‘বাংলা টেক্সট টু স্পিচ’ ও ‘স্পিচ টু টেক্সট’ চালু

প্রযুক্তি উদ্ভাবক দেশ হিসেবেও বিশ্ব আমাদের চিনবে: পলক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২২ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

অমর একুশের শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) তৈরি করা বাংলা টেক্সট টু স্পিচ, বাংলা স্পিচ টু টেক্সট ও বর্ণবাংলা ওসিআর অ্যাপস এবং পূর্ণ বাংলা ফন্ট উদ্বোধন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিটিসিএলের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট জিপন-এর ‘সুলভ’ ও ‘ভাষা’ নামের দুটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ চালু করা হয়েছে। এই প্যাকেজে গ্রাহককে বিনামূল্যে রাউটার দেবে সরকারি টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে নতুন এ প্রযুক্তি সেবাগুলো উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযাগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযাগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমাদের লক্ষ্য আত্মনির্ভরশীল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পরনির্ভরশীর বাংলাদেশ গড়ে তোলা নয়। তবে অবশ্যই আমরা আত্মকেন্দ্রিক হবো না। সারাবিশ্বের সঙ্গে আমরা তালমিলিয়ে যোগাযোগ রেখে চলবো। জানবো, চলবো, জ্ঞান অর্জন করবো।

তিনি বলেন, শুধু সরকারি পর্যায়ে না, বেসরকারি খাত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিসিয়ান মিলে সম্মিলিতভাবে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। একুশের চেতনায় জাগ্রত হয়ে অঙ্গীকার করেছি আত্মনির্ভরশীল একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশ হিসেবেই বিশ্ব শুধু আমাদের চিনবে না, প্রযুক্তি উদ্ভাবক দেশ হিসেবেও যেন আমাদের চিনতে পারে, মর্যাদা এবং সম্মান করতে পারে সেজন্য আমরা এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছি।

পলক বলেন, আমরা প্রত্যেকটা সেবা নিজস্ব উদ্ভাবক, গবেষকের মাধ্যমে তৈরি করতে চাই। একদিকে যেমন আমরা বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহার করতে বাধা দেবো না, কিন্তু যেন আমাদের নিজস্ব একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকে, সেজন্য আমরা দেশি উদ্ভাবক, গবেষকদের উৎসাহিত করছি, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছি। অবশ্য আমরা গুগল জি বোর্ড, গুগল ক্লাউড ব্যবহার করবো, পাশাপাশি উচ্চারণ, কথা, বর্ণমালা, পূর্ণ, অনুভব, ধ্বনি, গুরুসহ আমাদের নিজস্ব যত ধরনের প্রযুক্তি সেবা রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করবো।

তিনি বলেন, আমাদের ৪০টি সফটওয়্যার, ১৬টি কম্পনেন্ট (bangla.gov.bd) https://bangla.gov.bd/-এ সমন্বয় করেছি। সবগুলো একসঙ্গে এখানে সংরক্ষণ করেছি। এগুলোর কপিরাইট, মেধাস্বত্ব বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট থাকবে, যা ভবিষ্যতে নতুন ধরনের সার্চ ইঞ্জিনের জন্য ফাউন্ডেশন হিসেবে এগুলো কাজ করবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছর আমি খুব বেশি আশাবাদী ছিলাম না। তবে আমাদের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়, আইসিটি, কম্পিউটার কাউন্সিল মিলে এমন একটা অবস্থায় আমরা এসেছি আমি এখন খুবই আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রী আগামীর ৪১ এর যে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প ঘোষণা করেছেন, সেখানে প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এবং বর্তমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নতুন প্রজন্ম কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ৪০টি সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে, যেখানে থাকছে ১৬টি কম্পনেন্ট। সেখানে বাংলাদেশের সাতটি সফটওয়্যার কোম্পানি কাজ করছে। ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে কাজ করছে। এর আগে আমরা বেশ কয়েকটি সফটওয়্যার উদ্বোধন করেছি, যেটার ব্যবহার হচ্ছে। আমরা এখন গর্বের সঙ্গে বলতে পারি ১৬ ধরনের কম্পনেন্ট, ৪০ ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করছি। যেটি হবে, ডিজাইন ইন বাংলাদেশ ডেভেলপ ইন বাংলাদেশ, মেড ইন বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমরা অঙ্গীকার করেছি, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোকে লাভজনক করা। আমি জানি এটা অনেক কঠিন। তারপরও এ কঠিনকে বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার করেছি। জিপন প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে চাই। সেজন্য আমরা গ্রাহক প্রান্তে অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে দ্রুতগতি ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছি। আমাদের যে বিশাল চাহিদা রয়েছে সেটা সেটা পূরণে আমরা এখন বিটিসিএলকে আধুনিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত করতে চাই। সুলভমূল্যে আমরা ইন্টারনেট দিচ্ছি। স্পিড বাড়িয়ে দাম কমিয়েছি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, ভাষা আন্দোলন শুধু সাংস্কৃতিক আন্দোলন নয়, এটা অর্থনৈতিক আন্দোলনও। ভাষা হচ্ছে ‘সামাজিক প্রযুক্তি’। ভাষার রাজনৈতিক তাৎপর্যও গভীর। এ কারণেই ভাষা আন্দোলন থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশ এসেছে। দেশকে ভালোবেসে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে এই সামাজিক প্রযুক্তির উন্নয়নে ভাষাশহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মাননা দেওয়া হবে। তাই আমরা সবাই প্রমিত বাংলা ব্যবহার করবো।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে একাধিক ভাষা সম্পর্কে দক্ষতা প্রয়োজন। তাই আঞ্চলিক ভাষাকে স্ট্যান্ডার্ড বাংলা ও বিদেশি ভাষা শেখার জন্য নতুন সফটওয়্যারে ‘অনুবাদ’ ফিচার যুক্ত করা দরকার। তবে গুগলে না থাকলেও নতুন সফটওয়্যারে বানান শুদ্ধের সুুযোগ রয়েছে আমাদের।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার বলেন, বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা ৪০টি নৃগোষ্ঠীর ভাষা নিয়েও কাজ করছে বিসিসি। বাংলা ভাষা যেন অন্যকোনো ভাষার আগ্রাসনে হারিয়ে না যায় সেজন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক মামুন অর রশীদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও টেলিটক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান।

এমএএস/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।