বিশ্ব পর্যটন দিবস

কুয়াকাটার গ্রামীণ সৌন্দর্যে হোক পর্যটনের নতুন দিগন্ত

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৫৮ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কাজী সাঈদ

প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়। থাকে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য। এবারের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই উন্নয়নে পর্যটন’। এর মূল লক্ষ্য হলো পর্যটনকে বিকশিত করে পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতি সমানভাবে উপকৃত করা। বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে এ প্রতিপাদ্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ আমাদের পর্যটন শিল্প এখনো প্রধানত শহর, পাহাড়, হাওর ও সমুদ্রসৈকত। অথচ গ্রামীণ ও উপকূলীয় জনপদগুলোয় রয়েছে পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনা। যদি তা টেকসইভাবে কাজে লাগনো যায়, তবে প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নত হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দারিদ্র্য কমবে। পাশাপাশি গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষিত থাকবে। শক্তিশালী হবে আমাদের দেশের অর্থনীতি। গ্রামীণ সৌন্দর্যে পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলের প্রাণকেন্দ্র কুয়াকাটা এ সম্ভবনার উজ্জ্বল উদাহরণ হতে পারে। সাধারণভাবে কুয়াকাটা পরিচিত সমুদ্রসৈকতের জন্য। কিন্তু এর আশপাশের গ্রামীণ জনপদে রয়েছে পর্যটনের অনন্য ভান্ডার। উপকূলের মাঠজুড়ে কৃষি, কৃষকের পরিশ্রম, গোটা সৈকত সংলগ্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল, আলীপুর-মহিপুর মৎস্যবন্দর, হাজার হাজার জেলের জীবন সংগ্রাম ও জেলে পল্লির জীবন-যাপন পর্যটনে যোগ করবে নতুন মাত্রা। বিশেষ করে এ অঞ্চলের অলংকার খ্যাত রাখাইনদের জীবন-যাপন, কৃষ্টি-কালচার জানার ও দেখার আগ্রহ আছে শহরের পর্যটকদের। এ সম্পদগুলোকে সঠিক পরিকল্পনায় কাজে লাগানো গেলে কুয়াকাটা হতে পারে দেশের গ্রামীণ পর্যটনের মডেল।

কুয়াকাটা সৈকতে এসে ভ্রমণপিপাসুরা মুগ্ধ সাগরের বড় বড় ঢেউ আর সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখে। কিন্তু সৈকত থেকে একটু ভেতরে রয়েছে এক অন্য জগৎ। বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, তরমুজের মাঠ, সূর্যমুখী ফুলের হাসি। এখানকার কৃষক, জেলে ও রাখাইনদের সংস্কৃতি পর্যটনের জন্য অমূল্য সম্পদ। আমি দেখেছি, শহরের কিশোর-কিশোরী পর্যটকরা এখানে ঘুরতে এসে ফসলের মাঠে নেমে কৃষকের সাথে ধান কেটে, ফুলবাগানে ছবি ও সেলফি তুলছেন। কৃষকের কাছে জীবিকা আর ওদের কাছে এসব আনন্দ। যদি এভাবে পর্যটন হয়, তাহলে স্থানীয়দের আয় হবে, তারাও আনন্দ পাবেন।

এগ্রো ট্যুরিজম বা কৃষিভিত্তিক পর্যটন এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। কুয়াকাটার কৃষকেরা বছরে লাখ লাখ টন ধান, তরমুজ ও বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেন। কিন্তু পর্যটকরা এসব কৃষি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন না। কারণ এগুলো আমরা এখনো পর্যটনের সাথে যুক্ত করতে পারিনি। যদি ধান কাটার মৌসুমে পর্যটকদের জন্য ‘কৃষি অভিজ্ঞতা ট্যুর’ চালু করা হয়, তবে কৃষকেরা অতিরিক্ত আয় করবেন। একইভাবে উপকূলের প্রত্যেকটি বিষয়ে আলাদা আলাদা ট্যুর প্ল্যান করলে পর্যটকদের অভিজ্ঞতা বাড়বে, তারা আনন্দও পাবেন। কুয়াকাটা পৌরসভার পাশের গ্রাম থঞ্জুপাড়া, মম্বিপাড়া এবং নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা, কুমিরমারা, আমিরাবাদ, নাওভাঙ্গা গ্রামগুলো কৃষির জন্য বিখ্যাত। এ গ্রামগুলোর কৃষকেরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে এ খ্যাতি অর্জন করেছেন। এখানকার স্থানীয়দের সম্পৃক্ততায় ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে টেকসই পর্যটনের পরিধি বাড়ানো যায়। এ ধরনের কৃষিভিত্তিক পর্যটন কেবল অর্থনীতি নয়, টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে। কারণ এতে কৃষকেরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখবেন, জমি বিক্রি করে অন্য পেশায় যাবেন না, আর পর্যটকরাও প্রকৃতির কাছাকাছি আসবেন, আসার সুযোগ পাবেন।

কুয়াকাটার উপকূল মূলত জেলেদের গ্রাম। এমন কোনো গ্রাম নেই, যে গ্রামে জেলেরা বসবাস করছেন না। গভীর সমুদ্রে হাজার হাজার মাছ ধরার ট্রলার যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। উপকূলের কাছাকাছি মাছ শিকারী জেলেরা সমুদ্রে ভাটা শুরু হলে শত শত ডিঙি ট্রলার নিয়ে ছুটে যান সাগরের বুকে। এখানকার জেলেদের জীবন সংগ্রাম সম্পর্কে জানার ও শোনার আগ্রহ আছে পর্যটকদের। এ ছাড়া বাংলাদেশের অধিকারে থাকা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র সীমানায় ৩৭৩ প্রজাতির মাছ আছে। সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সাথে পরিচিত হতে কার না মন চায়? জেলেদের জীবিকাকে পর্যটনের সাথে যুক্ত করতে পারলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘জেলেদের জীবন সংগ্রাম অভিজ্ঞতা ট্যুর’ চালু করলে সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। একবার ভাবুন তো, একজন পর্যটক জেলেদের সাথে নৌকা বা ট্রলারে চড়ে সমুদ্রে গেলেন, হাতে জাল টেনে রুপালি ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ তুললেন, এটি তার কাছে জীবনের অবিস্মরণীয় স্মৃতি হবে। অন্যদিকে জেলেরাও অতিরিক্ত আয় করবেন। আমি স্থানীয় জেলেদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলছেন, ‘আমরা মাছ ধরে সংসার চালাই। যদি পর্যটকরা আমাদের ট্রলারে ঘুরে মাছ ধরা দেখেন, তাহলে আমাদেরও লাভ হবে। আর তারা বুঝবেন আমাদের কষ্ট কেমন।’ এ অভিজ্ঞতা ভ্রমণকারীদের কাছে শুধু বিনোদন নয় বরং মানবিক উপলদ্ধি ও সামাজিক সংযোগের শিক্ষা হয়ে দাঁড়াবে।

কুয়াকাটার পাশে আলীপুর-মহিপুর মৎস্যবন্দর, খাপড়াভাঙ্গা নদীটি চমৎকার একটি পর্যটন স্পট হতে পারে। নদীটিতে কিছু প্রমোদতরী ভাসতে পারে। যাতে পর্যটকরা নদীটির দু’মাথার আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ মোহনায় যেতে পারে। নদীটির দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ছাতা-বেঞ্চ বসানোর ব্যবস্থা করতে পারলে আকর্ষণ বাড়বে। নদীর পাড়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় স্টল করে সকাল-সন্ধ্যা মাছের দোকান বসালে পর্যটকরা তাজা মাছ কেনার পাশাপাশি সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পরিচয় জানতে পারবেন। এ ছাড়া জেলেদের জীবনের সুখ, দুঃখের বাস্তব কাহিনি শোনার সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে নদীটির দু’পাড় অবৈধ দখলমুক্ত করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে ভূমি প্রশাসনকে। সর্বোপরি পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে খাপড়াভাঙ্গা নদীটির সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করতে পারলে সাগরকন্যা কুয়াকাটা পাবে আরও একটি দর্শনীয় পর্যটন স্পট এবং দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। শক্তিশালী হবে কুয়াকাটা কেন্দ্রিক গ্রামীণ পর্যটন।

আরও পড়ুন
কাপাসিয়ায় পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা
সিলেটের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ভ্রমণ

কুয়াকাটার অলংকার খ্যাত আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি হতে পারে গ্রামীণ পর্যটনের আরেকটি উপাদান। এখানকার রাখাইনদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, পোশাক, ধর্মীয় আচার, মন্দির ও উৎসব। রাখাইন পল্লিতে গেলে দেখা যাবে হস্তচালিত তাঁতে খট খট শব্দে কাপড় বুনছেন নারীরা, পুরুষরা বাঁশ-বেত দিয়ে সামগ্রী তৈরি করছেন। রাখাইন তরুণীদের নিজস্ব ভঙ্গিমার নাচ-গান পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। অবশ্য নানা কারণে রাখাইনরা তাদের কিছু ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছেন। অর্থ সংকটের কারণে রাখাইনদের জলকেলি উৎসব এখন আর পাড়ায় পাড়ায় হয় না। গত কয়েক বছর ধরে শুধু কুয়াকাটার কেরানীপাড়ায় যৌথ আয়োজনে জলকেলি উৎসব হয়। অথচ একসময় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকটি পাড়া নতুন সাজ-সজ্জায় আলোকিত হতো। দেশের গ্রামীণ পর্যটনের উন্নয়নের লক্ষে একটু তদারকি করলে তারা আবারও তাদের পুরোনো ঐতিহ্যে ফিরে আসবেন। পর্যটন গবেষকরা মনে করেন, রাখাইন সংস্কৃতিকে ব্র্যান্ডিং করলে কুয়াকাটার বিশেষ পরিচিতি হবে। শুধু সৈকতের ওপর নির্ভর না করে সংস্কৃতিভিত্তিক পর্যটন চালু করা গেলে টেকসই আয়ের নতুন পথ সৃষ্টি হবে।

কুয়াকাটার আশেপাশে রয়েছে গঙ্গামতি, চরগঙ্গামতি, কাউয়ারচর, লেম্বুরবন ও ফাতরার ম্যানগ্রোভ বন এবং বিভিন্ন চরাঞ্চল। এখানে দেখা যায় হরিণ, বানর, শুঁকর, শেয়াল, কাঠবিড়ালীসহ নানা প্রজাতির পাখি ও সামুদ্রিক প্রাণী। পাখিদের কিচিরমিচির, রঙিন প্রজাপতির ওড়াউড়ি, শীতকালে পরিযায়ী পাখির কলতান মুগ্ধ করে সব বয়সী পর্যটকদের। এগুলো পর্যটনের আওতায় আনলে প্রতি বছর কমছে কম এক লাখ পর্যটক বাড়তে পারে। তবে খুব সর্তকতার সাথে এ বনাঞ্চল পর্যটনের সাথে যুক্ত করতে হবে। এসব এলাকায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হলো পরিবেশ সংরক্ষণ। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন হলে বন ধ্বংস, বণ্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে। তাই টেকসই পর্যটনের অংশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব হোমস্টে ও ইকো-ট্যুরিজম চালুর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান প্রায় ৪.৪ শতাংশ। কিন্তু এর বড় অংশই শহরকেন্দ্রিক ও সৈকতকেন্দ্রিক পর্যটন থেকে আসে। গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়ন করা গেলে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে এবং অর্থনৈতিক অবস্থা আরও মজবুত হবে। স্থানীয় নারীরা হস্তশিল্প, পিঠা ও খাবার বিক্রি করে আয় করবেন। বেকার যুবকরা পর্যটন গাইড, পরিবহন ও হোমস্টে সেবায় যুক্ত হবেন। কৃষক ও জেলে সরাসরি গ্রামীণ পর্যটনে অংশ নেবেন। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের একটি প্রাক্কলন অনুযায়ী কুয়াকাটার গ্রামীণ পর্যটন চালু হলে ২০-২৫ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। এটি হবে এলাকাভিত্তিক দারিদ্র্য হ্রাস ও সামাজিক উন্নয়নের বড় সুযোগ। কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়া গ্রামের এক গৃহবধূ শীত মৌসুমে নারিকেলের পিঠা (ভাপা পিঠা) বিক্রি করেন। তার মাসে আয় প্রায় ছয় হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘পর্যটক এলে আমি বেশি পিঠা বিক্রি করতে পারতাম। তখন সংসার চালাতে এত কষ্ট হতো না।’ তাঁর মতো শত শত নারী গ্রামীণ টেকসই পর্যটনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান পেতে পারেন।

গ্রামীণ পর্যটনের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। কুয়াকাটা পর্যটনের সাথে যুক্ত করা যায় এমন অনেক জায়গায় ভালো রাস্তা নেই। নৌযানের নিরাপত্তাও প্রশ্নবিদ্ধ। স্থানীয়রা এখনো জানেন না পর্যটনের মাধ্যমে কীভাবে আয় করতে হয়। ম্যানগ্রোভ বন ও চরাঞ্চল সুরক্ষা না করলে পরিবেশের ক্ষতি হবে। পর্যটকবান্ধব সেবা প্রদানের জন্য স্থানীয়রা এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। তাই গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় মানুষকে পর্যটন গাইড, আতিথেয়তা ও খাবার পরিবেশনের জন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাখাইন সংস্কৃতি, কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক পর্যটনকে ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে পর্যটকদের সচেতন করতে হবে। সর্বোপরি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

এখন একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে বলি, কুয়াকাটা হচ্ছে প্রকৃতির পর্যটন। এখানে আগত ভ্রমণপিপাসুরা যা দেখে মুগ্ধ হন; তা সবই প্রকৃতি আমাদের দান করেছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৭ বছর কুয়াকাটার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে আমরা কোনো অবদান রাখতে পারিনি। বরং আমরা বিভিন্নভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য নষ্ট করছি, ধ্বংস করছি এখানকার জীববৈচিত্র্য। প্রকৃতি আমাদের যতটুকু সৌন্দর্য দান করেছে, তা-ও আমরা সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারছি না। কুয়াকাটা আগত ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ সংরক্ষিত বনাঞ্চল। অথচ দিন দিন এ বনাঞ্চল নানাভাবে ধ্বংস হচ্ছে। কখনো ঢেউয়ের ঝাপটায় বনের গাছপালা সাগরে ভেসে যাচ্ছে। আবার আমরাই নির্বিচারে বনের গাছপালা চুরি করে কেটে নিচ্ছি। ঢেউয়ের ঝাপটায় বালু পরে গাছের শ্বাসমূল আটকে মারা যাচ্ছে বিশাল বিশাল আকৃতির গাছ। অথচ এগুলো রক্ষার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত; তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন। যেখানে নতুন বাগান সৃজনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত; সেখানে পুরোনো বাগানই আমরা রক্ষা করতে পারছি না। গত কয়েক দশক ধরে কুয়াকাটা সৈকতের বালুক্ষয় হচ্ছে। কিন্তু সৈকত রক্ষায় আমরা স্থায়ীভাবে বালুক্ষয় রোধ করতে পারছি না। প্রতি বর্ষা মৌসুমে পাউবো কর্তৃপক্ষ জরুরি মেরামতের নামে প্রকল্প নিয়ে বালুভর্তি জিওটিউব ও জিওব্যাগ দিয়ে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। তাই কুয়াকাটার সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ বাড়াতে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে যুক্ত করে টেকসই উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে।

কুয়াকাটার উপকূলীয় অঞ্চলের পর্যটন স্পটগুলো শুধুমাত্র আনন্দ ভ্রমণ নয়, এটি হতে পারে টেকসই উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার। কুয়াকাটা সেই সম্ভাবনা নিয়ে আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। এখানকার কৃষি, মৎস্য, বন, চর ও সংস্কৃতি মিলে গড়ে উঠতে পারে গ্রামীণ পর্যটনের মডেল। সাগরের ঢেউয়ের মতোই বিস্তৃত হোক কুয়াকাটার স্বপ্ন। ‘টেকসই উন্নয়নে পর্যটন’কে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় মানুষ, পরিবেশ ও অর্থনীতিকে সমানভাবে সমৃদ্ধ করাই হোক বিশ্ব পর্যটন দিবসের অঙ্গীকার।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।