পথের শেষে দাঁড়িয়ে পৃথিবী দেখতে চাই

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ০১ জুন ২০২৫

তানভীর অপু, বিশ্ব পর্যটক

আমি প্রথম হতে চাই না, আমি পথের শেষে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে দেখতে চাই। ভ্রমণ আমার ছোটবেলার ভালোবাসা। মনে পড়ে, যখন ঠিকমতো দিক-দিগন্তের নামও উচ্চারণ করতে পারতাম না; তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম অচেনা কোনো জায়গায় হেঁটে যাচ্ছি। কিন্তু আমার স্বপ্ন কখনোই ছিল না ‘সারা পৃথিবী ঘুরে ফেলবো’ বা ‘সবগুলো দেশে যাবো’—এমন কোনো গর্বিত পরিকল্পনার। আমি শুধু দেখতে চেয়েছি, অনুভব করতে চেয়েছি। আমি চেয়েছি মানুষকে জানতে, তাদের ভাষা, তাদের চোখের ভাষা, তাদের হাসির উৎস, তাদের আহারের স্বাদ, তাদের ইতিহাসের গল্প। আমি চেয়েছি পৃথিবীর আলো-ছায়া, রং-রূপ, সংস্কৃতি-পরম্পরাকে ছুঁয়ে দেখতে।

বিজ্ঞাপন

আমার এই চাওয়ায় কোনো প্রতিযোগিতা নেই, কোনো পুরস্কার নেই, কোনো শিরোপা নেই। আমি কোনো কিছুতেই ‘প্রথম’ হতে চাইনি। বরং আমি সেই মানুষটি হতে চাই, যে শেষের দিকে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে দেখে—সবকিছুর ব্যাখ্যাহীন বিস্ময় আর সৌন্দর্য। আমার আত্মা সেই শেষের সারিতেই বেশি স্বস্তি পায়। সেই নম্রতার মাঝেই আমি নিজেকে খুঁজে পাই।

পথের শেষে দাঁড়িয়ে পৃথিবী দেখতে চাই

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আমি লন্ডন ভালোবাসি, বহুবার গেছি। এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিন ২০ বারের ওপরে যাওয়া হয়েছে। ইস্তাম্বুল—ভালোবাসার শহর, ৬ থেকে ৭ বার সেখানে ফিরে গেছি। দিল্লি, কলকাতা—এই শহরগুলো যেন আমার চেনা আত্মীয়। পৃথিবীতে এমন অগণিত শহর আছে, যেখানে আমি একাধিকবার পা রেখেছি। অনেক দেশ আছে যেগুলোর রাস্তাঘাট, মানুষের মুখ, বাতাসের গন্ধ আমার চেনা হয়ে উঠেছে। তাই নয় যে, সংখ্যার জন্য আমি যাই। আমি যাই টান অনুভব করি বলেই।

তবু অনেকেই বলেন—‘আপনি তো প্রথম বাংলাদেশি এখানে এসেছেন!’ আমি একটু থমকে যাই। কী মানে এই ‘প্রথম’-এর? কেন এই শব্দের এত জাঁকজমক? পৃথিবীর ৮০ শতাংশ মানুষ ভ্রমণ করে। কিন্তু বাংলাদেশি পর্যটক আসে না বলে হয়তো অনেকে আমাদের ভ্রমণকে ‘প্রথম’ বলে। আমি তাতে কোনো গর্ব খুঁজে পাই না। আমরা যারা ঘুরে বেড়াই, তারা জানি—ভ্রমণ মানে আত্মপ্রসার, আত্মসন্ধান। আমেরিকার নিঃসঙ্গ হাইওয়েতে হোক কিংবা ইউরোপের নির্জন পাহাড়ি পথ—প্রতিটি যাত্রায় আমরা কেবল পথই দেখি না, পথ হয়ে উঠি।

পথের শেষে দাঁড়িয়ে পৃথিবী দেখতে চাই

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আমার দেখা পৃথিবী কেবল ছবি নয়, ফেসবুক পোস্ট নয়, গাইডবুক নয়। সেই পৃথিবী—যেখানে আকাশটা একটু ভিন্নভাবে নীল, যেখানে কোনো বৃদ্ধার চোখে দেখি হারিয়ে যাওয়া সময়, যেখানে শিশুদের খেলায় দেখি ভাষাহীন আনন্দ। এই দেখাগুলোই আমার সঞ্চয়, আমার জ্ঞান, আমার উপলব্ধি।

আরও পড়ুন

ভ্রমণ মানুষকে বদলায়—নিঃশব্দে, গভীরভাবে। আমি এই বিশ্বাসে পথ হেঁটেছি, এখনো হাঁটছি।
আমার এ পর্যন্ত করা প্রতিটি ভ্রমণ আমাকে শিখিয়েছে—ভ্রমণ করতে হয় নিজের জন্য, মনকে খুলে দেওয়ার জন্য, হৃদয়কে প্রসারিত করার জন্য। ভ্রমণ যেন এক ধরনের প্রার্থনার মতো—নির্জনতা ও মানসিক শান্তির এক অদ্ভুত মিশেল। নতুন মানুষ, নতুন বন্ধু, নতুন গল্প—ভ্রমণ মানে এক জীবন থেকে আরেক জীবনে হেঁটে যাওয়া।

বিজ্ঞাপন

পথের শেষে দাঁড়িয়ে পৃথিবী দেখতে চাই

আমার বাংলাদেশি ভাই ও বোনদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ—আপনারা ভ্রমণ করুন। না, আমি বলছি না পাসপোর্টে ভিসার ছাপ জমানোর কথা। আমি বলছি—নিজের দেশকে জানুন। এই দেশের ৬৪টি জেলার অন্তত দশটি জেলা তো ঘুরে দেখা যাক! এই বাংলাদেশের পাহাড়পুরে (সোমপুর বিহার) গিয়ে এক বিকেল কাটিয়ে দেখুন, সেন্টমার্টিনে রাতের তারা গুনুন, সুন্দরবনের গাছের ফাঁকে রোদ পড়া দেখুন, পাহাড়ে বসে চা খান। এসবই আমার স্বপ্ন, আমার আহ্বান।

ভ্রমণ করা মানে পৃথিবীকে ছুঁয়ে দেখা নয় বরং নিজের ভেতরকার একটা জানালা খুলে দেওয়া। আপনি যে শহরে থাকেন, তার বাইরের একটি নদী দেখলেও আপনি কিছুটা বদলে যাবেন। আর হ্যাঁ—আমি কখনো কোনো পুরস্কার নিইনি, নেবও না। কারণ আমি চাই না ভ্রমণ হয়ে উঠুক কোনো অর্জন, প্রতিযোগিতা বা সাফল্যের দাগ। আমি চাই—নিমগ্নভাবে, নির্বিকারভাবে পৃথিবীকে ভালোবাসতে। যখন কেউ আমার কাছে প্রশ্ন করে—‘আপনি কত দেশ ঘুরেছেন?’ আমি হাসি, চুপ করে যাই। কারণ আমি জানি, এই প্রশ্নের উত্তর কোনো সংখ্যা নয়। এই উত্তর শুধুই এক অন্তহীন অনুভব।

বিজ্ঞাপন

পথের শেষে দাঁড়িয়ে পৃথিবী দেখতে চাই

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

আপনারা বলার জন্য নয়, দেখানোর জন্য নয়—ভ্রমণ করুন শুধুই জানার জন্য, উপলব্ধির জন্য, ভালোবাসার জন্য। এই পৃথিবী অপার, অশেষ, অবর্ণনীয়। এই জীবন ছোট, সংক্ষিপ্ত, সীমিত। চোখ দুটি মেলে যতটা দেখা যায়, মন খুলে যতটা গ্রহণ করা যায়—ততটাই আমাদের প্রাপ্তি।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।