কোচ বানাতে চায়নি ভারতীয় বোর্ড, মিথ্যা বলছেন পন্টিং-ল্যাঙ্গাররা!

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৫ পিএম, ২৪ মে ২০২৪

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আর রাহুল দ্রাবিড় ভারতের হেড কোচ থাকছেন না। নতুন কোচ কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই। এর মধ্যে রিকি পন্টিং, জাস্টিন ল্যাঙ্গারের মতো অজি কিংবদন্তিরা জানিয়েছেন, তারা ভারতের কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

তবে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোর বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব জয় শাহ শুক্রবার যা বললেন, তাতে পন্টিং-ল্যাঙ্গাররা অপমানিত বোধ করতেই পারেন। জয় শাহর দাবি, বিসিসিআই ভারতের হেড কোচ হতে অস্ট্রেলিয়ার কোনো সাবেক ক্রিকেটারকে প্রস্তাব দেয়নি।

তিনি ইঙ্গিত দেন, ভারতের পরবর্তী কোচও হবেন একজন ভারতীয়, যিনি কিনা দেশের ক্রিকেট কাঠামো সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখবেন।

এক বিবৃতিতে জয় শাহ বলেন, ‘আমি কিংবা বিসিসিআই কখনই অস্ট্রেলিয়ার কোনো সাবেক ক্রিকেটারকে কোচিং করানোর প্রস্তাব দেইনি। কয়েকটি গণমাধ্যমে যা প্রতিবেদন এসেছে, তার পুরোপুরি অসত্য।’

পন্টিং এবং ল্যাঙ্গার দুজনই আইপিএলে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পন্টিং দিল্লি ক্যাপিটালস এবং ল্যাঙ্গার লখনৌ সুপার জায়ান্টসের কোচ।

কলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর এবং ভারতের সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীরও জাতীয় দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন বলে কয়েকটি প্রতিবেদনে এসেছে। আলোচনায় আছে চেন্নাই সুপার কিংসের হেড কোচ নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন ফ্লেমিংয়ের নামও।

জয় শাহ ইঙ্গিত দিলেন, ভারতের কোচ হবেন ভারতীয়ই। তার কথা, ‘আমাদের জাতীয় দলের জন্য সঠিক কোচ খোঁজা একটি সূক্ষ্ম এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রক্রিয়া। আমরা এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দিকে মনোনিবেশ করছি যারা ভারতীয় ক্রিকেট কাঠামো সম্পর্কে গভীর ধারণার অধিকারী এবং পদ-পদবির মাধ্যমে উঠে এসেছেন।’

এর আগে বৃহস্পতিবার রিকি পন্টিং বলেছিলেন, তাকে ভারতের কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার জীবনযাত্রার সঙ্গে সেটা মিলবে না বলে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।

আইসিসি রিভিউতে এক সাক্ষাৎকারে পন্টিং বলেন, ‘আমি এটা নিয়ে (কোচ হওয়া) অনেক রিপোর্ট দেখেছি। সাধারণত এসব বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে আসে, আপনিই হয়তো জানবেন না। তবে আমার সঙ্গে আইপিএলে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে; জানার জন্য যে আমি কতটা আগ্রহী।’

‘আমি জাতীয় দলের সিনিয়র কোচ হতে পছন্দ করব। তবে আমার জীবনে অন্য অনেক বিষয় আছে। বাড়িতেও আমি কিছু সময় দিতে চাই। সবাই জানে যে ভারতীয় দলের কোচ হলে আইপিএলে থাকতে পারবেন না। এটাও ভাবতে হয়।’

পন্টিং যোগ করেন, ‘এছাড়া জাতীয় দলের হেড কোচের চাকরি হলো বছরে ১০-১১ মাসের ব্যস্ততা। আমি যদি এটা করি, আমার লাইফস্টাইলের সঙ্গে মিলবে না। আমি যা করতে পছন্দ করি, তা করতে পারব না।’

তবে অস্ট্রেলিয়ার দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক জানান, তার ছেলে ফ্লেচার চায় বাবা চাকরিটা করুক। পন্টিং বলেন, ‘আমার পরিবার এবং বাচ্চারা গত পাঁচ সপ্তাহ আইপিএলে কাটিয়েছে। তারা প্রতি বছরই আসে। আমার ছেলেকে বলছিলাম-'বাবা, আমি তো ভারতের কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছি।' সে বলল-'এটা করো বাবা।' আগামী কয়েক বছর আমরা এখানে থাকলে ভালোই লাগবে। তারা এখানটা এবং ভারতের ক্রিকেট সংস্কৃতি এতটাই পছন্দ করে ফেলেছে। তবে এই মুহূর্তে আমার লাইফস্টাইলের সঙ্গে এটা মিলবে না।’

অস্ট্রেলিয়ার আরেক সাবেক ক্রিকেটার জাস্টিন ল্যাঙ্গার তো আরও চাঞ্চল্যকর কথা বলেছেন। লখনৌ সুপার জায়ান্টসের হেড কোচ জানান, তিনি তার দলের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাহুলের পরামর্শে তিনি ভারতের কোচ হওয়ার চেষ্টা থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিবিসির স্টাম্পড পডকাস্টে ল্যাঙ্গার বলেন, ‘এটি দারুণ একটি চাকরি। আমি এটাও জানি যে এটি একটি সর্বাঙ্গীণ ভূমিকা। অস্ট্রেলিয়ান দলে আমি চার বছর এই দায়িত্ব পালন করেছি। সত্যি বলতে, এটি ক্লান্তিকর। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার চাকরিকে আপনি কখনই না বলতে পারবেন না। এবং ভারতে এটি করার চাপ… আমি কেএল রাহুলের সাথে কথা বলছিলাম এবং সে বলেছিল, 'আইপিএল দলে যে চাপ এবং রাজনীতি আছে, সেটিকে কয়েক হাজার গুণ করুন। এটাই ভারতের কোচিং।’

ল্যাঙ্গার যোগ করেন, ‘মনে হয় এটা খুব ভালো উপদেশ ছিল। হয়তো চাকরিটা দারুণ। তবে এই মুহূর্তে এটা আমার জন্য নয়।’

এবার জয় শাহ যেন এই দুই অস্ট্রেলিয়ানকে ইঙ্গিতে খোঁচাই দিলেন। তিনি বলেন, ‘যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেন, ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচ হওয়ার মতো সম্মানজনক চাকরি আর হয় না। টিম ইন্ডিয়া বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় ফ্যান বেস পরিচালনা করে, সমর্থন উপভোগ করে যা সত্যিই অতুলনীয়। আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস, খেলার প্রতি অনুরাগ এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক চাকরি করে তোলে।’

‘এই ভূমিকায় এমন একজনকে দরকার, যার মধ্যে উচ্চস্তরের পেশাদারিত্ব আছে। যিনি কিনা বিশ্বের সেরা কিছু ক্রিকেটারকে দেখভাল করতে পারবেন এবং প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের একটি সাড়িতে নিয়ে আসতে পারবেন। এক বিলিয়ন সমর্থকের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা একটি বিশাল সম্মান। বিসিসিআই সঠিক প্রার্থীকেই বাছাই করবে, যিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম।’

এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।