লাইফস্টাইল

খালেদা জিয়ার পছন্দের শাড়ি ছিল ইতালি শিফন ও জর্জেট

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শাড়ি কখনো কেবল পোশাক নয়, কখনো তা হয়ে ওঠে ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি, সময়ের দলিল। এই জায়গাতেই আলাদা হয়ে দাঁড়ান বেগম খালেদা জিয়া। তার শাড়ি নির্বাচন ছিল সংযত, মার্জিত এবং স্পষ্ট বার্তাবাহী। বিশেষ করে ইতালি শিফন ও জর্জেট শাড়ির প্রতি তার অনুরাগ শুধু ফ্যাশনের বিষয় নয়; এটি ছিল তার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত রুচির নীরব প্রকাশ।

শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে ক্ষমতার সৌম্যতা

ক্ষমতার চূড়ায় থেকেও খালেদা জিয়া কখনো ঝলমলে পোশাক বা অতিরিক্ত অলংকারে নিজেকে মেলে ধরেননি। তার শাড়িতে ছিল পরিমিতি। ইতালি শিফন কিংবা জর্জেট; দুটোই হালকা, নরম, প্রবাহমান কাপড়। এই কাপড়ের স্বভাব যেমন আড়ম্বরহীন, তেমনি দৃঢ়। ঠিক যেমন ছিল তার রাজনৈতিক অবস্থান। কঠোর সিদ্ধান্তের ভেতরেও এক ধরনের সংযম।

জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে তাকে প্রায়ই দেখা যেত হালকা রঙের ইতালি শিফন শাড়িতে। রঙের বাছাইও ছিল শান্ত ক্রিম, হালকা নীল, ছাই কিংবা মৃদু গোলাপি। এসব রঙ যেন উচ্চস্বরে কথা বলে না, কিন্তু উপস্থিতি জানান দেয় গভীরভাবে।

ইতালি শিফন: রাজকীয় অথচ নিরাভরণ

ইতালি শিফন শাড়ির বিশেষত্ব এর মসৃণতা ও সৌন্দর্যের সূক্ষ্মতা। এই শাড়ি যেমন শরীরে ভার দেয় না, তেমনি দৃষ্টিতেও ক্লান্তি আনে না। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এই কাপড় যেন তার ব্যক্তিত্বেরই রূপান্তর নীরব, কিন্তু দৃঢ়।

রাজনৈতিক সভা কিংবা রাষ্ট্রীয় সফরে এই শাড়ি তার জন্য ছিল আরামদায়ক, আবার একই সঙ্গে মর্যাদাসম্পন্ন। এতে আলাদা করে কিছু না বলেও তিনি জানিয়ে দিতেন ক্ষমতা মানেই জাঁকজমক নয়, ক্ষমতা মানে দায়িত্ব।

জর্জেট: সহজ সৌন্দর্যের নির্ভরতা

জর্জেট শাড়ি ছিল তার আরেকটি পছন্দ। একটু বেশি টেকসই, সামান্য টেক্সচারযুক্ত এই কাপড় দৈনন্দিন আনুষ্ঠানিকতায় মানানসই। বিশেষ করে দীর্ঘ সময়ের কর্মসূচিতে জর্জেট শাড়ি ছিল বাস্তবিক পছন্দ।

এই শাড়িতে কোনো অতিরিক্ত নকশা বা ভারী পাড় থাকত না। সীমিত কাজ, পরিষ্কার কাট সব মিলিয়ে এক ধরনের নির্ভরযোগ্যতা। অনেকটা তার রাজনৈতিক জীবনের মতোই ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যেও অবিচল।

আরও পড়ুন: 

হাসপাতালে কাটানো প্রথম ঈদে যেসব খাবার পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া খালেদা জিয়াকে হারিয়ে স্তব্ধ বিএনপি নেতারা স্মৃতিতে আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া পোশাকের মধ্যেও রাজনৈতিক বার্তা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের পোশাক প্রায়ই আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। খালেদা জিয়া এই আলোচনাকে কখনো উসকে দেননি। বরং তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে পোশাকের মাধ্যমেও সংযম ও মর্যাদা বজায় রাখা যায়।

ইতালি শিফন ও জর্জেট এই দুই কাপড়ই আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, কিন্তু তিনি কখনো সেগুলোকে প্রদর্শনের বস্তু বানাননি। বরং দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে, শাড়ির ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখেই ব্যবহার করেছেন।

শাড়ির পছন্দ অনেক সময় ব্যক্তিগত বিষয় হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেই পছন্দ হয়ে উঠেছিল তার ব্যক্তিত্বের ভাষা। ইতালি শিফন ও জর্জেট শাড়ির নরম ভাঁজে ভাঁজে লেখা আছে এক শক্ত নারীর গল্প যিনি শব্দের চেয়ে নীরবতাকেই বেশি বিশ্বাস করতেন।

জেএস/