‘টাকার অভাবে ক্যানসার আক্রান্ত বাবার চিকিৎসা করাতে পারিনি’

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:০৫ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪

সাজ্জাদ হোসেনের জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দিয়ে। ওই বছর বাংলাদেশের ৬ ম্যাচের সবগুলোই খেলেছেন চট্টগ্রাম পটিয়ার এই ফুটবলার। গোলের খাতাও খুলেছিলেন ওই বছরের শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে। কাঠমান্ডুতে স্বাগতিকদের কাছে ৩-১ গোলের হারের ম্যাচে বাংলাদেশের একমাত্র গোলটি ছিল তার।

এরপর জাতীয় দলে তার আর খেলা হয়নি। ২৩ জনের স্কোয়াডেও রাখেননি স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। তবে আবার জাতীয় দলে ফিরতে মরিয়া ২৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। চলতি মৌসুমে ৪ গোল করেছেন।

সর্বশেষ জোড়া গোল করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্সের বিপক্ষে দলকে জিতিয়েছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের এই ফরোয়ার্ড।

আবার জাতীয় দলে ফেরার লক্ষ্য, নিজের কঠিন পরিশ্রম করে এ পর্যন্ত আসার গল্প এবং বিনা চিকিৎসায় ক্যানসার আক্রান্ত বাবার মৃত্যুকাহিনী নিয়ে সাজ্জাদ হোসেন কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে।

জাগো নিউজ: ৬ ম্যাচ খেলেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন। ২০২৩ সালে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে দেওয়া হয়নি। নতুন বছরে জাতীয় দলে ফিরতে কতটা আত্মবিশ্বাসী আপনি?

সাজ্জাদ হোসেন: আমি ২০২২ সালে জাতীয় দলে ৬ ম্যাচ খেলেছি। এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের জন্য কোচ আমাকে ডেকেছিলেন। মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে আমার জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল। আমি আবার জাতীয় দলে ফিরতে চাই এবং ফিরতে পারবো বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।

জাগো নিউজ: জাতীয় দলের জার্সিতে আপনার গোল আছে?

সাজ্জাদ: ৬ ম্যাচে একটি গোল করেছি। ২০২২ সালের শেষ ম্যাচ ছিল সেটি। নেপালের বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ৩-১ গোলে হেরেছিলাম। দলের একমাত্র গোলটি করেছিলাম আমি।

জাগো নিউজ: ২০২৩ সালে তো আর আপনাকে কোচ ক্যাবরেরা ডাকেননি। এখন ২০২৪ সাল। কি লক্ষ্য আপনার?

সাজ্জাদ: গত বছর ভারতের বেঙ্গালুরুতে হওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ৩০ জনের ক্যাম্পে ছিলাম। তবে চূড়ান্ত দলে আমি সুযোগ পাইনি। এখন আমার লক্ষ্য ঘরোয়া ফুটবলে ভালো পারফরম্যান্স করে আবার কোচের নজরে আসা এবং জাতীয় দলে ফেরা।

জাগো নিউজ: চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে জোড়া গোল করেছেন ব্রাদার্সের বিপক্ষে। এই মৌসুমে কয়টা গোল হয়েছে আপনার?

সাজ্জাদ: ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপে একটি করে গোল করেছি। লিগে হয়েছে দুটি। এখন পর্যন্ত আমার ৪ গোল হয়েছে। আরো গোল করে জাতীয় দলে ঢোকার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই।

জাগো নিউজ: ফুটবল ক্যারিয়ার এ পর্যন্ত আসতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে আপনাকে। সংক্ষেপ করে যদি ফুটবল ক্যারিয়ারের একটু বর্ণনা দিতেন!

সাজ্জাদ হোসেন: আমি চট্টগ্রামের পটিয়ার ছেলে। সেখানেই ফুটবল খেলতাম ব্রাদার্সের মাঠে। ২০১৫ সালে আমি ঢাকা দ্বিতীয় বিভাগ লিগে কদমতলা সংসদে খেলি। ওই সময় চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে পটিয়া উপজেলা ফুটবল ক্লাবের একটি প্রদর্শণী ম্যাচ হয়েছিল। আমার খেলা দেখে চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যানেজার আরমান আজিজ ভাই আমাকে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে খেলার সুযোগ করে দেন। সাইফ প্রিমিয়ার লিগে ওঠে। ২০১৭ সাল থেকে আমি ২০২২ সাল পর্যন্ত সাইফে খেলে যোগ দিয়েছিলাম মোহামেডানে। গত মৌসুম মোহামেডানে কাটিয়ে এবার এসেছি শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে।

জাগো নিউজ: আপনার পরিবারে কে কে আছেন?

সাজ্জাদ: আমরা দুইভাই এক বোন। বোন সবার বড়। তার বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা মারা গেছেন ২০১৭ সালে। এখন মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে থাকি।

জাগো নিউজ: আপনার বাবার কি হয়েছিল?

সাজ্জাদ: আমরা পারিবারিকভাবে তেমন স্বচ্ছল ছিলাম না। বাবা ছোটোখাটো ব্যবসা করতেন। তারপর তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হলে ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। টাকার অভাবে আমরা বাবাকে চিকিৎসা করাতে পারিনি। তিনি ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল মারা যান।

জাগো নিউজ: তখন তো আপনি প্রিমিয়ার লিগে খেলেন তাই না?

সাজ্জাদ: হ্যাঁ। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আমার অভিষেক হওয়ার আগেই বাবা মারা যান।

জাগো নিউজ: এখন আপনার পরিবার দেখভালের পুরো দায়িত্ব তো আপনার। কিভাবে চালাচ্ছেন?

সাজ্জাদ: হ্যাঁ। বড় ছেলে হিসেবে পরিবার আমাকেই দেখভাল করতে হয়। ছোট ভাইকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। এখন দেশে ফেরত এনেছি। গ্রিল তৈরির একটা দোকান দিয়ে দিয়েছি। সেই ব্যবসাই দেখছে। প্রিমিয়ার লিগে খেলে আল্লার রহমতে ভালোই পারিশ্রমিক পাই। দুই ভাইয়ের আয়ে সংসার চলে। বাবার চিকিৎসার দরকারের সময় আমাদের হাতে টাকা ছিল না।

জাগো নিউজ : মার্চে তো জাতীয় দলের ম্যাচ আছে। আপনার চোখ নিশ্চয়ই ওই দুই ম্যাচের দিকে?

সাজ্জাদ: হ্যাঁ। একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমি কখনো আশা ছাড়িনি। আগামী মার্চে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুটি ম্যাচ আছে। ওই দুই ম্যাচের ক্যাম্পে ডাক পাওয়ার জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। ক্যাম্পে ডাক পেলে আবার জাতীয় দলে ফেরার পথ তৈরি হবে।

জাগো নিউজ : ধন্যবাদ।
সাজ্জাদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।