কীভাবে সেদিন মেসিকে থামানোর পরিকল্পনা করেছিল ব্রাজিল!
![কীভাবে সেদিন মেসিকে থামানোর পরিকল্পনা করেছিল ব্রাজিল!](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/brazil-20220618173205.jpg)
ইতিহাসে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন ফুটবলার রয়েছেন, যারা প্রতিপক্ষের মনে সব সময়ই ভয় সৃষ্টি করে থাকেন। যাদের অন্যতম হলেন আর্জেন্টাইন ক্ষুদে ফুটবল জাদুকর, লিওনেল মেসি।
শারীরিকভাবে দেখলে হয়তো খুব একটা শক্তিশালী মনে হবে না মেসিকে। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির মাঝারি মানের হালকা গড়নের ফুটবলার তিনি। যাকে প্রথম দেখায় কারো মনে ভয় জাগারই কথা নয়।
কিন্তু মাঠে অপ্রতিরোধ্য। বল পায়ে তিনি যা করেন, তাতেই সারা বিশ্বের ডিফেন্ডাররা প্রচণ্ড ভয়ে থাকেন, কখন কী ঘটে যায়! কখন গোল হয়ে যায় কিংবা গোলের জন্য সহজ একটি বল তৈরি করে দেন তিনি! যার ফলে প্রতিপক্ষ খুব সহজেই পিছিয়ে পড়ে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ দৃশ্যটাই দেখে আসছে ফুটবল বিশ্ব।
তর্কাতীতভাবেই ফুটবলের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা যে ক’জন ড্রিবলার রয়েছেন, মেসি তাদের মধ্যে শীর্ষেই থাকবেন। ফুটবল পায়ে তার মধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র এতটাই কম যে, তাকে প্রতিপক্ষের ধারণ করা তথা থামিয়ে দেয়া এক কথায় অসম্ভব।
শুধু তাই নয়, সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ফুটবরার হলেন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফিনিশার, অসাধারণ প্লে-মেকার এবং তর্কাতীতভাবেই ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে নান্দনিক ফুটবলার।
ফুটবল মাঠে মেসির উপস্থিতি এবং তার মহত্ব এতটাই বেশি যে, মাঠে নামার আগে প্রতিপক্ষ দল তাদের প্রস্তুতিতে সমস্ত মনযোগই নিয়োগ করে তাকে নিয়ে। প্রতিপক্ষের চূড়ান্ত প্রস্তুতি থাকে, কিভাবে মেসিকে থামানো যাবে। কিভাবে মাঠে তার প্রভাব কমিয়ে রাখা যাবে- এসব নিয়ে।
ঠিক এ বিষয়টাই ঘটেছিল ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিল ফুটবল দলের ক্ষেত্রে। ওই ম্যাচটির জন্য ব্রাজিল যে প্রস্তুতি নিয়েছিল, যে ম্যাচটি ছিল বলতে গেলে পুরোপুরি মেসিময়, সেই প্রস্তুতির পুরো চিত্র উঠে এসেছে অ্যামাজন প্রাইমের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিতে। যেটার নাম দেয়া হয়েছে, ‘অল অর নাথিং: ব্রাজিল ন্যাশনাল টিম।’
এক ফুটবল ভক্ত সেই ডকুমেন্টারি থেকে বেশ কিছু ক্লিপ আবার কাটছাঁট করে নিয়েছেন এবং কম্পাইল করে নাম দিয়েছেন, ‘ক্ল্যাশ অব রাইভালস।’ সেই ভিডিও এপিসোডটা আবার তিনি পোস্ট করেছেন টুইটারে। যেটা দেখতে দর্শকদের কাছে সত্যিই খুবই আকর্ষণীয়।
ব্রাজিল কোচ তিতে সত্যিই আর্জেন্টিনা দলে মেসির উপস্থিতি নিয়ে ছিলেন খুবই চিন্তিত এবং সতর্ক। তিনি জানতেন, মেসিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি তার সমস্ত পরিকল্পনা, সমস্ত স্বপ্ন ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারেন এবং একই সঙ্গে ঘরের মাঠ থেকে লাতিন আমেরিকার সেরার ট্রফিটি জয়ের লক্ষ্য ভেস্তে দিতে পারেন।
এমনকি একটি সাক্ষাৎকারে তিতে একবার স্বীকারও করে নিয়েছিলেন যে, বর্তমান পিএসজি’র এই স্ট্রাইকার হলেন বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ফুটবলার।
I compiled some clips from the Amazon Prime documentary “All or Nothing: Brazil National Team.” These all come from the “Clash of Rivals” episode which is about the 2019 Copa América semi-final vs Argentina, the rivalry between the two nations and how Brazil planned to stop Messi pic.twitter.com/ex4HrjnbjH
— R (@Lionel30i) June 13, 2022
সেই সেমিফাইনালের আগে টিম মিটিংয়ে তিতের আলোচনার বিষয়ই ছিল, কিভাবে মেসিকে থামানো যাবে। এমনকি অনুশীলনের সময় তিনি পুরো দল নিয়ে মেসির সেই বিখ্যাত ট্রেড-মার্ক ফ্রি-কিক নিয়েও কাজ করেছিলেন। যে ফ্রি-কিক দিয়ে ওই ম্যাচের মাত্র কিছুদিন আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে লিভারপুলের জালে বার্সার হয়ে বল জড়িয়েছিলেন মেসি এবং ওই ম্যাচে লিভারপুলের গোলরক্ষক ছিলেন ব্রাজিলেরই অ্যালিসন বেকার।
অ্যামাজনের ডকুমেন্টারি থেকে সেই ভিডিওটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা দেখতে সত্যিই অসাধারণ।
মেসিকে কেন্দ্র করে ব্রাজিলের সেই প্রস্তুতির ফল কী হয়েছিল?
কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালের আগে মেসিকে কেন্দ্র করে নেয়া প্রস্তুতির পুরো ফল ঘরে তুলেছিল ব্রাজিল। বেলো হরাইজন্তের এস্টাডিও মিনেইরোয় সেই ম্যাচটি ছিল পুরোপুরি মেসিময়। অসাধারণ খেলেছিলেন মেসি। কিন্তু তাকে গোল করতে দেয়নি ব্রাজিল, গোল করাতেও দেয়নি।
প্রস্তুতিটা যেভাবে নিয়েছিল, সেটাকেই যেন পুরোপুরি কপিবুক পেস্ট করে দিয়েছিল ম্যাচের মধ্যে। মেসির ফ্রি-কিক কিভাবে ফেরাতে হয়, তার প্রস্তুতি যেভাবে নিয়েছিল সেভাবেই ম্যাচে ফিরিয়েছিল সেলেসাওরা। মেসিকে যেভাবে বক্সের মধ্যে আটকানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল, ম্যাচেও সেভাবে আটকে দিয়েছিল তারা।
উল্টো, ম্যাচের ১৯তম মিনিটে গ্যাব্রিয়েল হেসুস প্রথম এগিয়ে দেয় ব্রাজিলকে এবং ৭১ মিনিটে রবার্তে ফিরমিনো দ্বিতীয় গোল করে বসেন। ম্যাচ শেষ হয় ব্রাজিলের ২-০ গোলে জয়ের মধ্য দিয়ে। ফাইনালে মারাকানা স্টেডিয়ামে পেরুকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয় করে ব্রাজিল।
আইএইচএস/