দুই জমিদারের লোহাগড় মঠ

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৩ পিএম, ০৮ জানুয়ারি ২০১৮

পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত চারপাশ, মঠের ফাঁক দিয়ে পাখির উঁকি মারার দৃশ্য আনন্দ দেয় দর্শনার্থীদের। বিকেলে দেখা মেলে টিয়া পাখির। রয়েছে শালিক, কবুতরসহ বেশ কয়েক রকমের পাখি। মঠের পাশেই রয়েছে সবুজ ধানের ক্ষেত আর ডাকাতিয়া নদী। চমকপ্রদ নিদর্শন ঘুরে লিখেছেন রিফাত কান্তি সেন-

একসময় জমিদারদের বেশ প্রভাব ছিল। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করেই তারা চালিয়েছে রাজত্ব। নিরীহ প্রজাদের শাসন আর শোষণের মাধ্যমে চলতো তাদের রাজতন্ত্র। প্রতাপশালী এসব জমিদারের বিলাসিতার অভাব ছিল না। তেমনই এক বিলাসী জমিদার ছিলেন লোহাগড়ের জমিদার ‘লোহ’ এবং ‘গহড়’ নামের দুই ভাই। জানা যায়, লোহ এবং গহড়ের নামানুসারে এলাকাটির নামকরণ করা হয় লোহাগড়।

lohagor-in-(1)

ধারণা করা হয়, লোহাগড়ে যেসব মঠ রয়েছে তা কয়েক শতাব্দী আগের। বিশেষ করে পাঁচটি মঠ একসময় থাকলেও এখন সেখানে মাত্র তিনটি মঠ টিকে আছে। সুউচ্চ এসব মঠ একসময় জমিদারদের উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া মঠগুলোতে মণি, মুক্তা, স্বর্ণালংকার ছিল প্রচুর। মঠের উপরিভাগে রয়েছে মিনার আকৃতির গম্বুজ। তবে মঠটির ভেতরে অনেকবারই চোর ঢোকার চেষ্টা করেছিল। যার প্রমাণ মঠটির অনেকাংশেই লক্ষ্য করা যায়।

lohagor-in-(2)

লোকমুখে শোনা যায়, একসময় লোহাগড়ের জমিদারদের শানবাঁধানো ঘাট, কারুকার্যময় কেল্লা ছিল। যার অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে। কল্পকাহিনির গল্পও রয়েছে জমিদার লোহ এবং গহড়কে ঘিরে। স্থানীয়দের কাছে জমিদাররা তেমন ভালো মানুষ ছিলেন না।

lohagor-in-(3)

কথিত আছে, একবার এক বৃটিশ ঘোড়া নিয়ে প্রাসাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘কেমন জমিদার এরা! রাস্তাগুলো এত খারাপ। জমিদারের কর্মচারীরা এ কথা শুনে লোহ এবং গহড়কে জানায়। এ কথা শুনে তারা রাস্তাটি সিঁকি ও আধুলির মুদ্রা দিয়ে ভরিয়ে দেয়। লোকটি ফেরার পথে তা দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তবে জমিদারের কর্মচারীরা তার ওপর অত্যাচার করে বলে শোনা যায়। কিন্তু সে রাস্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

lohagor-in-(4)

এছাড়া আরও শোনা যায়, একবার নাকি তাদের মা আম-দুধ খেতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তারা মাকে আম-দুধ খাওয়ানোর জন্য বাজারের সব দুধ ও আম নিয়ে আসে। এনে মাকে নাইন্দায় চুবিয়ে আম-দুধ খেতে দেয়। ধারণা করা হয়, সেখানেই মায়ের মৃত্যু হয়।

lohagor

একসময় পতন ঘটে সেই জমিদার পরিবারের। তাদের রেখে যাওয়া স্থাপত্যশৈলী এখন দেশের পর্যটন ক্ষেত্রের সম্ভাবনাময় খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা প্রশাসন অচিরেই স্থানটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১নং পশ্চিম বালিথুবা ইউনিয়নের চান্দ্রা বাজার থেকে ১.৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ডাকাতিয়া নদীর তীরে লোহাগড় মঠ অবস্থিত। ঢাকা থেকে লঞ্চে কিংবা গাড়িতে চাঁদপুর গিয়ে সেখান থেকে সিএনজিযোগে লোহাগড় মঠে যাওয়া যায়।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।