লাইফস্টাইল

মাথায় আঘাত লাগলে জরুরি করণীয়

মাথায় আঘাত এমন একটি ঘটনা, যা কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই ঘটতে পারে। খেলাধুলার সময় পড়ে যাওয়া, সিঁড়ি থেকে হোঁচট খাওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা বাসার ভেতর অসাবধানতাবশত ধাক্কা সব ক্ষেত্রেই মাথা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। অনেক সময় আঘাতটি বাইরে থেকে তেমন গুরুতর মনে না হলেও ভেতরে বড় ক্ষতি লুকিয়ে থাকতে পারে।

মাথায় আঘাতের ফলে মাথার চামড়া কেটে যাওয়া, খুলিতে ফাটল, এমনকি মস্তিষ্কে ঝাঁকুনি লাগার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ ধরনের ঝাঁকুনিকে বলা হয় কনকাশন, যা ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি বা টিবিআই এর একটি ধরন। তাই আঘাত ছোট মনে হলেও অবহেলা করা বিপজ্জনক। সঠিক সময়ে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিলে অনেক বড় জটিলতা এড়ানো সম্ভব। তাই মাথায় আঘাত পেলে কী করবেন, কখন হাসপাতালে যাবেন এসব জানা অত্যন্ত জরুরি।

ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি (টিবিআই) কী?

টিবিআই হতে পারে হালকা, মাঝারি কিংবা মারাত্মক। তবে মনে রাখতে হবে যে কোনো মাত্রার মাথার আঘাতের পর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া নিরাপদ সিদ্ধান্ত।

মাথায় আঘাত লাগলে সাধারণত যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে- মাথার চামড়া কেটে যাওয়া বা ছিঁড়ে যাওয়া খুলির হাড় বা মুখমণ্ডলের হাড়ে ফাটল মাথায় ফোলা বা কালশিটে দাগ মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কনকাশন বা মস্তিষ্কে ঝাঁকুনি

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরির পেছনে যেসব কারণ বেশি দেখা যায়- ৪৭ শতাংশ পড়ে যাওয়া, ১৫ শতাংশ মাথায় সরাসরি আঘাত লাগা, ১৫ শতাংশ অন্যান্য বা অজানা কারণ, ১৪ শতাংশ গাড়ি বা সড়ক দুর্ঘটনা, ৯ শতাংশ মারামারি বা হামলা। বিশেষ করে ০–৪ বছর বয়সী শিশু এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন, কারণ তাদের পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক বেশি।

মাথায় আঘাত পেলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন

মাথায় আঘাত লাগলে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। মাথায় রক্তনালি বেশি থাকায় অল্প কাটা হলেও রক্তপাত বেশি হতে পারে। তবে ভয় না পেয়ে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নিন-

আঘাতের জায়গা পরীক্ষা করুন রক্তপাত হলে তা বন্ধ করার চেষ্টা করুন ছোট কাটা হলে পরিষ্কার পানি দিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করুন পরিষ্কার গজ বা কাপড় দিয়ে অন্তত ১৫ মিনিট চাপ দিয়ে ধরে রাখুন রক্তে কাপড় ভিজে গেলে তা সরাবেন না, বরং তার ওপর আরেকটি গজ চাপুন নিচের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যান মাথা ঘোরা বা হালকা লাগা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া চোখে ঝাপসা দেখা বা দুর্বল লাগা রক্তপাত বন্ধ না হওয়া

মনে রাখবেন, রক্ত না বেরোলেও মাথায় হালকা ধাক্কায় কনকাশন হতে পারে। তাই সন্দেহ হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

মাথায় আঘাতের পর যা করা উচিত নয় মদ্যপান করবেন না খেলাধুলা বা শরীরচর্চা করবেন না গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকুন ভারী কাজ বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া এড়িয়ে চলুন মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি বা কথা জড়িয়ে গেলে দ্রুত বিশ্রাম নিন ও চিকিৎসা নিন আঘাতের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় করণীয়

মাথায় আঘাতের পরের প্রথম ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত সংবেদনশীল সময়। তাই এ সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। পাশে একজন সচেতন মানুষ রাখুন। মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটারের স্ক্রিন ব্যবহার সীমিত করুন। এই সময় যদি ঘন ঘন বমি, তীব্র মাথাব্যথা, অজ্ঞান হওয়া বা আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে হাসপাতালে যান।

কনকাশনের সাধারণ লক্ষণ বিভ্রান্তি বা মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা মাথাব্যথা সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাওয়া ভারসাম্য হারানো অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব কথা জড়িয়ে যাওয়া বমি বমি ভাব বা বমি চোখে ঝাপসা দেখা, কানে শব্দ শোনা আলো বা শব্দে অস্বস্তি চিকিৎসা কেন দেরি করা যাবে না?

মাথার আঘাতের ক্ষেত্রে শুধু বাইরের লক্ষণ দেখে ভেতরের ক্ষতি বোঝা যায় না। অনেক সময় সিটি স্ক্যান বা এক্স-রের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হয় মস্তিষ্ক বা খুলিতে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা। তাই ঝুঁকি না নিয়ে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগ বা চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই নিরাপদ। মনে রাখবেন মাথায় আঘাত মানেই অবহেলা নয়, সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে। সাবধান থাকুন, সুস্থ থাকুন।

তথ্যসূত্র: দ্য আর্জেন্সি রুম, অ্যাপোলো হসপিটাল

জেএস/