‘চিৎকার করে কাঁদা’ এটি শুনতে অনেকের কাছে অদ্ভুত বা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। তবে এটি আসলে অনেকের জীবনের অংশ। বিশেষ করে যখন মানুষ অতিরিক্ত চাপ, হতাশা বা মানসিক অশান্তির সম্মুখীন হয়, তখন তারা প্রায়ই নিজেকে কাঁদতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু চিৎকার করে কাঁদার পেছনে শুধু আবেগ নয়, শারীরিক এবং মানসিক কিছু কারণও থাকতে পারে। কখন এটি স্বাভাবিক এবং কখন এটি সতর্কবার্তা, তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা প্রায়ই মনে করি, কাঁদা মানেই দুর্বলতা। কিন্তু মানসিক গবেষণা দেখিয়েছে, কাঁদা এক ধরনের প্রাকৃতিক আবেগের মুক্তি। বিশেষ করে চিৎকার করে কাঁদা শরীরের ভেতরের চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি মানসিক চাপ, দুঃখ, হতাশা বা ক্রোধের একটি স্বাভাবিক প্রকাশ। চিৎকার করার সময় আমাদের শরীর অ্যাড্রিনালিন এবং কর্টিসল হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে। এই হরমোনগুলো স্ট্রেসের সঙ্গে যুক্ত। ফলে চিৎকার করে কাঁদা কিছুটা মানসিক চাপের মুক্তি দেয়।
কেন কেউ চিৎকার করে কাঁদে?
চিৎকার করে কাঁদার কারণ একাধিক। এগুলোকে সাধারণত তিনটি দিক থেকে দেখা যায় মানসিক, শারীরিক এবং পরিবেশগত।
সব চিৎকার করে কাঁদাই মানসিক সমস্যা নয়। তবে কিছু সতর্ক লক্ষণ রয়েছে, যা আমাদের মনোযোগী হওয়ার বার্তা দেয়।
স্বাভাবিক চিৎকার প্রিয়জনের সঙ্গে ঝগড়ার পর বা দুঃখজনক ঘটনার সময় মানসিক চাপ বা ক্লান্তি কমানোর জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সমস্যার লক্ষণ: প্রতিদিনের জীবনে চিৎকার করে কাঁদা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ঘুম, খাওয়া বা দৈনন্দিন কাজের ওপর প্রভাব পড়ছে চিৎকারের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না অতিরিক্ত হতাশা, অস্থিরতা বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দিচ্ছে এগুলি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে, যেমন ডিপ্রেশন, এংজাইটি ডিসঅর্ডার। চিৎকার করে কাঁদার মানসিক প্রভাব হরমোনের ভারসাম্য বজায় রেখে চিৎকার করে কাঁদা সাময়িকভাবে চাপ কমায়। ক্রোধের শক্তি শারীরিকভাবে মুক্ত হওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে যদি অতিরিক্ত চিৎকার করে কাঁদা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, এটি নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হ্রাস করতে পারে।সামাজিক সম্পর্কের প্রভাব: বাড়ি বা কর্মস্থলে নিয়মিত চিৎকার করলে পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
শোকের সময় মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় রাগ হলে নিজেকে শান্ত রাখবেন যেভাবে ভিড়ের মধ্যে অসুস্থ লাগলে আগে করুন এই কাজগুলো প্রেশার বেড়ে গেলে প্রাথমিকভাবে যা জানা দরকার চিৎকার করে কাঁদা কমানোর বা নিয়ন্ত্রণের উপায় শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: ধীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ডায়েরি বা জার্নাল লেখা: নিজের অনুভূতি লিখলে চিৎকার করে কাঁদার প্রয়োজন কমে। শারীরিক ব্যায়াম: হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমায় এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে। মানসিক পরামর্শ: থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলা মানসিক চাপ দূর করতে কার্যকর। পরিবেশের পরিবর্তন: শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থাকা, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক শান্তি দেয়। বিশেষ সতর্কবার্তাযদি চিৎকার করে কাঁদার সঙ্গে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো যুক্ত হয়, তা হলে পেশাদার সাহায্য নেওয়া জরুরি-
এই ধরনের লক্ষণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ইঙ্গিত দেয় এবং অবহেলা করা উচিত নয়।
চিৎকার করে কাঁদা স্বাভাবিক আবেগের প্রকাশ হতে পারে, তবে এটি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। নিজেকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার অনুভূতি প্রকাশ করা অপরাধ নয়, এটি আপনার স্বাস্থ্যের অংশ। তবে নিয়ন্ত্রণহীন চিৎকার মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে, যা সময়মতো সমাধান করা উচিত।
চিৎকার করে কাঁদা মানেই দুর্বলতা নয়, বরং এটি হতে পারে আপনার মন ও শরীরের প্রাকৃতিক সংকেত, যা আপনাকে জানায় যে আপনাকে নিজেকে ভালোভাবে দেখাশোনা করতে হবে।
তথ্যসূত্র: মেন্টাল হেলথ
জেএস/