অনেক সুগঠিত। বৈচিত্র্যে ভরা।

সেখানে মোহামেডানের বোলিং একদম প্রথাগত। বৈচিত্র্য খুব কম। খালেদ আর আবু জায়েদ রাহি, মুশফিক হাসান আর রুয়েল মিয়ার গড়া পেস ডিপার্টমেন্ট। মার্চের খরতাপে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে তারা কেউই ভাল বোলিং করতে পারেননি। তারা না পেরেছেন লাইন-লেন্থ বজায় রেখে ভাল জায়গায় বল ফেলে রানের গতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে, না বৈচিত্র্যের সমাহার ঘটিয়ে ব্রেক থ্রু উপহার দিতে।

সাথে জেন্টাল মিডিয়াম হিসেবে কাজ চালাচ্ছেন সৌম্য আর আরিফুল। তাদের কার্যকরিতাও কম। অপর পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি আমেরিকায়। স্পিন ব্যাকআপটাও আহামরি না। শুভাগত হোমের অপস্পিন আর নাজমুল অপুর বাঁ-হাতি স্পিনই ভরসা। ভারতীয় লেগস্পিনার অনুষ্টুপ এখনো কার্যকর কিছু করতে পারেননি।

প্রথম ২ ম্যাচে প্রমাণ হয়েছে বোলিং দুর্বলতার কারণেই ধুঁকছে মোহামেডান। গাজী গ্রুপ আর রুপগঞ্জ টাইগার্স- কারো বিপক্ষেই ভাল ও সমীহ জাগানো বোলিং বহুদুরে, নিয়ন্ত্রিত বোলিংও করতে পারেননি মোহামেডান বোলাররা। তাই ২ ম্যাচেই সাদা-কালোদের বিপক্ষে বড়সড় (প্রথম দিন গাজী গ্রুপ ৩৪৯, আর পরের দিন রুপগঞ্জ- ২১ ওভারে ২২২) স্কোর গড়েছে প্রতিপক্ষ।

এখন দেখার বিষয় কাগজে কলমে দুই সমৃদ্ধ দলের লড়াইয়ে বুধবার কে হাসে শেষ হাসি?

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।