টুর্নামেন্টসেরার দৌড়ে সাকিব-তামিমের সঙ্গে লড়ছেন হৃদয়-লিটন

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৩:৩৪ পিএম, ০১ মার্চ ২০২৪

এবারের বিপিএলের ফাইনাল অন্যবারের মতো নয়। এই ফাইনালকে সামনে রেখে চলছে নানান হিসাব-নিকাশ। অনেক ফাইনালের আগেই বোঝা যায়, আসরের সেরা পারফর্মার বা ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট কে হবেন? কিন্ত এবার তা হয়নি। ফাইনালের আগে বোদ্ধা-বিশেষজ্ঞরাও বলতে পারবেন না, টুর্নামেন্ট সেরা পারফর্মার কে হবেন?

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আর ফরচুন বরিশালের মধ্যকার বিপিএল ফাইনালটা শুধু কুমিল্লা আর বরিশালের লড়াই নয়, দলগত শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের ভেতর এর মাঝে আছে ব্যক্তিগত লড়াইও। আজকের ফাইনাল এবারের বিপিএলের সেরা পারফর্মার নির্ধারণী লড়াইও।

অন্তত তিন থেকে চারজন আছেন আসরসেরা হওয়ার দৌড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত হয়তো তা নির্ধারিত হবে আজকের ফাইনালেই।

খালি চোখে মনে হচ্ছে, কুমিল্লার তরুণ ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়, কুমিল্লার অধিনায়ক লিটন দাস, বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবং রংপুর রাইডার্সের সাকিব আল হাসানের মধ্যেই এবারের বিপিএলের সেরা তারকা হওয়ার লড়াই সীমাবদ্ধ।

সাকিব আল হাসানের দল ফাইনালে নেই। দুই কোয়ালিফায়ারের একটিতেও ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি সাকিব। তাই দলের সাফল্যে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রাখা সম্ভব হয়নি তার।

১৩ ম্যাচে ২৫৫ রানের পাশাপাশি সাকিবের উইকেট সংখ্যা ১৭। অলরাউন্ডার হিসেবে পারফরম্যান্স যথেষ্ঠ ভালো। সেরা অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স অবশ্যই। তারপরও দলের উত্তরণে সাকিবের অবদান হৃদয়, লিটন ও তামিমের চেয়ে কম। ‘চ্যাম্পিয়ন’ অলরাউন্ডারের তাই সেরা পারফর্মার হওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম।

সে তুলনায় কুমিল্লার হৃদয় ও অধিনায়ক লিটনের কার্যকারিতা প্রচুর। দলকে ফাইনালে তুলতে দুইনের ভূমিকাই যথেষ্ট। সেরা পারফরর্মারের লড়াইয়ে এ মুহূর্তে এক নম্বরে অবস্থান করছেন হৃদয়। তিন তিনটি ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে পৌঁছে দিতে হৃদয় রেখেছেন বড় ভূমিকা।

৯ ফেব্রুয়ারি এই শেরে বাংলায় দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৫৭ বলে ১৮৯.৪৭ স্ট্রাইকরেটে ১০৮ রানের হার না মানা ইনিংসটি এবারের বিপিএলের সেরা ম্যাচ জেতানো ইনিংস। এরপর আরও দুটি ম্যাচ জেতানো ইনিংস আছে হৃদয়ের। একট খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে ।

৪৭ বলে ১৮০+ স্ট্রাইকরেটে ৯১ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে আরও একবার ম্যাচ জেতানো উইলোবাজ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন হৃদয়। আর শেষবার জ্বলে উঠেছেন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে।

১৮৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক লিটন দাসের সঙ্গে বুক ভরা সাহস নিয়ে বাহারি, আক্রমণাত্মক শটের অনুপম প্রদর্শনীতে মাঠ মাতিয়ে ৪৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে আবারো দর্শকদের হৃদয় জিতেছেন তাওহিদ। দেখিয়ে দিয়েছেন রান তাড়া করে দল জেতানোর কাজটি তিনি কতটা ভালো পারেন।

আজ শুক্রবারের ফাইনালেও যদি তার ব্যাট জ্বলে ওঠে এবং ফরচুন বরিশালের বোলিং-ফিল্ডিংকে এলোমেলো করে কুমিল্লাকে পৌঁছে দিতে পারেন জয়ের বন্দরে, তাহলে হৃদয়ের আসরসেরা হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

হৃদয়ের পিছনে পিছনে আছেন নিজ দলের অধিনায়ক লিটন আর প্রতিপক্ষ বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

এই ৩ জনের মধ্যে চলছে আরও একটি লড়াই। এর মধ্যে টপ স্কোরারের লড়াইটা মূলত স্থির হয়ে আছে বরিশালের তামিম আর কুমিল্লা টপঅর্ডার হদয়ের মধ্যে। ফাইনালের আগে রান তোলায় তামিম সবার ওপরে। ১৪ ম্যাচে ৩ হাফ সেঞ্চুরিতে তামিমের সংগ্রহ ৪৫৩।

আর হৃদয় এক ম্যাচ কম খেলে করেছেন ৪৪৭। মানে, মাত্র ৬ রান কম। তবে স্ট্রাইকরেট এবং দল জেতানোয় অবদান রাখা, উভয় ক্ষেত্রে তামিমের (১২৫.৪৮) চেয়ে হৃদয় (স্ট্রাইকরেট ১৪৯.৪৯)অনেক এগিয়ে। এখন দেখা যাক, ফাইনালে কে কত করেন এবং সবচেয়ে বেশি রান আসে কার ব্যাট থেকে।

অবশ্য লিটনও আছেন এই লড়াইয়ে। কুমিল্লার অধিনায়কের রান ১৩ ম্যাচে ৩৭৫। তামিমের চেয়ে ৭৮ আর হৃদয়ের চেয়ে ৭২ রান কম তার।

অবশ্য এ তিন জনের মাঝখানে তিন নম্বরে আছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম (১২ ম্যাচে ৩৮৪ )। যেহেতু তার দল ফাইনালে নেই, তাই তানজিদ তামিমের টপ স্কোরার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

সে লড়াইটা মূলত, তামিম-হৃদয়ের মাঝেই স্থির আছে। যেহেতু এই দুইজনের রানের ব্যবধান মাত্র ৬, তাই তামিম ও হৃদয়ের মধ্যে যিনি ফাইনালে বড় ইনিংস খেলবেন তার টপ স্কোরার হওয়ার সম্ভাবনা তার বেশি থাকবে।

তবে তামিম ও হৃদয় খুব বেশি খারাপ খেললে লিটনের একটা সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকবে। তামিম ও হৃদয় অল্প রানে ফিরে গেলে লিটন যদি সেঞ্চুরি করে ফেলেন, তাহলে হয়তো সবাইকে টপকে যাবেন লিটন।

তখন টপ স্কোরারের পাশাপাশি ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্টের পুরস্কারও পেয়ে যেতে পারেন লিটন। যেহেতু কোয়ালিফায়ার ১ এ ম্যাচসেরার পুরস্কার জুটেছে, তাই ফাইনালে বড় ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হলে আসরসেরা পারফর্মার বনেও যেতে পারেন কুমিল্লা অধিনায়ক। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কার হাতে ওঠে আসরসেরা পারফর্মারের পুরস্কার?

এআরবি/এমএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।