‘ছোটনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৯:২৭ পিএম, ০৭ জুন ২০২৩

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের মন খারাপের শুরুটা অর্থের অভাবে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই পর্বে অংশ নিতে না পারা থেকে। এরপর নারী ফুটবলে একের পর এক নেতিবাচক খবর। একে একে দল ছেড়ে যাচ্ছেন সাফ জয়ী নারী ফুটবলাররা। শুরুটা হয় সাফজয়ী দলের আনুচিং মগিনি এবং সাজেদা খাতুনকে দিয়ে। ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার ক্ষোভে ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন দু'জনই।

এরপর গত ২৬ মে ফুটবল ছাড়ার ঘোষণা দেন সাফজয়ী স্বপ্না। একই দিনে দলের কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার ঘোষণা দেন গোলাম রব্বানী ছোটন। সেদিন থেকেই আলোচনায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। কেন একের পর এক ফুটবল ছাড়ছেন না তারা? এসবের উত্তর না পেতেই দু'দিন পর মায়ের অসুস্থতার কথা বলে দল ছেড়েছেন আরও নারী ফুটবলার আঁখি। তবে, তার মা সুস্থ হলে ফিরবেন বলে আশ্বাস দিয়ে গেছেন।

কেন বা কি কারণে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের এমন অবস্থা জানতে কথা হয় নারী ফুটবলের আঁতুড়ঘরখ্যাত কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক, নারী ফুটবল সংগঠক ও ময়মনসিংহ নারী ফুটবল দলের ম্যানেজার মালা রানী সরকারের সাথে। তিনি ক্ষোভ ঝাড়লেন ফুটবল ফেডারেশন কর্মকর্তা ও নীতি-নির্ধারক প্রতি।

তিনি বলেন, ‘গোলাম রব্বানী ছোটন ছিল আমাদের আস্থায় জায়গা। আমরা যারা তৃণমুলে নারী ফুটবল নিয়ে কাজ করি, আমরা তার উপরেই নির্ভরশীল ছিলাম। মেয়েদের ফুটবল খেলায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধতকা আছে। তার সব কিছু সামলেই গোলাম রব্বানী এগিয়ে যাচ্ছিলেন। সে ফুটবলার মেয়েদের বাবার মত ছিল। তেমন মনমানসিকতা নিয়ে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতেন। মেয়েরা তার কাছে থাকলে আমরা শতভাগ নিশ্চিত থাকতাম যে আমাদের মেয়েরা নিরাপদে আছে। কারণ, সবার আগে আমরা মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবি। সেদিক থেকে গোলাম রব্বানী ছোটনের উপর আমরা আস্থা রাখতে পারতাম। তার পদত্যাগে সে আস্থার জায়গাটা হারিয়েছে এবং নারী ফুটবল দলের জন্য এটা একটা অশনি সঙ্কেত।’

মালা সরকার আরও বলেন, ‘মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নসহ যত সাফল্য আছে তার পুরোটাই ছোটনের হাত ধরেই এসেছে। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে টিমটাকে সুন্দর একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। যে কারণে আমরা এখন বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখি। এ অবস্থায় তার পদত্যাগ আমরা তৃণমুলে যারা সংগঠক ছিলাম তাদেরকে ভাবাচ্ছে।’

এই ফুটবল সংগঠক বলেন, ‘দেশে ছেলেদের ফুটবল খেলায় তেমন কোন অর্জন নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় আজকে ফুটবলে মেয়েদের জয়জয়কার। এই জয় শুধু ফুটবল খেলাতেই নয়, এই জয় নারী জাগরনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। মেয়েরা ফুটবল খেলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে। তারা দেখিয়েছে বাংলাদেশেও মেয়েরা অনেক এগিয়ে। যার কারণে আমাদের এত পাওয়া। সে পদত্যাগ করল ফুটবল ফেডারেশন বা নীতিনির্ধারকরা কেন ফেরালো না? তার পদত্যাগ দেশের নারী ফুটবল দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ, তার মতো কোন গোলাম রব্বানী তৈরি হয়নি, তৈরি হবেও না। তার পদত্যাগে আমরাই ভরসা পাচ্ছি না যে, মেয়েদের কার হাতে দেব। ছোটনের পদত্যাগের পর মেয়েরা মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।’

‘আমি মনে করি গোলাম রব্বানী ছোটনের পদত্যাগে ফুটবল ফেডারেশনের চরম অবহেলা আছে। তার পদত্যাগের পর সভাপতি বলেছেন, ম্যারাডোনা নেই মেসি আসছেন আবার মেসি চলে যাবেন, এটাই তো নিয়ম’ এমন বক্তব্য অবশ্যই তাকে (ছোটন) অপমানের শামিল।’

মালা সরকার আরও বলেন, ‘যেদিন তিনি পদত্যাগ করেছেন, সেই দিনও আমি তার সাথে ফোনে কথা বলেছি। প্রায়ই তার সাথে কথা বলে মেয়েদের খোঁজখবর নিয়েছি, তিনিও আমাদের কলসিন্দুরের নতুন ফুটবলার মেয়েদের খবর নিয়েছেন। তার প্রতি আমাদের আস্থা ছিল, আমাদের মেয়েরা যেখানেই থাকুক, তারা নিরাপদে আছে ভাবতাম।’

তিনি বলেন, ‘ফেডারেশনের অনেক কিছুই তো আমরা জানি না। হয়তো এমন কিছু হয়েছে, যে কারণে সাফজয়ী মেয়েরা একে একে দল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কি কারণে চলে যাচ্ছে বা কি হয়েছে তা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে পরিস্কার করে কিছু বলছেও না।’

অধ্যাপক মালা সরকার বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যেমন দেশের সকল বুদ্ধিজীবিদের ধরে নিয়ে হত্যা করেছে, যেন দেশে কোনো বুদ্ধিজীবি না থাকে। আমার মনে হয় ঠিক তেমনি গোলাম রব্বানী ছোটনকেও পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে, কিংবা পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ার মতো এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।’

‘আমরা তো জানি না, যে ফুটবল ফেডারেশন কি কি দুর্নীতি হচ্ছে। যেসব দুর্নীতির কথা শুনছি বা দেখছি এতে ওনারা চাচ্ছেন কিনা দেশের নারী ফুটবল ধ্বংস হয়ে যাক!’ এমন কোনো ষড়যন্ত্র হতেও পারে বলেও জানান তিনি।

মঞ্জুরুল ইসলাম/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।