নেক্সক্রাফট ও শাহরিয়ার খানের সফলতা

রুবেল মিয়া নাহিদ
মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান। পেশায় একজন তথ্য প্রযুক্তিবিদ। শৈশব কেটেছে ঢাকার আজিমপুর ও ঢাকা কলেজ এলাকায় দুরন্তপানা ও কল্পনার বীজ বুনে। বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ একজন সফটওয়্যার ব্যবসায়ী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন। এছাড়াও অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে আছে টেলিকম, ব্যাংক ও সফটওয়্যার ফার্ম। সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করার সময় বিভিন্ন প্রজেক্টে ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করেছেন। পরিবর্তনকে ছোটবেলা থেকেই নিজের করে নিতেন বলেই হয়তো হতে পেরেছেন একজন উদ্যোক্তা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সেইসঙ্গে নীরবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা কমিউনিটি ডেভেলপ করার। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি খুব ছোট আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত সংগঠন ‘ই-ক্লাব’ (এন্ট্রাপ্রেনিউরস ক্লাব অব বাংলাদেশ লিমিটেড), যেখানে বর্তমানে ৫০০ এর বেশি উদ্যোক্তাদের সামনে থেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি মনে করেন অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় চাবিকাঠি হলো সফল উদ্যোক্তা তৈরি।
উদ্যোক্তা জীবনের সঙ্গে সঙ্গে পেয়েছেন কিছু সামাজিক স্বীকৃতিও, ২০১৭ সালে পেয়েছেন ‘বেস্ট সোশ্যাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০১৮ সালে পেয়েছেন ‘নবীন উদ্যোক্তা সম্মাননা’। নবীনদের এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ মেন্টরিংয়ের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এমপির কাছ থেকে ‘মেন্টর বিহাইন্ড ২০২১’ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও গত ২৪ মার্চ ২০২২ তারিখে ‘গ্লোবাল ইয়োথ পার্লামেন্ট’ নেপালের আয়োজনে ‘নেক্সট জেনারেশন ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ এ মনোনীত হয়ে নেপাল ভ্রমণ করেছেন। ‘গ্লোবাল ইয়োথ পার্লামেন্ট’ গত কয়েক বছর ধরে সারাবিশ্বে যারা ইয়ুথ ও ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে কাজ করে তাদেরকে সম্মাননা প্রদান করে থাকে। এ বছর এন্ট্রাপ্রেনিউরস ক্লাব অব বাংলাদেশে ইয়োথদের এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নিয়ে কাজ করার সুবাদে তাকে মনোনীত করা হয়।
তিনি শুধু সামাজিক সংগঠন ই-ক্লাবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করছেন না, নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সময় যে বাধাগুলো পেয়েছিলেন সেগুলো নিয়েও কাজ করছেন। বাধাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বাংলাদেশে উদ্যোক্তা সহায়ক তেমন কোনো বই না পাওয়া। তাই নিজের ব্যবসার পাশাপাশি উদ্যোক্তা বা উদ্যোগ নিয়ে বই লেখার চেষ্টা করছেন। তার প্রথম বই ‘উদ্যোক্তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ ২০১৯ সালের একুশে বইমেলায় এবং দ্বিতীয় বই ‘বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ইকোসিস্টেম ও ভবিষ্যৎ’ ২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। একজন উদ্যোক্তার উদ্যোগী মনোভাবের গুণাবলি বিশ্লেষণ করেছেন প্রথম বইয়ে।
নিজে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হয়েছিলেন বলেই হয়তো সাহস করে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা করেছিলেন। বর্তমানে তিনি তার নিজের প্রতিষ্ঠান নেক্সক্রাফট লিমিটেডের এর সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন যেখানে ৪০ জনের বেশি মেধাবী তথ্য প্রযুক্তিবিদের একটি টিম পরিবারের মতো কাজ করছে। নেক্সক্রাফট মূলত আন্তর্জাতিক মানের একটি সফটওয়্যার কোম্পানি যা দেশের স্বনামধন্য কিছু কর্পোরেট ও ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির টেকনোলজি পার্টনার হিসেবে প্রযুক্তি সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিজেও একজন প্রিন্স টু প্রজেক্ট ম্যানেজার, এজাইল ম্যানেজার, কাস্পেরস্কি, সাইবার সিকিউরিটি সার্টিফাইড।
সম্প্রতি তিনি দেশের শিশু কিশোরদের জন্য প্রথম নিরাপদ ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ বেবিটিউবের ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে। তিনি শিশু কিশোরদের কল্যাণে বেবিটিউবকে বাংলাদেশের একটি সোশ্যাল অ্যাপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, নতুন বছরে বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে। নেক্সক্রাফট লিমিটেডকে কাস্টমাইজড সফটওয়্যার ডেভলপার কোম্পানি থেকে আগামী দুই বছরের মধ্যে বেশ কিছু নিজস্ব প্রোডাক্টস ও সার্ভিস বেইসড সফটওয়্যার কোম্পানি হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি।
কেএসকে/জিকেএস