টেস্ট সিরিজে ব্যর্থতা

উন্নতির পথ খুঁজে বের করতে চান লিপু

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, ০৪ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক সোনালী অধ্যায় আর উজ্জ্বল সাফল্যের সাক্ষী এবং অন্যতম কুশিলবও তিনি। বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। যার নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিলো বাংলাদেশের।

যে আসর জিতে বাংলাদেশ আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের বলয় থেকে বের হয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পা রেখেছে- সেই আইসিসি ট্রফি বিজয়ের অন্যতম নেপথ্য কারিগরও ভাবা হয় তাকে।

অধিনায়ক ও ক্রিকেট ম্যানেজারের ভূমিকায় সফল গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর প্রধান নির্বাচক হিসেবে যাত্রাটা কিন্তু শুভ হলো না। তিনি প্রধান নির্বাচকের চেয়ারে বসার পর বাংলাদেশ টেস্টে শ্রীলঙ্কার কাছে চরমভাবে পর্যদুস্ত হলো।

টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে সিরিজে প্রায় সমানতালে লড়াই করে একটিতে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি অন্যটিতে ১-২ ব্যবধানে হারলেও টেস্টে একদম প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তুলতে পারেনি টিম বাংলাদেশ। ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে।

লঙ্কানদের দুর্দান্ত টিম পারফরমেন্সের বিপরীতে বাংলাদেশের যাচ্ছেতাই, শ্রীহীন ও অনুজ্জ্বল পারফরমেন্স ভীষনভাবে চোখে পড়েছে। একটা ডিপার্টমেন্টেরও পারফরমেন্স সেভাবে ভাল হয়নি। বিশেষ করে ব্যাটিং ছিল যাচ্ছেতাই রকমের খারাপ।

২ টেস্টে যেখানে লঙ্কানরা ৪ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, সেখানে টাইগার ব্যাটারদের ব্যাট থেকে একটি সেঞ্চুরিও আসেনি। ২ টেস্টের ৪ ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটারদের অর্জন বলতে সাকল্যে তিনটি ফিফটি। যার দুটি করেছেন মুমিনুল (৮৭ ও ৫১) আর অন্যটি মেহেদি হাসান মিরাজ (৮১)।

বলে রাখা ভালো, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দল গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর তৈরি করা। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড করেছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হাবিবুল বাশাররা। তবে লিপু প্রধান নির্বাচক হওয়ার পর টেস্ট স্কোয়াড সাজানোর আগে তার দুটি বুদ্ধিদীপ্ত ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত প্রশংসা কুড়িয়েছে অনেকেরই।

ক্রমাগত খারাপ খেলতে থাকায় লিপু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ থেকে লিটন দাসকে বাদ দিয়েছেন। আর উইকেটকিপার জাকের আলী অনিককে বিকল্প পারফরমার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দলে নিয়েছেন। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে দুটি ছোট্ট রদবদল করে দারুণভাবে ক্রিকেট অনুরাগিদের প্রশংসাধন্য হলেও তার হাতে সাজানো টেস্ট দলের পারফরমেন্সটা ভাল হয়নি একদমই।

প্রধান নির্বাচক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। আর তার হাতে করা দল প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই চরম ব্যর্থ, ভীষন অনূজ্জ্বল। বিষয়টা গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর জন্য খানিকটা বিব্রতকরও। তিনি টেস্ট দলের পারফরমেন্সটা কিভাবে দেখছেন? তার মূল্যায়ন, অনুভব বা উপলব্ধিই বা কী? লিপু কি চরম হতাশ?

আজ দুপুরে জাগো নিউজের কাছে নতুন প্রধান নির্বাচক এসব নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। জাগো নিউজ থেকে যখন তার কাছে ফোন যায় তখন তিনি আমেরিকান দূতাবাসে। বলার অপেক্ষা রাখে না, টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ডকাপের জন্য টিম বাংলাদেশের আজ আমেরিকান দূতাবাসে ছিল ভিসা ইন্টারভিউ।

এর মধ্যেও জাগো নিউজের সাথে মুঠোফোন আলাপে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।

তিনি অনেক হাই প্রোফাইল ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। তাই জাতীয় দলের এমন টেস্ট পারফরমেন্স দেখে হয়ত চরম হতাশ। তবে কথা-বার্তায় অনেক সতর্ক ও সাবধানী। আলাপের শুরুতেই বলে নিলেন, ‘এখন যেখানে আছি, সেখানে বসে বিস্তারিত আলাপ করা যাবে না। কথা বলবো। আমার অনুভব-উপলব্ধি নিয়ে আলাপ করবো। বিস্তারিত কথা হবে পরে।’

তারপরও অনেক কথাই বলেছেন এই সংক্ষিপ্ত সময়ে। সেখানে হতাশা ও আফসোসের চেয়ে তার অনুভব ও উপলব্ধির কথাই স্থান পেয়েছে বেশি।

সরাসরি কোন ডিপার্টমেন্ট এবং কারো নাম ধরে কোন মন্তব্যে না গিয়েও একটা টেস্ট সিরিজ নিয়ে নিজের মত জানানো যায়, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু কথা বলতে গিয়ে জাগো নিউজকে তাই বললেন। কথা বার্তায় পরিষ্কার, পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট ছাড়া আর কোন বিভাগের পারফরমেন্সে তিনি সন্তুষ্ট নন। তবে কাউকে তিনি আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি।

অভিজ্ঞ ও কুশলী লিপু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পারফরমেন্সটাকে নিবিঢ় পর্যবেক্ষণ করতে চান। এই হয়নি, সেই হয়নি, অমুকে পারেনি। তমুকে ব্যর্থ। এসব না বলে তিনি টেস্ট দলের বর্তমান অবস্থা, ভুল-ত্রুটি, ঘাটতি, সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করার দিকেই অধিক মনোযোগি হয়েছেন।

সে সঙ্গে এই খারাপ ও অনুজ্জ্বল পারফরমেন্সের কারণ অনুসন্ধান এবং তা কাটানোর সম্ভাব্য পথ বের করার দিকেই মূলতঃ তার চোখ। তাই ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং বিভাগ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে না গিয়ে তিনি উন্নতির পথ খোঁজার কথাই বলেছেন।

তারপরও তার মূল্যায়ন, ‘পেসাররা মোটামুটি উৎরে গেছে। তবে ব্যাটিংটা ভাল হয়নি একদমই। ওপেনিংয়ে সমস্যা, মিডল অর্ডারে কেউ লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। শুরু ভাল হয়নি। প্রথম সেশনে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া, সেখান থেকে ইনিংসটাকে নতুনভাবে সাজানোর কাজগুলো হয়নি।’

পুরো টেস্ট সিরিজে নিজ দলের পারফরমেন্সের পোস্ট মর্টেম করতে গিয়ে লিপুর কথার সারমর্ম হলো, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দেব কোথা?’ সরাসরি মন্তব্য না করলেও কথা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক বলে ফেলেছেন, দলে তামিম, মুশফিক আর রিয়াদের মত সিনিয়র ও অভিজ্ঞ পারফরমাররা ছিলো না। এই তিন অভিজ্ঞ, দক্ষ ও সিনিয়র ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিটাও তার চোখে পড়েছে। তাদের দলে ফিরিয়ে আনা যায় কি না? এবং সেটা কিভাবে? এমন চিন্তাও আছে তার।

তামিম, মুশফিক আর রিয়াদের বিকল্প হিসেবে যারা খেলেছেন, সেই জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয় ও শাহাদাত হোসেন দিপুদের নিয়েও তাই বলে কোন কটাক্ষ করেননি লিপু। তার কথা, ‘দলের তরুণরা ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম করেই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে।’ তাদের দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে হাত পাকানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন খুব প্রধান নির্বাচক।

তার সোজা কথা, ‘আমি টেস্টে যে অবস্থা দেখলাম, সেখান থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। শুধু ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ আর টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা মিলে এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবে না। এ জন্য দরকার একটা সমন্বিত কার্যক্রম।’

তিনি নিজে ক্রিকেট অপারেশন্স, হেড কোচ, সব কোচিং স্টাফ এবং ক্রিকেটারদের সাথে বসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। বলেছেন ‘আমাদের সামনে বেশ কিছু টেস্ট ম্যাচ আছে। কাজেই টেস্ট টিমের উন্নতির জন্য সবাই মিলে বসতে হবে। সবার কথা শুনতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট সবার সাথে বসে কথা বলতে চাই। উন্নতির পথ খুঁজে বের করতে চাই।’

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।