রিকশায় চড়ে রংপুর শহরে যা যা ঘুরে দেখবেন

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৩

তানজিদ শুভ্র

রংপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতের যানজটের মাঝেই কল্যাণপুর পৌঁছালাম। তখন রাত সাড়ে ১০টা। বাস ছাড়ার সময় ছিল সাড়ে ১১টা। প্রায় ২০ মিনিট দেরিতে যাত্রা শুরু করলো বাস। উত্তরের জনপদে যাত্রাপথের এবারের সঙ্গী বিডিজবস ডট কম এর এজিএম (প্রোগ্রামস) মোহাম্মদ আলী ফিরোজ ভাই।

বাস ছুটে চলছে তার আপন গতিতে। রংপুরে এবারই ছিল আমার প্রথম ভ্রমণ। রাত ৪টার একটু আগে বগুড়ার ফুড ভিলেজে ৩০ মিনিটের যাত্রা বিরতি। নিজের অস্বস্তির জন্য যাত্রা বিরতি কিংবা পুরো যাত্রায় কিছুই খাইনি। সকাল ৬টার পরপরই পৌঁছে যাই রংপুরে।

jagonews24

আরও পড়ুন: হাজার ফুটের ‘দুধসাগর’ ভ্রমণের আগে যা জানা জরুরি

বাস স্টপেজ থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে শহরের খামার মোড়ে ইমেজ পলিটেকনিকে গেলাম। আমাদের ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয় রেস্ট নিলাম সেখানেই। সকাল ১০টায় বের হলাম রংপুর শহরকে একটু দেখতে। কলেজ রোড থেকে পরোটা আর ডাল দিয়ে নাস্তা করে হাঁটতে হাঁটতে কারমাইকেল কলেজে গেলাম।

সারি সারি গাছ, সবুজ আঙিনা, পুরনো শৈলীর ভবন, আধুনিক ভবন সঙ্গে মাঠ ভীষণ ভালো লাগলো। উত্তরবঙ্গের অক্সফোর্ড খ্যাত এই কলেজের ভেতরে যখন হাঁটছিলাম। শুরুতেই চোখ যায় কারমাইকেল কলেজ জামে মসজিদের দিকে। এরপর হাঁটতে হাঁটতে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাষ্কর্য পেড়িয়ে একপাশে দৃষ্টিনন্দন প্রশাসনিক ভবন আরেক পাশে শহীদ মিনার দেখতে পাই।

শুক্রবার বন্ধের দিন, তবুও মাঠে উপস্থিতি ছিল বেশ। একেক পাশে একেক দল ভিন্ন খেলায় মগ্ন ছিল। আবার কোথাও ঘাসের মাঝে বসে বন্ধুরা মিলে আড্ডায় মেতে ছিল। হৃদ্যতার টানে খুঁজে বের করলাম উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ। উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা আর পদার্থবিদ্যা বিভাগ ছিল একই ভবনে।

jagonews24'

আরও পড়ুন: ভাসমান পেয়ারা বাজরে কীভাবে যাবেন ও কত খরচ?

১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠ একসময় কলকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তও ছিল। ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজ।

হাঁটাহাঁটির মাঝে আকাশে চোখ রাখতেই দেখি হালকা মেঘাচ্ছন্ন। বের হয়ে রিকশা নিয়ে গেলাম পরবর্তী গন্তব্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বন্ধের দিন, কোলাহলমুক্ত। রিকশা নিয়ে ভেতরে ঘুরে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে।

এরপর গেলাম তাজহাট জমিদার বাড়ি। ত্রিশ টাকা করে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতেই সাজানো ফুলের বাগান আমাদের অভ্যর্থনা জানালো। সেখানে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তোলে নিলাম।

আরও পড়ুন: একদিনেই ১১ জনের নিকলী ভ্রমণ

১৯৮৪ সালে জমিদার বাড়িটি হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ ভবন হিসাবে উদ্ভোদন করা হয়েছিলো। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে একটি সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে স্থানান্তর করে এ প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসে।

jagonews24

মার্বেলের সিঁড়ি বেয়ে জাদুঘরে উঠলেই রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী কক্ষ যাতে রয়েছে দশম ও একাদশ শতাব্দীর টেরাকোটা শিল্পকর্ম। চোখে পড়লো বেশ কিছু সংস্কৃত এবং আরবি ভাষায় লেখা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। এর মধ্যে মুঘল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কুরআনসহ মহাভারত ও রামায়ণ।

পাশাপাশি বিভিন্ন মাটির তৈজসপত্রসহ নানান জিনিস সংরক্ষণ করা। রুমের ভেতরের পাশ থেকে বের হলেই বারান্দা পাওয়া যায় আর পাশেই সিঁড়ি। তবে সিঁড়িতে উঠা আর বারান্দায় গল্প করার নিষেধাজ্ঞা আছে।

আরও পড়ুন: মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে গিয়ে যা যা দেখবেন

সোয়া ১২টার দিকে তাজহাট জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে নতুন গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আপাতত রংপুর মেডিকেল কলেজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। সেখানে যাওয়ার পথে আরডিআরএস এর সেই সবুজে মোড়ানো ভবন চোখে পড়লো। এরপর মেডিকেল অবধি গিয়ে সেখান থেকে আবার ফেরত আসলাম সকালে যেখান থেকে বের হয়েছিলাম সেখানে।

jagonews24

ফেরার পথে ছোট দুর্ঘটনা ঘটে। রিকশায় করে ফিরছিলাম, হঠাৎ উলটো দিক থেকে একটি রিকশা আসা দেখে সামনের রিকশা দেয় থামিয়ে। থামানো রিকশায় গিয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া রিকশা ধাক্কা দিলে পায়ে বেশ আঘাত পাই।

এরপর জুম্মার নামাজ আর মধ্যাহ্নভোজ শেষে আমাদের একটি সেমিনার শুরু হয়। প্রায় দেড় শত মানুষের উপস্থিতিতে এই সেশন শেষে ভেন্যু থেকে বের হই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। আমি একটা গেস্ট হাউজে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম পরদিন সকালে বাসে ঢাকায় ফিরব এই ভেবে।

আরও পড়ুন: কমলগঞ্জ গিয়ে ঘুরে আসুন চা বাগানের ভূত বাংলোয়

আর ফিরোজ ভাই রেল স্টেশনে যায়। গিয়ে ভাই ফোন দিয়ে জানাল ঢাকা যাওয়ার একটা টিকেট পাওয়া গেছে। জলদি করে আমি একটি রিকশা নিয়ে এবার রেলস্টেশনে গিয়ে দেখতে পাই রংপুর এক্সপ্রেস প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছে। স্নিগ্ধায় নিজের আসনে বসলাম।

যাত্রার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফিরোজ ভাই ট্রেন থেকে নেমে ভিন্ন গন্তব্যে গেলেন। আর আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় পায়ের ব্যাথা অনুভব করছিলাম। ভোরের আলো দেখতে দেখতে গাজীপুর এলাকা পার হয়ে সকাল ৬টার পর বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে বাসে করে বাসায় ফিরলাম।

jagonews24

এবারের রংপুর ভ্রমণে ফিরোজ ভাইয়ের আন্তরিকতা আর ইমেজ পলিটেকনিক এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো: আলমামুন আখতারুজ্জামান স্যারের আতিথেয়তা মুগ্ধ করেছে।

পাশাপাশি আমাদের সেশন পরিচালনায় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের সহযোগিতা মনে রাখার মতো। একজন শেষ মুহূর্তে রেল স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে গেছে। সর্বোপরি ধন্যবাদ প্রাপ্ত আমার বড় ভাই মো: তৌহিদুজ্জামানকে, যার মাধ্যমেই এবার রংপুর যাওয়া হলো।

লেখক: শিক্ষার্থী ও ফিচার লেখক

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।