কনটেন্ট ক্রিয়েশনে ১০টি ভুল ধারণা

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ০১ জুন ২০২৫
সোশ্যাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট মুন্সী এনায়েত

মুন্সী এনায়েত

ফেসবুক মনিটাইজেশন নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন, বলা যায় দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রায় ৫০ শতাংশই চেষ্টা করছেন অনলাইন থেকে উপার্জন করতে।

বিজ্ঞাপন

এখানে শুধু উপার্জনই মুখ্য নয়, সমাজে পরিচিত হওয়ারও ইচ্ছা অনেকাংশে উৎসাহী করে তুলছে। আপনারা যেসব বিষয় প্রথমেই ভুল করেন এবং যা করবেন তার ছোট একটি গাইডলাইন দেওয়া হলো-

১. উইকলি চ্যালেঞ্জ: এটা নিয়ে অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েন, এটি আসলে আপনার কনটেন্ট ক্রিয়েশন যাত্রায় কোনো প্রভাবই ফেলবে না। এটাকে রিসেট করা যায়। এই চ্যালেঞ্জের টার্গেট ইচ্ছামতো সাজানো যায়। তাই এটি আপনার কাজের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ মাত্র। এটি পূরণ করলে রিচ বাড়বে এমন কোনো বিষয় যুক্ত নয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

২.স্টার গ্রহণ ও প্রদান: অনেকে প্রথমেই ভাবছেন স্টার মনিটাইজেশন পেয়ে গেছি, দুনিয়া জয় করে ফেলেছি। আসলে স্টার মনিটাইজেশনই একটি স্ক্যাম ছাড়া কিছুই মনে হয়নি। ১০০ স্টারে এক ডলার আর স্টারের ইনকাম ১০০ ডলার হলেই তবে পেমেন্ট দেবে। এতে ৯৯ শতাংশ মানুষই কখনোই স্টারের পেমেন্ট পায় না। বরং এই জিনিস চেয়ে ভিডিও বানিয়ে, স্ট্যাস্টাস দিয়ে আপনি আপনার ব্যক্তিত্ব ছোট করছেন।

৩. গঠনমূলক কমেন্ট: অনেকেই গঠনমূলক কমেন্টের আড়ালে নিজের পোস্টে কমেন্ট বাড়িয়ে নেওয়ার ধান্দা চালু করেছে। এটিও এক ধরনের প্রতারণা। এটি অনেকটা এমএলএম কোম্পানির মতো কাজ করে। যার ফলোয়ার একটু বেশি তারাই লাভবান হয়। ছোট ও নতুন ক্রিয়েটররা মৌমাছির মতো মধু সংগ্রহ করে রানি মৌমাছি খায়। আপনি কোথাও মন চাইলে কমেন্ট করবেন না মন চাইলে করবেন না, এতে আপনার এই যাত্রায় কোনো সমস্যা হবে না। কমেন্ট করলে, একটি উপকার হয় কিছু লোক বাড়ে, যাদের সাথে আপনার সম্পর্ক তৈরি হয়। একটা কমিউনিটি বাড়ে, সেটিও ভিউ বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর যাত্রায় বড় কোনো প্রভাব ফেলে না।

৪. ইনভাইটেশন: ফেসবুক পোস্টে যারা লাইক দিয়েছে তাদের ইনভাইট করে ফলোয়ার বানাতে বলে। এটির নোটিফিকেশন দিলেও এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে না। আর অনেকেই পেজ খুলেই সব বন্ধুকে ইনভাইট পাঠায়। বন্ধু তালিকায় অনেকেই লজ্জার খাতিরে লাইক দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিরক্ত হন। শুরুতে কারওই কনটেন্ট খুব একটা ভালো হয় না, তাই কাছের লোকজন অল্প দেখেই স্কিপ করে এতে রিটেনশান কমে যায়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তার জন্য উপকারের পরিবর্তে ক্ষতিই বেশি হয়। ফেসবুক-ইউটিউবের অ্যালগরিদম কাজই করে এই রিটেনশানকে নিয়ে। একটি পোস্ট বা ভিডিওতে দর্শক কতটুকু সময় দিচ্ছে সেটিকেই বলে রিটেনশান। ইনভাইট করেও নিষেধ, তাহলে নতুন পেজে ভিউ কেমনে আসবে? ফেসবুক-ইউটিউবের অ্যালগরিদম এমন, কোনো লাইক ফলোয়ার না থাকলেও মানুষের সামনে পাঠায়। যে কনটেন্ট যে ধরনের মানুষের প্রয়োজনীয় তাদের কাছে পাঠায়, এরপর মানুষ পছন্দ করলে ভাইরাল হয়। তাই আপনার কাজ শুধুই কনটেন্টের মান নিশ্চিত করা। বাকিটা প্ল্যাটফর্মগুলোই দেখবে।

৫. লাইভ: কোনো কারণ ছাড়াই লাইভে আসবেন না। বিশেষ কোনো ইভেন্ট বা প্রয়োজনে আসবেন। এতেও অডিয়েন্স বিরক্ত হয়। আপনার কাজ বিরক্ত করা নয়। কেউ লাইভে গেলে ফলোয়ারদের কাছে নোটিফিকেশন যায়। তারা নোটিফিকেশন ক্লিক দিয়ে দেখতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু না পেলে ফিরে আসে।

৬. প্রোফেশনাল মুড: যদি কনটেন্ট ক্রিয়েশন আপনার পেশা হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছা থাকে কখনোই আইডিকে প্রোফেশনাল মুড করবেন না। আইডির রিচ একটি নির্দিষ্ট পরিসরে হয় কিন্তু পেজের রিচের কোনো সীমাবদ্ধতা নাই। খুব অল্প কিছু আইডিই দেখবেন ভালো রিচ আছে। চেষ্টা করবেন পেজ নিয়ে কাজ করতে।

বিজ্ঞাপন

৭. হুক তৈরি: একটি কনটেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রথম ৩ থেকে ১০ সেকেন্ড। একটি ভিডিওর দৈর্ঘ্যের ওপর হুক নির্ভর করে। ছোট ভিডিওর হুক ছোট হবে আর বড় ভিডিওর বড়। এই অংশে আপনি আপনার ভিডিওর চুম্বকাংশ দেবেন। এবং ভিডিওতে দর্শক কী কী তথ্য জানতে পারবে ধারণা দেবেন। এতে দর্শকের আগ্রহের জায়গা থাকলে পুরোটা দেখবে আর আগ্রহের বিষয় না হলে আগেই চলে যাবে।

৮. থাম্বনেইল ও টাইটেল: একটি ভিডিওতে প্রথমেই দর্শক ক্লিক করে থাম্বনেইল দেখে। আপনি আপনার ভিডিওর মূল বিষয় থাম্বনেইলে তুলে আনবেন এবং বিষয় সংক্রান্ত একটি সুন্দর টাইটেল দেবেন। আপনি আকর্ষণীয় করতে গিয়ে ক্লিকবেট করবেন না। এমন বিষয় যুক্ত করে থাম্বনেইল বানাবেন না যে মানুষ ভিডিও দেখে মনে প্রতারিত হয়েছে। তাহলে আপনার দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। পরবর্তী ভালো থাম্বনেইল দিলেও তারা ক্লিক দেবে না।

৯. ভিডিও দৈর্ঘ্য: একটি ভিডিও কত মিনিটের হবে বা কত মিনিট বানাবো? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন নিয়মিতই হতে হয়। বর্তমানে ছোট ভিডিও বা রিলস ভালো চলছে। আবার বড় ভিডিও বানাতে পারেন। যে ভিডিও বানান না কেন আপনি নিজের ভিডিও আগে কয়েকবার দেখবেন দর্শক হিসেবে। দেখবেন কোথায় গিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, সেই অংশ বাদ দেবেন। আপনি মনে রাখবেন আপনার ভিডিওর নিচে অসংখ্য ভিডিও অপেক্ষা করছে আর দর্শকের আঙুল বারবার মস্তিষ্ককে সংকেত দিচ্ছে ওপরে স্ক্রল করার জন্য। আপনাকে দর্শককে আটকাতে হবে।

বিজ্ঞাপন

১০. কেমন ভিডিও বানাবেন: আপনার যে বিষয়ে আগ্রহ আছে এবং যেটি আপনার কাছে সহজলভ্য সেটি নিয়ে করবেন। আপনি ভালো ইংরেজি জানেন, মানুষকে ইংরেজি শেখানো শুরু করেন। অথবা আপনি একজন রাজমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি কীভাবে কাজ করেন, কী কী জটিলতা আছে এবং কাজের সহজ উপায় বের করে জানানো। দুনিয়ার যত ধরনের কাজ আছে তা থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। নতুনরা শিখতে চায়, তারা আপনাকে শিক্ষক হিসেবে বেছে নেবে। আপনি ভালো গান কিংবা কৌতুক, অভিনয় জানলে শুরু করেন। আপনি যে বিষয়ে কনটেন্ট বানাবেন, ওই ব্যাপারটাতে আপনার দক্ষতা থাকতে হবে।

বর্তমানে যে লাইক চাওয়া, স্টার চাওয়ার যে কনটেন্ট আসলেই এটি কোনো কনটেন্ট নয়। নিজেরাই দেখে নিজেদের ভিডিও, নিজেরাই করে কমেন্ট। এটি করে একটি সময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং বাদ দিয়ে দেন অনেকেই। পরিশেষে এইটুকুই বলবো, শুধু কনটেন্টে ফোকাস করুন। প্রতিনিয়ত নিজেকে ভাঙুন, কনটেন্টের মান বাড়ান। সবকিছু এমনিতেই আপনার কাছে এসে ধরা দেবে।

লেখক: সোশ্যাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট

বিজ্ঞাপন

বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।