কোহলি বনাম আমির : ব্যাটম্যান বনাম সুপারম্যান


প্রকাশিত: ০৪:৫৯ পিএম, ১৮ মার্চ ২০১৬

ফোনের সিম রাতারাতি বদলে ফেলা। পরিচিত আস্তানার বদলে হঠাৎ তৈরি হয়ে যাওয়া গোপন ডেরা৷ লুকিয়ে হাতে হাতে টিকিট ভরা খাম বদল৷ এমনই তো হওয়ার কথা ছিল৷আগামীকাল সন্ধ্যায় ইডেনে ঢোকার লাইসেন্স পেতে ক্রিকেট ভক্তরা জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে তৈরি হয়ে যাচ্ছে৷ এও বলছে, টিকিট কোথায় যাচ্ছে বা কীভাবে যাচ্ছে, জানার জন্য নারদ টিভির আর একটা স্টিং অপারশেন দরকার ছিল!

এই না হলে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান! ইডেনে এর আগে দুই প্রতিবেশীর চারটে ওয়ানডে ম্যাচেই পাকিস্তান জিতেছে, এটা স্রেফ একটা তথ্য মাত্র। ঠিক তেমনই ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের ১০-০ জিতে থাকার রেকর্ডেরও কোনও মানে নেই৷ কাল ইডেনের মহাযুদ্ধের ক্রিকেটীয় বিচারে এসব ছুটকো-ছাটকা কালীপটকা হতে পারে, মোটেই চকোলেট বোম নয়৷

যুদ্ধটা আসলে ভারতীয় ব্যাটিং বনাম পাকিস্তানি বোলিংয়ের৷ গত এক দশক ধরেই যা এই ম্যাচের চিরাচরিত ট্র্যাডিশন৷ ওয়াঘার এপার ব্যাট করবে, ওপার বল হাতে লড়ে নেবে৷ মাত্র কয়েকদিন আগে ঢাকায় এশিয়া কাপের ম্যাচে তো তা-ই হয়েছিল৷ সহজ কথায়, বিরাট কোহলি বনাম মোহাম্মদ আমির৷ এই যুদ্ধটাই সম্ভবত ঠিক করে দিতে যাচ্ছে ইডেন ম্যাচের ভবিষ্যৎ৷ নাগপুরে ওভাবে কিউইদের কাছে ভরাডুবির পরে পাকিস্তান ম্যাচ বিরাটদের কাছে মরণ-বাঁচনের৷ হারলেই টুর্নামেন্ট থেকে ছুটি ঠেকানো প্রায় অসম্ভব৷ সেখানে পাকিস্তান হেলায় বাংলাদেশকে প্রথম ম্যাচটায় উড়িয়ে দিয়ে অনেক স্বস্তিতে৷ ইডেনে হারলেও টুর্নামেন্টে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকছে৷ সে দিক দিয়ে ফুরফুরে হয়ে খেলার কথা আমেরদেরই৷

এশিয়া কাপে পাকিস্তান ম্যাচে আমের শুরুতে রোহিত, রাহানে আর রায়নাকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরে সবুজ উইকেটে মোহাম্মদ আমিরের ওই ভয়ঙ্কর স্পেল সামলে ভারতকে উতরে দিয়েছিলেন বিরাট৷ বিরাটের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার বলছে, যে সব ম্যাচে ৩০ বা তার বেশি রান করেছেন, তার ৭৫ শতাংশ ম্যাচ ভারত জিতেছে৷ আবার খারাপ দিকটা হল, দলে তৈরি হয়ে গিয়েছে একটা বিরাট নির্ভরতা৷ ধরেই নেওয়া হচ্ছে, বিরাট একা টেনে দেবেন আর ড্যাং ড্যাং করে জিতে যাবে ভারত৷ ঠিক যেমন নয়ের দশকের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে এই অনন্ত প্রত্যাশার চাপটা নিতে হত শচীনকে৷ এই তো এ দিনই দিল্লিতে বসে স্টিভ ওয়াকে বলতে হয়েছে, বিরাট তাকে শচীনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন৷

কোনোদিন বিরাট ফেল করলে মিডল অর্ডারে যুবরাজ ধরবেন, এই নিশ্চয়তা তার বাবা যোগরাজ সিংও দিতে পারবেন না৷ এই যুবরাজ কিছুতেই পুরোনো যুবরাজ নন৷ একা ম্যাচ টেনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই৷ দল ১২ ওভারে ৯৫-২ থাকলে রায়না যেমন খেলেন, সেটাই ১২-২ হলে হয় না৷ ফ্ল্যাট উইকেট না পেলে প্রেসার সিচ্যুয়েশনে চাপ নেওয়ার ক্ষমতা এখনও হার্দিক পাণ্ডের হয়নি৷ জেমস ফকনার হতে গেলে এখনও বহু রাস্তা যেতে হবে৷ আর রবীন্দ্র জাদেজা শেষ দু’বছরে এই ফর্ম্যাটে ব্যাট হাতে কিছু করেছেন বলে অভিযোগ নেই৷

মানে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে, উপরে বিরাট, নীচে ধোনি৷ পাওয়ার প্লে’র প্রথম চার ওভারের মধ্যে রোহিত বা শিখরের মধ্যে একজনকে ফেরাতে পারলেই আমের সামনে পাবেন বিরাটকে৷ অফ স্টাম্পের ঠিক বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকে আসা মারাত্মক একটা ইনসুইঙ্গার আছে তার৷ ধরে নেয়া হচ্ছে, শুরুতে দুটো ওভার করবেন আমের, উইকেট পেলে হয়তো তিনটে৷ ওই সময়টা একটা আনপ্লেয়েবল ডেলিভারিতে বিরাটকে তুলে নেওয়া মানেই অ্যাডভান্টেজ পাকিস্তান৷ আর উল্টোটা হলে ভারত৷

রেকর্ড বলছে, শিখর, রোহিত, বিরাট বা রায়না, বা-হাতি পেসারের বিরুদ্ধে কারও রেকর্ড গোটা ক্যারিয়ারে আহামরি নয়৷ তা সে মিচেল জনসনই হোন বা ওয়াহাব রিয়াজ বা বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান৷ ইডেনে বিশ্বকাপের উইকেট মোটেই এশিয়া কাপের মতো সিমিং হয়নি৷ পেস থাকবে, কিন্তু উইকেটে বল নড়ার সম্ভাবনা নেই৷ তবু সামলাতে হবে বা-হাতি পেসারদের কোণাকুণি ডেলিভারিগুলো৷

শুধু তো একা আমের নন, সঙ্গী বাকি দুই বাঁ হাতি মোহাম্মদ ইরফান আর ওয়াহাব রিয়াজও৷ বিরাট কেন, দুনিয়ার যে কোনও ব্যাটসম্যানের কাছে প্রথম ছ’টা বল খেলা সবচেয়ে বিপজ্জনক৷ ম্যাথু হেইডেন যেমন বলেন, ‘যে যত বড় ব্যাটসম্যানই হোক, প্রথম বলটা সব সময় ঝুঁকির৷ আর ছ’টা বল খেলতে পারলে ভালো ব্যাটসম্যানের উইকেটের চরিত্র নিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায়৷’

বিরাট যে স্বপ্নের ফর্মে আছেন, প্রথম ১০টা বল সামলে দেওয়া মানে বড় ইনিংস প্রত্যাশিত৷ আর সেটাই হবে ভারতের ম্যাচে টিকে থাকার প্রাণভোমরা৷ গত এক বছরে শরীর থেকে দূরে ঠেলার প্রবণতা অনেকটা ছেঁটে ফেলে ব্যাটসম্যান হিসেবে চান্স ফ্যাক্টর অনেকটা কমিয়ে এনেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের গ্ল্যামার বয়৷ দু’বছর আগে ঢাকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে অসাধারণ ইনিংস খেললেও তাঁর টিম চ্যাম্পিয়ন হয়নি৷

আর এবার শুরুতেই নাগপুরে এমন একটা ধাক্কা, যেখানে ইডেনে শনিবারের ম্যাচ তার ও গোটা দলের কাছে অন্য একটা মাত্রায় আবির্ভূত৷ ধারে ও ভারে বা সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে ভারত এগিয়ে থাকতে পারে, কিন্তু তা দিয়ে এই হাই-ভোল্টেজ ম্যাচকে মাপতে যাওয়া মুর্খামি৷ এমন ম্যাচে বিরাট বনাম আমেরের মতোই লুকিয়ে থাকবে অনেক টুকরো টুকরো ম্যাচ৷ হাফিজ বনাম অশ্বিন, নেহরা বনাম শেহজাদ৷ তবে সেগুলোতে চিরস্থায়ী রাইভ্যালরির সম্ভাবনা কম৷ সেটা বিরাট বনাম আমিরেই থাকছে৷ ওয়াঘার ওপারের (পাকিস্তান) বিষাক্ত বাম হাত বনাম এপারের (ভারত) পরিত্রাতা৷ কেউ কেউ তো বলে দিচ্ছেন ব্যাটম্যান বনাম সুপারম্যান লড়াই।

আইএইচএস/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।